ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেলের পাহাড় থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২১ মে ২০১৮

চট্টগ্রামে রেলের পাহাড়  থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আকবরশাহ এলাকায় রেলের পাহাড় থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ও পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জোবায়ের আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম এ অভিযানে অংশ নেয়। এর আগে শনিবার বিকেলে পাহাড় থেকে সরে আসার জন্য মাইকিং করা হয়েছিল। এরপরও পাহাড় থেকে সরে না আসায় রবিবার ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের দল পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করে রেলের প্রায় ২ একর জায়গা খালি করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জোবায়ের আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরিয়ে নিতে অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে রবিবার আকবরশাহ এলাকায় রেলের প্রায় সাড়ে ১০ একর জায়গায় অবৈধভাবে গেড়ে বসা দখলদারদের মধ্যে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা ও পাহাড়ের চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থাকা শতাধিক পরিবারকে সরাতে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে শুধু আকবরশাহ এলাকায় নয়, পূর্বাঞ্চলীয় রেলের বেশিরভাগ ভূমি ও আবাসিক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা রেলের জায়গায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিন্ডিকেট করেই অসাধু রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধভাবে বস্তি নির্মাণ করে পাহাড়ের পাদদেশ এমনকি আবাসিক এলাকায়ও অবাধে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে মাসিক অর্থ বাণিজ্যও চালাচ্ছে। পিডিবি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের অসাধু কর্মচারীরা মাসোয়ারা নিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, আকবরশাহ পাহাড় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে প্রায় দেড়শ পরিবার। বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজনের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাত এ বিশাল এলাকায় একদিকে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছে, অপরদিকে বিভিন্ন উপযোগ প্রদানকারী সংস্থার অসাধুরা মাসোয়ারা নিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শতাধিক পরিবারকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে আকবরশাহ এলাকায়। এদিকে, সিআরবি এলাকা থেকে ইস্পাহানি রেলগেট পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনার পরিমাণ লক্ষাধিক। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে খেলার মাঠ এমনকি রেল লাইনের দু’ধারেও বস্তি গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও সংগঠন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জড়িত রয়েছে। শুধু তাই নয়, রেলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও কোয়ার্টার সংলগ্ন খালি জায়গায় এক সময় নিজেদের ব্যবহারের রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গৃহ নির্মাণ করলেও বর্তমানে ভাড়া বাণিজ্যের উদ্দেশেই ঘর তোলার হিড়িক পড়ছে। এমনকি খালি জায়গা মোটা অর্থের বিনিময়ে দখল হস্তান্তরের ঘটনাও ঘটছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এসব সিন্ডিকেট ফায়দা লুটতে মরিয়া। এ ব্যাপারে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, রেলের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে সচেষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেলের জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ সকল স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×