ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বেড়ে উঠছে গুচ্ছ গ্রামের শিশুরা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৯ মে ২০১৮

অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বেড়ে উঠছে গুচ্ছ গ্রামের শিশুরা

অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বেড়ে উঠছে আবাসন আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রামের শিশুরা। ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৯০টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য আবাসন আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং ১৯৯০ সালে আদর্শ গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে। আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রাম দুটি করা হয় উপজেলার কালারুকা ও নোয়ারাই ইউনিয়নে। এই আদর্শ গুচ্ছগ্রাম ও আবাসন প্রকল্পে শিক্ষার আলো ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ২১৮টি পরিবারের শত শত শিশু। প্রকল্প এলাকায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় দারিদ্র্যপীড়িত অভিভাবকরা দূরের স্কুলে সন্তানদের পাঠাতে পারছেন না। ফলে দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছে তাদের জীবনযাত্রার মান। অপরদিকে সরকারী উদ্যোগে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও সকল ধরনের নাগরিক অধিকারবঞ্চিত ওইসব প্রকল্পের বাসিন্দারা। এখন তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জানা গেছে, ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের হাসনাবাদ বাজার এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৯০টি এবং আদর্শ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ৭৬টি দিরাই উপজেলার রাজননগর ইউনিয়নে ৫২টি আদর্শ গুচ্ছগ্রামে মোট ২১৮টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করে সরকার। ১৯৯০ সালের ২০ অক্টোবর ছাতক উপজেলার আদর্শ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সূচনা করে তৎকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় দিরাই উপজেলার রাজননগর আদর্শ গুচ্ছগ্রাম করেন তৎকালীন এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। পরে দীর্ঘদিন এই প্রকল্প বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে ২০০২ সালের ১৮ নবেম্বর সেনাবাহিনীর ছয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় আবাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প। ছাতক উপজেলা প্রশাসন আবাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প বুঝে নিয়ে ৯০টি ভূমিহীন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে। সরেজমিন ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আবদুল গণির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২৯ বছর আগে তাদেরকে থাকার জন্য এই জায়গাটুকু দেয়া হয়েছে। স্থান দেওয়ার পর থেকে আর কোনদিনও সরকারী সহায়তা দেয়া হয়নি। বসবাসরত ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বললেন, গত ২০-২২ বছরে প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ পাওয়া তাদের ঘরগুলোর বেড়া অনেক স্থান ভেঙ্গে গেছে। ঘরের চালা ফুটা হয়ে ছোট বড় ছিদ্র হয়ে পড়েছে। যার ফলে বৃষ্টির পানি আর শীতের শিশির বাইরে পড়ার আগেই তাদের ঘরের ভেতর পড়ে। এতে করে শিশু আর বৃদ্ধসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের চরম দুর্ভোগ সইতে হয়। এই গ্রামের অন্য বসিন্দারা জানালেন, শিশুদের লেখাপড়া করার জন্য বিদ্যালয় ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য রাস্তার আবেদন করা হলেও কোন কাজ হয়নি। এইসব দুর্ভোগের কথা স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনে বহুবার জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। তারা আরও বললেন, হাসনাবাদ আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী শিশুদের শিক্ষার জন্য কোন সরকারী, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। গত কয়েক বছর আগে আনন্দ স্কুল দেয়া হলেও সেটি বন্ধ হয়ে যায়। একই গ্রামের হাসিনা বানু জানালেন, পানি সরবরাহের জন্য ৪টি টিউবওয়েলে বসানো হয়েছিল যার সব ক’টি এখন বিকল হয়ে আছে। যার ফলে সুপেয় পানির জন্য পুকুর ও নদী-নালার পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীরা। শিশুদের নানা ধরনের রোগ-বালাই লেগেই থাকে। এই গ্রামের মাঝপাড়ার চাঁনবান বিবি বললেন, আমাদের ৭০টি পরিবারের জন্য ৭টি টয়লেট দেওয়া হলেও সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় টয়লেটের ময়লা-আবর্জনা উপচে পড়ে আঙ্গিনায়। আর একটু বৃষ্টি হলেই সেই নোংরা পানি ঘরের ভেতর ঢুকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যপারে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উল্লাহ খান জানান, গত ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান স্যার হাসনাবাদ এলাকার আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। -এমরানুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে
×