ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষিকার বুটিকসে ৫০ নারীর কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৯ মে ২০১৮

শিক্ষিকার বুটিকসে ৫০ নারীর কর্মসংস্থান

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার খনজোড় জয়সারা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক শামীমা আখতার। পিতার চাকরির সুবাদে নাটোর দয়ারামপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, বগুড়া আজিজুল হক কলেজে অনার্স এবং ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের প্রতি তার ঝোঁক। তার এই ঝোঁকের কারণে প্রথমে নিজে শিখেছেন সেলাইয়ের কাজ। পরবর্তীতে দয়ারামপুর ক্যান্টনমেন্টে সেনাকল্যাণ সংস্থায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি নওগাঁর আত্রাই উপজেলা সদরে হাতের কাজ করে বেশ খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করেছেন এই স্কুলশিক্ষক। মাত্র ১০ হাজার টাকায় শুরু করে এখন তার নিট পুঁজি কয়েক লাখ টাকা। তার এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কমপক্ষে ৫০ দরিদ্র নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রতি মাসে আয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। তার সেই শখ এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। একটি সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এখন তিনি। আত্রাই উপজেলা সদরে একটি বাড়ি ভাড়া করে সেখানে ‘ইশানস স্টুডিও ও বুটিকস কালেকশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেখানে ওয়ান পিস, কামিজ, থ্রি পিস, ওড়না, মেয়ে শিশুদের পোশাক ইত্যাদিতে মনোলোভা ডিজাইনের সেলাই করে থাকেন তিনি। সূচ সুতার অপূর্ব সমন্বয়ে সেগুলো ক্রেতাদের নিকট হয়ে উঠে আকর্ষণীয়। এ ছাড়াও সেখানে নানা ডিজাইনের কাথা স্ট্রিচ, গুজরাটি স্ট্রিচ, যশোরী স্ট্রিচ, এ্যামব্রয়ডারি এবং ডলারের কাজ করা হয়। এ ছাড়াও ঈদের সময় বিশেষভাবে ছেলেদের পাঞ্জাবি ফতোয়া তৈরি করা হয়। এগুলো তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। হাতের কাজগু রুচিশীল এবং মনোলোভা হওয়ায় এলাকার অভিজাত শ্রেণীর ক্রেতারা নিয়মিত সেখান থেকে তাদের পছন্দের পোশাক কেনেন। জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কমপক্ষে ৫০ জন দরিদ্র নারী। সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা এখানে কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। তাদের মধ্যে শাবানা খাতুন ও শিউলী জানান, তারা এখানে সেলাইয়ের কাজ করেন। প্রতিষ্ঠান থেকে যে ডিজাইন দেয়া হয়, তারা তাতে সুচ সুতা দিয়ে সেলাইয়ের কাজ করেন। এ কাজে তাঁরা মাসে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা আয় করেন। এতে তাদের সংসারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা এসেছে। ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন, এলাকার আরেক গৃহবধূ মাকসুদা সুলতানা। তিনি ওইসব পোশাকে বিভিন্ন ডিজাউন এঁকে দেন। তিনি জানান, এই কাজ করে তিনিও মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন আত্রাই থানার অফিসাস ইনচার্জ মোঃ মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, এখানে বিশেষ করে শিশু ও মেয়েদের আধুনিক ডিজাইনের রুচিসম্মত পোষাক পাওয়া যায়। তাই তিনি তার পরিবারের জন্য বিভিন্ন পোশাক ক্রয় করেন এখানে। আত্রাই উপজেলার যুব উন্নয় অফিসার মোঃ ফজলুল হক এই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। এখানকার পোশাকসহ নানা ব্যবহার্য দ্রব্যাদির সুখ্যাতির কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, এখানকার উদ্যোক্তাসহ কর্মীদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে আরও সমৃদ্ধ করা তার দফতরের সুযোগ রয়েছে। তিনি সে উদ্যোগ নেবেন এবং প্রশিক্ষণের পর প্রয়োজনীয় ঋনের ব্যবস্থাও করবেন বলে জানান। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×