রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় এখন পৌঁছে গেছে বিদ্যুত। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে সোলার সিস্টেম। ফলে গ্রামের মেঠোপথও এখন আলোকিত হচ্ছে। গ্রামের মোড় কিংবা ছোট বাজার ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে সৌরবিদ্যুতের আলো।
একটা সময় ছিল যখন রাতে গ্রামের মেঠোপথ মানেই ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। পথ চলতে অন্ধকারে গা শিউরে উঠত। পাড়া-মহল্লা ছিল ভুতুড়ে। সন্ধ্যা লাগলেই রাস্তায় দেখা মিলত না কোন মানুষের। তবে গ্রামের সে চিত্র এখন পাল্টাতে শুরু করেছে। গ্রামের মেঠোপথ, গোরস্থান, মসজিদ, মন্দির, এখন রাতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। পৌর এলাকা কিংবা সিটি করপোরেশন নয়, গ্রামের অলিগলিতেও এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে সৌরবিদ্যুত।
ত্রান পুনর্বাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় সৌর বিদ্যুতে জ্বলছে এখন রাজশাহী অঞ্চলে গ্রামীণ সড়ক বাতি। রাজশাহী জেলা ত্রাণ পুনবাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৬ সাল থেকে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সোলার স্থাপন ও মেঠোপথে স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছর পর্যন্ত তিন বছরে রাজশাহী জেলার ৭২ ইউনিয়নের মেঠোপথে ৬ হাজার ২১০টি স্ট্রিট লাইট বসানো হয়েছে। এছাড়াও ১৪ পৌরসভায় ৭২টি ইউনিয়ন এলাকায় স্ট্রিট লাইটের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সোলার হুম সিস্টেম সার্ভিস আছে এক হাজার ৬১৬টি। জেলায় ৭ হাজার ৮১৬টি স্ট্রিট লাইট ও সোলার হোম সার্ভিস সিস্টেমের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে গ্রামীণ সড়কেও সৌর বিদ্যুত আলো দিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় সৌর বিদ্যুতের এ সড়ক বাতি বসেছে।
চলতি সপ্তাহে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মেঠোপথে স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ চলছে। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মতিন উপস্থিত ছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে, চেয়ারম্যান মতিন বলেন, তার ইউনিয়ন এলাকার যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে সেসব স্থানে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে আলো পৌঁছানো হচ্ছে। রাতের আঁধারে সৌরবিদ্যুতের আলোয় নিরাপদে মানুষ চলাচল করছে। রাস্তাগুলো আলোকিত হওয়ায় এখানে এখন রাতে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই কমে এসেছে। এখন রাত নামলেই আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাগুলো।
গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের অবস্থান একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল। সেখানে বসানো হয়েছে কয়েকটি সোলার প্যানেলে স্টিল লাইট। রাতে আলোকিত হয়েছে গ্রাম, গোরস্তান ও রাস্তা।
ওই গ্রামের লুৎফর রহমান নামের এক কলেজের প্রভাষক জানান, আমাদের গ্রাম ইউনিয়নের মধ্যে। গ্রামে বিদ্যুত থাকলেও রাস্তা বা গোরস্তানে কোন আলোর ব্যবস্থা ছিল না। গত বছর থেকে স্থানীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে গ্রামের রাস্তায় স্ট্রিট লাইট দেয়া হয়েছে। এতে গ্রামের চিত্রটা পাল্টে গেছে। এখন রাতে গ্রাম আলোময় হয়ে থাকছে। গ্রামের মানুষ রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারছে।
রাজশাহী জেলা ত্রান পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুত ও বিদ্যুত সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারাদেশে গ্রামগঞ্জে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে প্রকল্পটির যাত্রা রাজশাহীতেও শুরু হয়েছে। এ সৌর বিদ্যুতের কারণে একদিকে বিদ্যুত সাশ্রয়ী হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামে মানুষ অন্ধকার থেকে আলোকিত রাস্তায় রাতে চলাচল করতে পারছে।
এ কর্মকর্তা আরও জানান, সোলার হোম সার্ভিস সিস্টেম বলতে গ্রামের মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বসানো লাইটকে বুঝানো হয়েছে। আর স্ট্রিট লাইট হলো, গ্রামের মেঠোপথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানুষের চলাচল বেশি। যেমন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাকা রাস্তার মিডিলে ইত্যাদি। শুধু গ্রামেই নয়, সোলার বা সৌরবিদ্যুত সিটি করপোরেশন এলাকাতেও অনেক দেয়া হয়েছে।
শুধু গ্রামেই নয় শহরেও এখন বসছে সোলার সিস্টেম। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বীর মুক্তিযেদ্ধাদের বাসাবাড়িতেই সোলার বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছেন স্থানীয় এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা এখন সৌর বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন।
সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে এখন রাজশাহী মহানগরীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সুবিধা থাকায় লোডশেডিং হলেও প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রাজশাহীতে অর্ধশতের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। বিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সরকার। আগে লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় কাজ বন্ধ থাকলেও সৌর বিদ্যুতের কল্যাণে কম্পিউটার, ফ্যান ও লাইট জ্বলায় সেই দুরবস্থার মুক্তি মিলেছে। এতে উপকৃত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই। শিক্ষকরা বলেন, সৌরবিদ্যুত দেয়াতে যেকোনো কাজ আমরা কম্পিউটারে করতে পারছি। সঙ্গে সঙ্গে ফ্যানও ঘুরছে।
আগামীতে নগরীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্লাস পর্যায়ে এ সেবা পৌঁছে দেয়াও পরিকল্পনার কথা জানান রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্লাস পর্যায়ে সৌর বিদ্যুত দিতে পারি কি না সেটাও চিন্তা-ভাবনা চলছে।
-মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: