ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বনদস্যু মুক্ত ঘোষণা হবে সুন্দরবন : কামাল

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ২৩ মে ২০১৮

 বনদস্যু মুক্ত ঘোষণা হবে সুন্দরবন : কামাল

অনলাইন রিপোর্টার ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, অচিরেই সুন্দরবনকে বনদস্যু-জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করা হবে। বুধবার দুপুরে খুলনাস্থ র্যাব-৬’র কার্যালয়ে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং সাবেক জলদস্যুদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমন করেছি, সেভাবেই সুন্দরবন থেকে বনদস্যু-জলদস্যুদেরও দমন করা হবে। যারা এদের সহযোগিতা করেছেন, তাদেরও আইনের মুখোমুখি করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’’ তিনি বলেন, অপার সম্ভাবনাময় সুন্দরবন। কী নেই এই বনে? সৌন্দর্য্যের এই লীলাভূমিতে বনদস্যু-জলদস্যুরা অবস্থান নিয়েছিল। র্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছয়টি বনদস্যু বাহিনী ভুল বুঝতে পেরে আজ আত্মসমর্পণ করেছে। দেশে উন্নত আইনশৃংখলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে চার লাখ বিদেশি চাকরি করছেন। এটা এই কথাই প্রমাণ করে যে দেশ উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। সেই কারণে বিদেশিরা এদেশে আসছে। আবার এই দেশের বহু লোকও বিদেশে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘খাদ্য ভেজালমুক্ত করতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ইতিপূর্বে যেভাবে অভিযান চালিয়েছে, মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান চালানো হবে। র্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তালিকা দিয়েছে। কারা মাদক ব্যবসা করে, কারা এর সঙ্গে জড়িত আর কারা এগুলো বহন করে তা এই তালিকায় আছে। সেই তালিকা অনুযায়ী বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা করছি।’’ ক্রসফায়ার সম্পর্কে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘পুলিশ কাউকে ক্রসফায়ার দেয় না। যারা শুধু চ্যালেঞ্জ করে তারাই ক্রসফায়ারের শিকার হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আগে গুলি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হয়। জীবন রক্ষার্থে তারা গুলি চালায়। এতে শুধু সন্ত্রাসী, বনদস্যু, মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হচ্ছে না, তাদের গুলিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও আহত হচ্ছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমরা ২০২১-২০৪১ সালের উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে সেই স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হতে দেব না। আর কোনো ‘ঐশী’ তৈরি হতে দেব না। আমাদের মেধা তৈরি করতেই হবে। তা নাহলে উন্নত রাষ্ট্র তৈরি করতে পারব না।’’ তিনি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং সাবেক জলদস্যুদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র্যাব-৬’র পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ছয় বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ সুন্দরবনের ছয়টি বনদস্যু বাহিনীর ৫৭জন সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৮টি অস্ত্র এবং ১২৮৪ রাউন্ড গুলি হস্তান্তর করে আত্মসমর্পণ করেছেন। এই বাহিনীগুলো হলো- দাদা ভাই বাহিনী, হান্নান বাহিনী, আমির আলী বাহিনী, সূর্য্য বাহিনী, ছোট শামসু বাহিনী ও মুন্না বাহিনী। এর মধ্যে দাদা ভাই বাহিনীর প্রধান মো. জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন ওরফে দাদা ভাই (৩৮) তার বাহিনীর ১৫ জন সদস্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে একে একে বাকি পাঁচটি বাহিনীর সদস্যরাও আত্মসমর্পণ করেন। মামলা প্রত্যাহার চান আত্মসমর্পণকৃত দস্যুরা আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুরা পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। আত্মসমর্পণের পর দাদা ভাই বাহিনীর প্রধান মো. জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন ওরফে দাদা ভাই বলেন, ‘‘আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে চাই। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় পুলিশ হয়রানি করে থাকে। এতে আমাদের মতো পরিবারের সদস্যরাও সব সময় আতংকিত থাকে।’ ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণকৃত মজিদ বাহিনীর প্রধান তাকবির ওরফে মজিদ বলেন, ‘‘আমরা র্যাবের কাছে অস্ত্র দিয়ে আত্মসমর্পণ করলেও মামলা থাকায় পুলিশ হয়রানি করছে। এই মামলা প্রত্যাহার করা না হলে স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। আর কোনো অপরাধ জগতে ফিরে যেতে চাই না। এই মুক্ত জীবনে থাকতে চাই। কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে চাই।’’ তিনি মামলা প্রত্যাহার করে পুলিশি হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে স্বরাষ্ট্র ও র্যাবের প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিগত ২৩ মাসে সুন্দরবনের ২০টি বাহিনীর ২১৭ জন জলদস্যু ৩৬৪টি অস্ত্র ও ১৭ হাজার ৮৬৯ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৩৪ জন বনদস্যু নিহত হয়।
×