ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে হুক্কা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৯ মে ২০১৮

হারিয়ে যাচ্ছে হুক্কা

কালে কালে বদলায় সমাজ, সংস্কৃতি, হারায় ঐতিহ্য। তেমনি কালের আবর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ ‘হুক্কা’। আবহমান কাল থেকেই গ্রামবাংলার মানুষের ধূমপানের অন্যতম মাধ্যম ছিল হুক্কা। ধূমপানের জনপ্রিয় এই মাধ্যম গ্রামবাংলার বিনোদন, আতিথেয়তা, বন্ধুত্ব, সম্প্রীতির প্রতীক। সে সময় ধনী-গরিব প্রতিটি বাড়িতেই ছিল হুক্কার প্রচলন। আজ থেকে এক দুই দশক আগেও গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে নেশায় অভ্যস্ত ছিল। পুরুষের পাশাপাশি বয়স্ক নারী এবং ছেলেমেয়েরাও হুক্কার মাধ্যমে ধূমপান করত। অনেকে শখের বশেও হুক্কায় দিত আয়েশি টান। এ ছাড়া নাটক, সিনেমায় অভিনয়ে ধনীদের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে পিতলের তৈরি ‘হুক্কা’ ও গরিবদের জন্য নারিকেলের খোল দ্বারা তৈরি ‘ডাবা’ ব্যবহার করা হতো। যা মানুষের জীবনের উঁচু-নিচু পার্থক্য নির্ণয় করত। এক সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে ‘হুক্কা’ খুবই জনপ্রিয় ছিল। এখন সবই অতীত। মীরসরাই এলাকার কয়েক প্রবীণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন বৈঠকখানায় মেহমানদের জন্য প্রধান আকর্ষণ ছিল হুক্কা। যে কোন বয়সের ছেলে ও বয়স্করা হুক্কার নেশায় মাতোয়ারা ছিল। তামাক পাতাগুলোকে টুকরো টুকরো করে কেটে এতে চিটাগুড় মিশ্রিত করে তৈরি হত হুক্কার প্রধান উপাদান ‘তামুক’। তামুক মাটির তৈরি কলকি’র মধ্যে দিয়ে কয়লার ‘টিক্কা’র মাধ্যমে আগুন দিয়ে ধূমপান করা হতো। এটা একপ্রকার নেশার মতো। হুক্কায় ধূমপানের জন্য এক সময় হাটবাজারে তামাকের গুড়ি মিশ্রিত করে বিক্রি করতে দেখা যেত, বিক্রি করা হতো নারিকেলের খোল দ্বারা হাতে তৈরি হুক্কা। যা ‘ডাবা’ নামে পরিচিত ছিল। হুক্কা নিয়ে গ্রামবাংলায় একটি জনপ্রিয় লোকগান প্রচলিত ছিল। প্রাণের হুক্কারে/ তোর নাম কে রাখিলো ডাবা/ হুক্কা আমার নাতিপুতি/ হুক্কা আমার বাবা। কালের পরিক্রমায় মীরসরাই উপজেলার গ্রামে গ্রামে হুক্কায় তামাকপানের যে প্রচলন ছিল তা আর দেখা যায় না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হুক্কায় ধূমপান করা দূরে থাক চোখেই দেখেনি হুক্কা। হুক্কার জায়গা দখল করে নিয়েছে বিড়ি, সিগারেট, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। যার মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর নিকোটিন। তার পরেও এই মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়েছে যুব সমাজ। যাদের নিয়ে দেশের সব অভিভাবক মহল থাকেন সব সময় উদ্বিগ্ন। এক কালের গ্রাম বাংলার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ‘হুক্কা’ আজ বিলুপ্তির পথে। ঘরের বারান্দায় বা দেউড়ি নয় হুক্কার স্থান এখন মিউজিয়ামের শেলফে। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×