ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকা গুটি আমে সয়লাব বাজার

আমের রাজ্য রাজশাহীর বাজারে মিলছে গোপালভোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২১ মে ২০১৮

 আমের রাজ্য রাজশাহীর বাজারে মিলছে গোপালভোগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ের পর অবশেষে পাকা আম এখন রাজশাহীর বাজারে। রবিবার থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে গুটিজাতের আম। এরমধ্যে অন্যতম গোপালভোগের দেখাও মিলেছে রাজশাহীর বাজারে। গাছের গোপাল যেন হাসছে এখন বাজারে। রবিবার রাজশাহীর আমের অন্যতম মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে শুরু হয়েছে আমের কারবার। দেদার কেনাবেচাও হয়েছে এদিন। তুলনামূলকভাবে এবারও মৌসুমের শুরুতে আমের দর স্বাভাববিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বানেশ্বর বাজারে গোপালভোগ প্রতিমণ ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে শুরুর দিনে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের আঁটি আম বিক্রি হয়েছে ৮শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা দরে। রবিবার জেলার বড় আমের মোকাম বানেশ্বরে গিয়ে দেখা গেছে সর্বত্র আমের কারবার। ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক। বাইরের পাইকাররাও এসেছেন এ হাটে। সবাই ব্যস্ত আমের কারবারে। সকাল থেকে জেলার চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসব আম তুলেছেন বাগান মালিক ও চাষীরা। তারা বলছেন, আর ক’দিন পর পুরো দমে বাজারে আম চলে আসবে। চাহিদাও বাড়বে। তখন দামও বৃদ্ধি পাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে ৬ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। কৃষি বিভাগ বলছে গোপালভোগ জাতের আম নামানো শুরু হলেও হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লক্ষণভোগ আম নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ জুন। অর্থাৎ ১০ দিন পরেই মোটামুটি আম উঠে যাবে বাজারে। আর ল্যাংড়া নামানো যাবে জুনের ৬ তারিখের পর থেকে। এদিকে রাজশাহী অঞ্চলে গাছ থেকে আম নামানো শুরু হওয়ায় চাষী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর বাঘা উপজলার মণিগ্রাম এলাকার আমচাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, তার ৪৫ বিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালভোগ জাতের আম রয়েছে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে। কয়েকদিন আগে থেকেই গাছেই গোপালভোগ আম পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশাসনের সময় বেঁধে দেয়ার কারণে গাছ থেকে আম নামানো শুরু করিনি। রবিবার গাছ থেকে আমপাড়া শুরু হয়েছে তার। বাজারেও তুলেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর। আর বাগানে রয়েছে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আম গাছ। কোন দুর্যোগ না হলে এবার ৬ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, চলতি মৌসুমে তেমন ঝড় না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রচুর আম রয়েছে। বৈশাখ মাসও শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে আর ঝড়ের সে রকম কোন সম্ভাবনা নেই। এ কারণে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হবে। রাজশাহীর বাঘা থেকে এবারও বিপুল পরিমাণ আম রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাঘার আম এবারও ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স ও রাশিয়াতে পাঠানো হবে। গত দু-বছর হলো শুরু হয়েছে এই আম পাঠানো কার্যক্রম। হটেক্স ফাউন্ডেশন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমে এই আম রফতানির কাজ শুরু করা হয়েছে। রাজশাহীর আমের খ্যাতি সারাদেশে রয়েছে। এ অঞ্চলের আমের মধ্যে ফজলি, খিরসাপাত, গোপালভোগ ও ল্যাংড়ার নাম শোনা যায় সবার মুখে মুখে। প্রতিবছর আম মৌসুমে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের বাড়তি কর্মসংস্থান হয় আম কেন্দ্রিক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, গত বছর আম রফতানির জন্য উপজেলায় ৫০ বাগান মালিককে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে সনদপত্র প্রদান করা হয়েছে। এর আগের বছর কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ১৪ জন লিড ফার্মারের বাগানে উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত প্রতিটি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের আম ঢাকা বিএসটিআই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম বাগান পরিদর্শন করে বাঘা উপজেলার আম রফতানি যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করেন। এরপর থেকে আম রফতানি শুরু করা হয়। যা এবারও চলমান থাকবে। আর ১৫ দিন পর প্রথমে গোপালভোগ, এরপর পর্যায়ক্রমে হিমসাগরসহ ল্যাংড়া ও অন্যান্য ভাল জাতের আম রফতানি করা হবে বলে তিনি জানান।
×