ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার চরে লিপ কর্মসূচী

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৯ মে ২০১৮

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে

যমুনার চরের মানুষের নিত্য সঙ্গী দুর্যোগ। নিরন্তর যুদ্ধ প্রকৃতির সঙ্গে। কখনও বন্যা, কখনও নদী ভাঙ্গন। কখনও অসময়ে ভাঙনের তা-ব। বন্যায় চর থেকে সরে ক্ষণিকের আশ্রয় বাঁধে। তারপর ফিরে যাওয়া। ভাঙনে ভিটা কেড়ে নিলে ভাসমান। অস্তিত্বের লড়াইয়ে এভাবেই তারা টিকে থাকে। তাদের জীবন মানের তেমন উন্নয়ন হয় না। যে চর ভাঙে না, যে চরে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে এক জনগোষ্ঠী, যারা আজও দারিদ্র্যের যন্ত্রণার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। তাদের দিকে তাকিয়েছে সরকারের একটি কর্মসূচী লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (লিপ)। যার বাংলা অর্থ : জীবনমান উন্নতকরণ প্রকল্প। বগুড়ার যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংসদ সদস্য মোঃ আবদুল মান্নান এলাকার অনেক উন্নয়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে লিপ বাস্তবায়নেও ভূমিকা রেখেছেন। লিপ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) একটি কর্মসূচী। তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্প গত বছর জুলাই মাসে শুরু হয়েছে। চলবে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। বগুড়া আর ডি-এ’র মহাপরিচালক আবদুল মতিন আশাবাদী এই সময়ের মধ্যেই এখনও যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে। তারা স্বনির্ভর হয়ে অন্যকে এগিয়ে নিতে পারবে। প্রকল্প তেমন ভাবেই সাজিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর, চালুয়াবাড়ি, কর্নিবাড়ি, বোহাইল, কাজলা, হাটশেরপুর এবং সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ও তেকানিচুকাইনগর ইউনিয়নের মানুষ অনেকটাই অবহেলিত। উন্নয়নের সুফল এইসব চরগ্রামে পৌঁছেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের কাবু করে ফেলছে। সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের চান্দিনা গ্রামের আয়েশা খাতুন বললেন ‘বান তুফানের আর ভাঙনের সঙ্গে লরিচ্চি। কিছুই করব্যার পারি ন্য। ব্যামাক উপড়ে ফেলে। যামো কুন্টি। (বন্যা ঝড় আর ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করি। পারি না তো কিছুই। সব ল-ভ- হয়ে যায়। যাই কোথায়)। এইসব মানুষদের তালিকা করে তাদের মধ্যে ৩ হাজার গরু ও ৩ হাজার ছাগল ও ভেড়া দেয়া হচ্ছে। ১৮ মাস পর্যন্ত এইসব গরু ছাগল ও ভেড়ার চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা দেবে আরডিএ। লালন-পালনকারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কৃত্রিম প্রজননের জন্য আরডিএর সিমেন ব্যাংক থেকে উন্নত সিমেন দেয়া হবে। গাভীর পেটে বাছুর এলে উৎসাহ ভাতা পাবে পালনকারীরা। গাভীর দুধ বিক্রি নিয়ে ভাবতে হবে না। আরডিএ বড় কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে দুধ বিক্রির ব্যবস্থা করে দেবে। আয়েশা খাতুন, কল্যাণী, কোহিনূরদের জীবন মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে এই গাভী। এই প্রকল্পের সঙ্গে কয়েকটি বিষয় আছে। পারিবারিক পর্যায়ে সৌরশক্তি (সোলার) নির্ভর নিরাপদ পানি সরবরাহ কর্মসূচী এলাকার মানুষকে রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা করেছে। শালুখার চরের মানুষ এখন নিরাপদ পানি পান করছে। সোলার ও ওভারহেড ট্যাংক ও পাইপলাইন বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে চর এলাকার ১ হাজার ২শ’ পরিবারের মধ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ কর্মসূচী ও ১৫ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক স্যাটেলাইট কাম্পেইন নিশ্চিত করা হচ্ছে। এইসব চরে বিভিন্ন কর্মসূচীতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ হাজার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। তাদের মধ্য থেকে ৩ হাজারেরও বেশি সুফলভোগী সদস্য আয়বর্ধক বিভিন্ন কর্মকান্ডের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে কর্মসংস্থান পথ দেখিয়ে দিতে পারবে। এভাবে চরের নারীর কর্মসংস্থান হলে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে। নারী ও পুরুষের ৩ হাজার জন কোর সদস্য নিয়ে গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সংস্থা এবং সামাজিক উন্নয়ন দল গঠন করে ন্যূনতম অর্থ জমা করে তহবিল সৃষ্টি করা হবে। এই পুঁজির মাধ্যমে প্রকল্প সদস্যরা জীবন জীবিকার উন্নয়নে ৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করে কৃষিভিত্তিক সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। অন্যরা উৎসাহিত হয়ে জীবন মান উন্নয়নের পথ খুঁজে পাবে। কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে সম্ভাবনার নতুন কিছু উদ্ভাবন করে নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে পারবে। এই বিষয়ে আরডিএর মহাপরিচালক আব্দুল মতিন জানান, বর্তমানের জীবনমান অনেক উন্নত। তারপরও কিছু পরিবার প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন রকমে টিকে আছে। তাদের জীবন থেকে দারিদ্র দূর করতেই এই কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এইসব মানুষদের আত্মকর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দুর্যোগে তাদের আর ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে না। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×