ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে : রিজভী

প্রকাশিত: ০১:২৫, ২৩ মে ২০১৮

খালেদার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে :  রিজভী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ‘জরাজীর্ণ ভবনের স্যাঁত-স্যাঁতে পরিবেশে’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ‘দুঃসহ জীবন-যাপনে বাধ্য করতেই’ সরকার তাকে সুচিকিৎসা ‘দিচ্ছে না। বুধবার ঢাকায় বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর এমন মন্তব্য আসে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার কয়েকজন নিকট আত্মীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তাদের কাছ থেকে তারা দলের চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে পেরেছেন। ম্যাডামের ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, বাঁ হাতটা অবিরাম ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে উঠেছে, দুই পা ক্রমাগত ব্যথা হচ্ছে। সেগুলা ভারী ও ফুলে উঠেছে। দুই চোখ সারাক্ষণ জ্বালা-পোড়া করছে। এর সঙ্গে বহু প্রাচীন দেওয়ালগুলো থেকে ঝরে পড়া সিমেন্ট ও বালি চোখ দুটোর অবস্থা আরও গুরুতর অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যথায় চোখ দুটো সবসময় লাল হয়ে থাকে। রিজভী বলেন, “স্যাঁত-স্যাঁতে জরাজীর্ণ ভবনে অবাসযোগ্য ও নানা অসুখ-বিসুখের আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে কারাগারে দেশনেত্রীর কক্ষটি। অসংখ্য পোকামাকড়ে আকীর্ণ কক্ষটিতে বাস করা যেন নরকবাস। এসব পোকামাকড় তার শরীরে নানাভাবে দংশন করছে, এতে তিনি আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কক্ষটি ভেজা-ভেজা ও অস্বাস্থ্যকর ধুলাকীর্ণ থাকার কারণে তার প্রচণ্ড কাশি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। রিজভী অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত তাদের নেত্রীকে অর্থপেডিক বেড দেওয়া হয়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষার বিষয়টিও ‘অগ্রাহ্য’ করছে কারা কর্তৃপক্ষ। সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ড এসব পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তা কানে তুলছে না, কারণ কর্তৃপক্ষের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সরকারি হুঙ্কার। অর্থাৎ- তুমি এর বাইরে যাবে না, যা দেয়া আছে কিছু করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে কারাগারে ‘ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে’ অভিযোগ করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সরকার প্রধানের প্রতিহিংসা ও ক্রোধ’ চরিতার্থ করতে কারা কর্তৃপক্ষ এটা করছে। তাকে দুঃসহ জীবন-যাপনে বাধ্য করে তিলে তিলে বিপন্ন করে তোলাই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। সেটাই তারা বাস্তবায়িত করছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযান নিয়েও কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, “দেশব্যাপী মাদক নির্মূল অভিযানে মানুষহত্যার এক বিকারগ্রস্থ পন্থা চারিদিকে দৃশ্যমান হচ্ছে। গত ৯ দিনে গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৩ জন। নিহত ব্যক্তিদের মাদক ব্যবসায়ী বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। কিন্তু প্রকৃত মাদক ডিলাররা অন্তরালে থেকে যাচ্ছে কীভাবে? প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বাড়িতে তারা দেখা-সাক্ষাৎ করছে, যা গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। রিজভী বলেন, সন্দেহভাজনদের হত্যা করা হচ্ছে কোন উদ্দেশ্যে? যতবড় অপরাধী হোক, বিচারবহির্ভূত হত্যার সুযোগ নেই। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বেছে বেছে ‘সরকারবিরোধী নির্দোষ তরুণদের অপরাধী সাজিয়ে’ হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা। এর দৃষ্টান্ত আমি গতকাল তুলে ধরেছিলাম নেত্রকোণার ছাত্রদল নেতা আমজাদ হোসেনকে হত্যার ঘটনায়। এই বিচারবহির্ভূত হত্যার যাত্রাপথে ক্রমাগতভাবে সরকারবিরোধী লোকজনদের নির্মূলে ব্যস্ত থাকার আশঙ্কা করছে অনেকেই। মাদকের পশ্চাদভূমি বন্ধ না করে, গডফাদারদের না ধরে শুধু ক্রসফায়ারের হিড়িক অব্যাহত রাখলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। মাদক আসছে ভারত থেকে- এমন তথ্য দিয়ে রিজভী বলেন, উৎসমুখ বন্ধ হচ্ছে না কেন? সারাদেশে মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে এই ক্ষমতাসীনদের আমলে, ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতায়। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকার দেশকে একটা রক্তাক্ত নির্বাচনের দিকে নিয়ে যায় কিনা- সেটিও মানুষ ভাবছে। অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×