ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুরুতেই জমজমাট চকবাজারের বাহারি ইফতারি

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ১৮ মে ২০১৮

শুরুতেই জমজমাট চকবাজারের বাহারি ইফতারি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ রমজানের প্রথম দিন। প্রথম ইফতার। রাজধানীর অলিগলিতে বাহারি ইফতারে পসরা সাজিয়েছে দোকানিরা। আর ধারাবাহিকতা ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতার। রমজানের প্রথম দিনে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বিকেলের পর পুরো রাজধানীই রূপ নিয়েছিল ইফতারির বাজারে। তবে ঢাকা শহরে ইফতারির বাজার বলতে বোঝায়- পুরান ঢাকার চকবাজারকেই। কেননা জমজমাট আয়োজনে বাহারি ইফতারির জন্য চকবাজারের বিকল্প নেই। প্রথম রোজা উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসতে শুরু করে চকবাজারে। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে ইফতারি বিক্রিও। চকবাজারের ইফতারির প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। তাই বাড়িতে ইফতারের আয়োজন থাকলেও চকবাজারের ইফতারির কদর থাকে সব সময় আলাদা। উত্তরা থেকে চকবাজারে ইফতারি কিনতে আসেন আলামিন দম্পতি। তিনি ইফতার কিনে বলেন, ‘সারা দিন রোজা রাখার পর চাই আলাদা স্বাদের ইফতারি। বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করার কথা রয়েছে, তাই চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি কিনতে এসেছি। বিকেলে চকবাজারের ইফতারি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানে নানা পদের ইফতারি সাজানো হয়েছে। ক্রেতাদের নজর কাড়তে বিক্রেতারা হাঁক দিচ্ছে। চকবাজারের ইফতারির 'বড় বাপের পোলায় খায়' এটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই বড় বাপের পোলায় খায় আইটেমটির দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে। আস্ত মুরগি, ভুনা, মুরগির মুসল্লম, ডিম, মুরগি, পাখি, খাসির রোস্ট, চিঁড়া ভাজা এসব মিলিয়ে তেলে মাংসে বানানো খাবারটি ৩৬টি উপকরণে তৈরি। খাবারটি নতুন ঢাকার কিংবা বাইরে থেকে আসা ক্রেতাদের কাছে পছন্দের। যা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। চকবাজারের শাহি জিলাপির স্বাদও অতুলনীয়। ইফতারির অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি এই জিলাপির কদর বরাবরই আলাদা। একেকটি জিলাপির ওজন প্রায় এক কেজি। তবে সকালের বৃষ্টির কারণে কাঁদা-পানির বিড়ম্বনাও ছিল ইফতারি বাজারে। বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে, পরিচিত, অপরিচিতসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা। যার মধ্যে আছে শাহী কাবাব, সুতি কাবাব, সাসলিক, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, খাসির রানের রোস্ট জালি কাবাব, টিকা কাবাব, ডিম চপ, কবুতর-কোয়েলের রোস্ট, ঐতিহ্যবাহী বড় বাপের পোলায় খায়, খাসির রান, আস্তো মুরগি ফ্রাই, মুরগি ভাজা, ডিম ভাজা, পরোটা, দইবড়া, হালিম, লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং ও মাঠা। এছাড়াও কিমা পরোটা, শাহী পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, সমুচা, বেগুনি, আলুর চপ, পিয়াজু, জিলাপিসহ বিভিন্ন মুখরোচক সব খাবার। এসব স্বাদের ইফতারির স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসীরা ছুটে আসেন চকবাজারে। পারিবারিকভাবে চকবাজারে দীর্ঘদিন ধরে ইফতারের ব্যবসা করছেন ইয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, চকবাজারে যারা ইফতারি বিক্রেতা তারা বংশগতভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তাদের এই ব্যবসা। ছাড়া খাসির রোস্ট পিস আকারে ৬০০-৪০০, মুরগির রোস্ট পিস ২৫০-৩৫০, গরুর সুতি কাবাব কেজি প্রতি ৫০০-৬০০, খাসির সুতি কাবাব কেজি ৭০০, দইবড়া কেজি ১৮০-২২০, কবুতরের রোস্ট পিস ১৫০, কয়েল প্রতি পিস ৫০-৭০ টাকা। চিকন জিলাপি কেজি ১৫০, বড় শাহী জিলাপি ২০০ টাকা। অন্যদিকে চিকেন কাটলেট ১৫০-২০০, খাসির জালি ৫০ টাকা পিস। লাবাং-মাঠার বোতল ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোয়েল পাখির রোস্ট ৮০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার ইফতারির বাজারে আলাদা স্বাদের খাবার হিসেবে আনা হয়েছে হাঁসের ভুনাও। সারা দিন রোজার পর ইফতারিতে সবাই খোঁজেন একটু ঠাণ্ডা পানীয়। তাই তো মাঠা ও শরবতের দোকানগুলোয়ও ছিল দীর্ঘ লাইন।
×