ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইরান চুক্তির বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৩ মে ২০১৮

ইরান চুক্তির বিকল্প নেই

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ইরান পরমাণু চুক্তির কোন বিকল্প নেই। ব্রাসেলসে ইইউর প্রধান কার্যালয়ে ইইউ-তিউনিসিয়া এ্যাসোসিয়েশন কাউন্সিলের বৈঠক শেষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের ওপর ‘ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন’ নিষেধাজ্ঞা আরোপে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র হুমকি পর তিনি এ কথা বলেন।- খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরার। জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব একশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ইরান পরমাণু চুক্তির বিষয়ে মোগেরিনি বলেন, পম্পেও’র বক্তব্যে এটি স্পষ্ট নয় যে, জেসিপিওএ থেকে বের হয়ে আসলে ওই এলাকায় পরমাণু হুমকি থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে অথবা জেসিপিওএ থেকে রেব হয়ে গেলে পরমাণু কার্যক্রম বন্ধে ইরানকে কীভাবে প্রভাবিত করা যাবে। তিনি বলেন, জেসিপিওএ’র কোন বিকল্প হতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে মোগেরিনি ওবামা আমলে করা ইরান চুক্তি থেকে সরে না আসতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জেসিপিওএ অন্তত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনার ফল। চুক্তিটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্ততায় সম্পাদিত হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষজ্ঞরাই গত দুই বছর আগে করা এই চুক্তিটিকে রক্ষা করতে চাচ্ছেন। এর আগে ইরান তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্খা পরিত্যাগ করা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করা এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা বন্ধ করাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সব দাবি মেনে না নিলে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে বলে সোমবার জানিয়েছেন পম্পেও। এ দিকে পম্পেও’র নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়ার পর এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, তার দেশসহ বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ মে ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এসে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ঘোষণা দেয়ার পর পম্পেও এ কড়া কথা শোনালেন। এর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে গুরুতর সংঘর্ষের পট প্রস্তুত হলো বলেই মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর পম্পেও তার প্রথম বৈদেশিক নীতি বিষয়ক ভাষণে ইরানকে ওই হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের শাসকরা দেশের জনগণ এবং নিজেদের জন্য যে অগ্রহণযোগ্য এবং নিষ্ফল পথ বেছে নিয়েছে তা থেকে সরে না আসলে গাদা গাদা নিষেধাজ্ঞা কেবল তাদের জন্য আরও যন্ত্রণাদায়কই হবে।’ পম্পেও বলেন, এ নিষেধাজ্ঞাগুলো হবে ইতিহাসে আমাদের আরোপ করা এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর হলে ইরানকে তাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের নীতিরও সমালোচনা করেছেন পম্পেও। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে ইরানি তৎপরতার মূলোৎপাটন করবে এবং দোসরদের নির্মূল করবে। সিরিয়া থেকে ইরানকে তাদের বাহিনীও সরিয়ে আনার কথা বলেন পম্পেও। কিন্তু ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কোন দাবির কাছে মাথা নত করার সম্ভাবনা তেমন নেই। পম্পেও বলেছেন, ইরানের যে কোন আক্রমণ প্রতিহত করতেও তিনি পেন্টাগন এবং আরব মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রথম ভাষণে পম্পেও ইরানকে আটকাতে ‘প্ল্যান বি’ ঘোষণা করেছেন। সেখানে তেহরানের সঙ্গে ‘নতুন চুক্তি’ করতে ওয়াশিংটন থেকে ১২টি দাবি পূরণের কথা বলা হয়েছে। ওই দাবির মধ্যে সিরিয়া থেকে ইরানের সব সেনা প্রত্যাহার এবং ইয়েমেনে সরকার বিরোধীদের সমর্থন দেয়া বন্ধ করতে বলা হয়। পম্পেও বলেন, যখন ওয়াশিংটনের মনে হবে ইরান তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে কেবল তখনই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা ইরানের ওপর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করব। বিষয়টি আমরা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি সেটি নিয়ে তেহরানের নেতাদের কোন ধরনের সন্দেহ থাকা উচিত না। ইরান ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যকে চাপে রাখার মতো স্বেচ্ছাচারী আর কখনই হতে পারবে না। ইসরাইল পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেও জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে এবং চুক্তির অন্য দুই দেশ রাশিয়া ও চীনকে নিয়ে চুক্তি বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ২০১৫ সালে ইরান পরমাণু চুক্তির পর ইউরোপের অনেক ফার্ম দেশটিতে বিনিয়োগ করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করায় তাদের ইরানে করা বিনিয়োগ বাঁচানো বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য এ দুটির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
×