ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দিনাজপুরে আদিবাসী নারীদের জীবন মান উন্নয়নে তাঁত শিল্প প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০১:২৩, ২০ মে ২০১৮

দিনাজপুরে আদিবাসী নারীদের জীবন মান উন্নয়নে তাঁত শিল্প প্রশিক্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলার পল্লীতে উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগে তাতশিল্প স্থাপন পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের কাপড় বুনন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাবলম্বী করতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোমিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ১০টি উদ্যোগের মধ্যে গ্রামীণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের কুঠির শিল্প প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বী করার কাজকে এগিয়ে নিতে তাতশিল্প প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারী ও পুরুষেরা শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেরা কাপড় বুননে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে স্বাবলম্বী হতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় এখন আর নয় সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কুষ্টিয়া থেকে কাপড় ক্রয় করে এখানে বিক্রি নয় এখানে প্রস্তুতকৃত কাপড় এই উপজেলাতে বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঘোড়াঘাট উপজেলা আদিবাসী সমিতির সভাপতি ইন্দু মার্ডি জানান, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটেই প্রতিষ্ঠিত তাঁত শিল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে উপজেলার পিছিয়ে পড়া আদিবাসী নারীরা। আদিবাসী নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঘোড়াঘাট উপজেলার পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও তাদের জীবন পরিবর্তন ও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মাঠে ঘাটে কাজ ছাড়াও তারা এখন তাঁত শিল্প প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। ইতিমধ্যে তারা চরকার মাধ্যমে মাক্কুতে সুতা তোলার কাজ শিখে কাজও শুরু করেছে। ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের আবিরেরপাড়া গ্রামে গত ১৯৯৬-৯৭ অর্থ আওয়ামীলীগ সরকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃষ্টি কালচার ধরে রাখার জন্য আদিবাসী সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত করেন। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে একই স্থানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয় সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষক অনিমার তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে আদিবাসী নারী সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেরা ও বিভিন্ন দর্জির দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আবারও আদিবাসীদের জীবন মান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে এখানে আদিবাসী ছেলে মেয়েদের জন্য বিনামূলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কম্পিউটার প্রশিক্ষক গৌতমের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ৪টি ব্যাচে অধিক ছেলেমেয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। প্রশিক্ষক গৌতম রায় জানান, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে আদিবাসী উন্নয়নে বিশেষ এলাকার জন্য যা উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় এখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারখানা। ইতিমধ্যে প্রাথমিক ভাবে আদিবাসী ছেলে মেয়েদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রস্তুত করা হচেছ উন্নত মানের লুঙ্গী। সিরাজগঞ্জ থেকে আনা হয়েছে দক্ষ কারিগর। তাদের মাধ্যমেই হাতে হাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এ উপজেলার আদিবাসীদের। উপজেলা নির্বাহী অফিসার টি,এম,এ মমিনের নিরলস প্রচেষ্টায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সহ তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আদিবাসী ছেলে মেয়েরা এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে আদিবাসী সভাপতি ইন্দুমোহন জানান। প্রকল্পগুলোর সেন্টার ইনচার্জ সোহানুজ্জামান সোহান জানান, অত্যাধুনিক ২০টি তাঁত মেশিন এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি তাঁত চালু করা হয়েছে। বাঁকীগুলো দ্রুত চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাহী অফিসার টি,এম,এ মমিন জানান, প্রতিটি তাঁত মেশিন চালু হলে ঘোড়াঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় এখানকার তৈরী লুঙ্গি, শাড়ী সহ অন্যান্য কাপড় চোপরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। ন্যায্য মূল্য এখানকার তৈরী শাড়ী লুঙ্গি ক্রয় করতে আসবে।
×