শ.আ.ম হায়দার, পার্বতীপুর থেকে ॥ বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকরা ১৩ দফা দাবিতে গত ১৩ মে থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখে আন্দোলনে রয়েছে। খনি পাশর্^বর্তী ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামবাসীর পক্ষে আরেকটি পক্ষ ৬ দফার দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। আন্দোলনের নবম দিনে যৌথভাবে তারা খনি অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। এ আন্দোলন এখন চলমান। এরই মধ্যে সংঘর্ষ, হামলায় উভয় পক্ষের তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
কথা উঠেছে খনি শ্রমিকদের ১৩ দফার সঙ্গে ২০ গ্রামবাসীর ৬ দফা কেন যুক্ত হয়েছে? নিজ নিজ ব্যানারে তারাতো পৃথক আন্দোলন করতে পারত? খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১৭ মে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলেছেন খনিকে অচল করতে কৌশলে ২০ গ্রামের প্রতিনিধি সেজে শ্রমিক নেতাদের মগজ ধোলাই করে তারই মতাদর্শের লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে এই লাভজনক খনিকে অকার্যকর করতে শ্রমিকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বিএনপি নেতার গ্রামের বাড়ি খনি সংলগ্ন পাতরাপাড়ায় হলেও বর্তমানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ফুলবাড়ীতে। সেখানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই আছে। তিনি ফুলবাড়ী কয়লা খনি বিরোধী একজন সক্রিয় নেতা। কয়লা খনির শ্রমিকদের আন্দোলনে মদদ জোগাতে ফুলবাড়ী আন্দোলনের অনেক হোমরা চোমরা নেতাদের বড়পুকুরিয়ায় দেখা যাচ্ছে। ফুলবাড়ী কয়লা খনি তারা যেভাবে হতে দেয়নি। অনুরূপ বড়পুকুরিয়ার মতো লাভজনক খনি বন্ধ করে সরকারের অর্জন, সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করাই এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য বলে স্থানীয় বিবেকসম্পন্ন মানুষ প্রকাশ্যেই বলাবলি করছেন।
ইতোপূর্বে খনি সংলগ্ন গ্রামবাসী মাইনিংয়ের কারণে তাদের ঘরবাড়িতে ফাটল ধরেছে এই ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলে। খনির কাজে বাধা দেয়। ফলে প্রায় দেড়মাস খনি বন্ধ থাকে। বিষয়টি খনির পরিচালনা পর্যদে উত্থাপন করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাটল মেরামত সংস্কারের জন্য বড়পুকুরিয়া সিএসআর ফান্ড থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের প্রায় আটটি টাকা অনুদান হিসেবে দেয়া হয়। তাদের দেখে অনুদান পাওয়ার আশায় ২০ গ্রামবাসী আন্দোলনে নেমেছে। যার কোন যুক্তি বা ভিত্তি নেই বলে জানান খনি কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায় পাশর্^বর্তী গ্রামবাসী ক্ষতিপূরণ নেয়ার পরও খনির হুকুম দখলকৃত ভূমিতে বসবাস করছে। সূত্র অনুযায়ী যাতে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা পায় সে ব্যাপারে এলাকার সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান সরেজমিনে নেমে তালিকা প্রণয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। তার কারণেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হয়নি। তখনও বিরোধী পক্ষরা মন্ত্রীর বিরোধিতা করেছিল। হরতাল, অবরোধ ডেকে খনিকে অচল করেছিল। সৃষ্টি করেছিল অশান্ত অবস্থার। কয়লা খনি কেপিআই প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে প্রশাসন ও আাইন প্রয়োগকারী সংস্থার সৃষ্টি হয়েছিল নাভিশ^াস অবস্থার। কয়েক বছর পর উৎপাদনের ক্ষেত্রে খনি যখন স্বাভাবিক লাভজনক অবস্থায় তখন খনি বিরোধী পক্ষরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ছক নিয়ে নেমেছে তা পরিষ্কার অনুমান করা যাচ্ছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের কতিপয় উর্ধতন কর্মকর্তা। সূত্রমতে এর আগেও মজুরি বৃদ্ধিসহ অনান্য সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও অবরোধ করেছিল। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে শ্রমিকদের মজুরি সম্মানজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলমান এমপিএম এন্ডপি চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় বাংলাদেশী শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, প্রডাকশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ফোরম্যান ৩২,০৭০ টাকা, দক্ষ শ্রমিক ২৭,০২০ টাকা, অদক্ষ শ্রমিক ২৫,২৯৫ টাকা। আন্ডারগ্রাউন্ড সার্ভিসেস ফোরম্যান ২৮,৭৭০ টাকা, দক্ষ শ্রমিক ২৪,৩২০ টাকা, অদক্ষ শ্রমিক ১৭,০৪৫ টাকা, প্রশাসন ফোরম্যান ২১,০৭০ টাকা, দক্ষ শ্রমিক ১৮,০২০ টাকা, অদক্ষ শ্রমিক ১৭,০৪৫ টাকা বেতন পাচ্ছেন। চাইনিজ ঠিকাদারের চুক্তির আওতায় মূল মজুরি ছাড়াও মাইনিং এলাউন্স, আন্ডারগ্রাউন্ড এলাউন্স, প্রডাকটিভিটি বেনাস, উৎসব বোনাস, এনভায়রনমেন্টাল এলাউন্স সবই পাচ্ছেন।