ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমানে শতাব্দীর সবচেয়ে উন্নত নগরীর একটি দুবাই। এখানে রয়েছে সুউচ্চ ভবন, দীর্ঘ বিমানবন্দর, দ্রুত গতির মেট্রোরেল পথ ইত্যাদি। এক কথায় সৌন্দর্যের নিদর্শন এবং স্বপ্নের শহর এই দুবাই। তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য ভ্রমণ স্পট। বাড়ছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী ॥ শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৮ মে ২০১৮

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী ॥ শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন। এগুলো একসময় ট্রুসিয়াল স্টেটস নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে। প্রতিটি আমিরাত একটি উপকূলীয় জনবসতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এবং ওই লোকালয়ের নামেই এর নাম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি স্টেটসের নাম হলো আবুধাবি, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরাহ, রাস আল খাইমাহ, আশ শারিকাহ এবং উম্ম আল ক্বাইওয়াইন। আবুধাবি শহর ফেডারেশনের রাজধানী এবং দুবাই দেশের বৃহত্তম শহর। প্রত্যেক আমিরাতই সার্বভৌম আমির দ্বারা শাসিত। আমিরাতের শাসনকর্তার পদবি আমির। তারা যৌথভাবে ফেডারেল সুপ্রিম কাউন্সিল গঠন করেন। আমিরদের মধ্যে একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সুপ্রিম কাউন্সিলের দ্বারা নির্বাচিত হলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদ অনেকটা উত্তরাধিকারমূলক। আবুধাবির আমির প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের আমির প্রধানমন্ত্রী হন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন খলিফা বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান এবং প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম। সংযুক্ত আরব আমিরাত মরুময় দেশ। এর উত্তরে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান ও ওমান উপসাগর। ১৯৫০-এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত মূলত ব্রিটিশ সরকারের অধীন কতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেল শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে, ফলে ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে আমিরাত ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হয়। দেশের খনিজ তেলের বেশিরভাগ আবুধাবিতে পাওয়া যায়, ফলে এটি সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী। তেল শিল্পের কারণে এখানকার অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং জীবনযাত্রার মান বিশ্বের সর্বোন্নতগুলোর একটি। আরব আমিরাতে রয়েছে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন। স্বাধীনতার পর খুব কম সময়ে আরব আমিরাত বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কেনাকাটা, দর্শনীয় স্থান, হাই এ্যান্ড রিসোর্ট, সাদা বালির সৈকত, কৃত্রিম দ্বীপ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিরাপত্তা প্রতি বছর লাখ লাখ ট্যুরিস্ট আকৃষ্ট করে। নিকট ভবিষ্যতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পর্যটন শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে সরকার। তার ফলে ইউএই বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় নাম। চলুন জেনে নেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় জানা-অজানা কিছু তথ্য। মৎস্য নগরী দুবাই বর্তমানে শতাব্দীর সবচেয়ে উন্নত নগরীর একটি দুবাই। এখানে রয়েছে সুউচ্চ ভবন, দীর্ঘ বিমানবন্দর, দ্রুত গতির মেট্রোরেল পথ ইত্যাদি। এক কথায় সৌন্দর্যের নিদর্শন এবং স্বপ্নের শহর এই দুবাই। তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য ভ্রমণ স্পট। বাড়ছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের যাতায়াত। আয়ের অন্যতম একটি খাতে পরিণত হচ্ছে পর্যটন। দুবাই এর প্রধান রাজস্ব আয় হচ্ছে পর্যটন, আবাসন শিল্প এবং অর্থনৈতিক সেবা। এক সময়ের মৎস্য নগরী দুবাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামী শহরগুলোর মধ্যে একটি। দুবাইকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণ। উষর মরুভূমি সিক্ত করে বানানো হয়েছে দুবাই শহর। বর্তমানে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস হতে রাজস্ব আসে ৬% এর ও কম। প্রতিবছর প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণ করে দুবাই। এ ছাড়া বিশ্বের নামী-দামী সব ব্যবসায়ীরা ঘাঁটি গেড়েছেন এই শহরে। দুবাই মিউজিয়াম প্রচীন দুবাই দেখতে কেমন এর জন্য যেতে হবে দুবাই ক্রিক এবং দ্য আল ফাহিদি হিস্টরিক ডিস্ট্রিক্টে। সেখানে আছে জাদুঘর আর গ্যালারি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের নাম দুবাই মিউজিয়াম (Dubai Museum)। অসাধারণ এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত আল-ফাহিদি দুর্গে যার নির্মাণকাল ১৭৮৭ সাল। এটি আরব আমিরাতের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প। মিউজিয়ামটির দেয়ালগুলো ঐতিহ্যবাহী কোরাল ব্লক দ্বারা তৈরি। উপরের তলাটি কাঠের পোল দিয়ে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর সিলিং তৈরি করা হয়েছে পাম ফ্রন্ট, প্লাস্টার এবং কাদা দিয়ে। মিউজিয়ামটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক মডেল প্রদর্শন করে যা তেলখনি পাবার আগে আমিরদের জীবনধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এই জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রাচীন কালের বিভিন্ন শৈল্পিক জিনিস রয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকটি ৩০ হাজার বছরেরও পুরনো। বুর্জ আল আরব আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর একটি বুর্জ আল আরব (Burj Al Arab)। বুর্জ আল-আরব দুবাইয়ে অবস্থিত একটি ৭ তারকা হোটেল। উচ্চতার দিক থেকে এটি বিশ্বের চতুর্থ হোটেল। সমুদ্রের তীর থেকে ২৮০ মিটার সমুদ্রের ভেতরে কৃত্রিম দ্বীপের উপর হোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। আরবের পুরনো পালতোলা জাহাজের কাঠামোর অনুকরণে বানানো হয়েছে এই ভবনটি। শেখ নাহিয়ানের পারিবারিক সম্পত্তি এই বুর্জ আল আরব যিনি আরব বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং শাসক। ডেইলি টেলিগ্রাফের বিলাসবহুল ভ্রমণ বিষয়ক ম্যাগাজিন, আলট্রা ট্রাভেলের পাঠকদের ভোটে ‘বুর্জ আল আরব’ পৃথিবীর বিলাসবহুল হোটেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। হোটেলটি ‘Best Hotel In The World’ এবং ‘Best Hotel In Middle East’ ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক দুটি পুরস্কার পেয়েছে। বুর্জ আল আরব নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘বুর্জ আল আরব’ হোটেলের ওপরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়েছে বিলাসবহুল টেনিস কোর্ট ও হেলিপ্যাড। চলবে...
×