ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে ৬ নেতার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রশ্নে পিছু হটছে আ’লীগ

প্রকাশিত: ০১:২৬, ২১ মে ২০১৮

শেরপুরে ৬ নেতার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রশ্নে পিছু হটছে আ’লীগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও স্থানীয় সাংসদ প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁনসহ দলের ৬ নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে পিছু হটছে জেলা আওয়ামী লীগ এমন সরব গুঞ্জন এখন রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখে। বিষয়টি ‘টক অব দি টাউন’ হিসেবেও আলোচিত হচ্ছে। সোমবার দুপুরে শহরের চকবাজারস্থ অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে পূর্বের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির সংশোধনীর আদলে বিষয়টি ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নয়, ওই ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তাব বা সুপারিশ’ বলে উল্লেখ করায় ওই গুঞ্জনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সেইসাথে ওই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর থাকা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ ধারণ করায় তা নিরসনে হঠাৎ করেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তাদের রোষানলের শিকার এক সংসদ সদস্যসহ ৫ নেতাকে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিস্থ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তলব করায় সেই গুঞ্জনে আরও ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও তাতে উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহ-সভাপতি খন্দকার নজরুল ইসলাম। শনিবার রাতে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যদিও মতিয়া চৌধুরীকে প্রত্যাহার ও সাংসদ চাঁনসহ ৫ নেতাকে সরাসরি বহিস্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হলেও সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মতিয়া চৌধুরীসহ ৬ নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মূলতঃ সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদে প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর জেলা থেকে প্রত্যাহারের জন্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, তিনি শেরপুরে থাকলে শেরপুরের উন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষতি সাধিত হবে। তিনি শেরপুর জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হলেও জেলা সদরে আসেন না। শেরপুরের কোন উন্নয়ন কাজ করেন না। কিছু প্রতিষ্ঠান শেরপুরে হওয়ার কথা থাকলেও সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি নকলা-নালিতাবাড়ীতে নিয়ে গেছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও একটি সভাতেও তিনি উপস্থিত হননি। এছাড়া তিনি বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর মনোনিত প্রার্থীকে সহযোগিতা না করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সহযোগিতা করেছেন। তাই আমরা জেলা আওয়ামী লীগের সার্বিক কর্মকান্ড প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য তার সাক্ষাতের সময় চেয়ে আবেদন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দলের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁনসহ ৫ নেতাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত প্রস্তাবসহ আরও যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা দলের সাধারণ সম্পাদকের চিঠির নির্দেশনার আলোকেই হয়েছে। অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তকে ঘিরে আওয়ামী নামধারীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কোন অবস্থায় মেনে নেওয়া হবে না। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিষদ সদস্য মোঃ খোরশেদুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট মজদুল হক মিনু ও ফখরুল মজিদ খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দে ভানু, সাংগঠনিক সম্পাদক বশিরুল ইসলাম শেলু ও আনোয়ারুল হাসান উৎপল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আবুল কাশেম জিপি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে জেলা আওয়ামী লীগের ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কেন্দ্র করে শেরপুরে দলীয় বিভেদ এখন প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। যেকোন মুহূর্তে তা সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে তলব পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাংগঠনিক শাস্তি পাওয়া ৫ নেতার। দলের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিষয়টি নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। তার পরামর্শে দলের যুগ্ম সাধারণ ডাঃ দীপুমনি এমপি মঙ্গলবার দুপুর ২টায় রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিস্থ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাদের তলব করেছেন। সেখানে ‘প্রত্যাহার ও বহিস্কার’ এর বৈধতা বিষয়ক আলোচনাসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের মতামত উপেক্ষা করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের একপেশে কমিটির বিরুদ্ধে করা রিভিউ দরখাস্তের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। সেইসাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভেতর থাকা কোন্দল-দ্বন্দ্বসহ সকল ভেদাভেদ নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও সম্ভাবনা রয়েছে ওই সভায়। কেন্দ্রে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাস্তি পাওয়া নেতা সাংসদ ফজলুল হক চাঁন, শামছুন্নাহার কামাল, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ ও ফজলুল হক। আর ওই অবস্থায় নির্বাহী পরিষদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে সহসাই পিছু হটছে, হটবে জেলা আওয়ামী লীগএমনটাই ভাবছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
×