ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাগর কোড়াইয়া

পবিত্র মাসে পাগলা ঘোড়া

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৪ মে ২০১৮

পবিত্র মাসে পাগলা ঘোড়া

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ব্যবসায়ী-বিক্রেতারদের মধ্যে এমন মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে, ধর্মীয় ও অন্যান্য জাতীয় দিবসগুলোর পূর্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতেই হবে; নয়ত মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লাভ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে দেশে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির পাঁয়তারা তো রয়েছেই। ছড়াকার রফিকুল হক (দাদু ভাই) এর ছড়ার একটি পঙ্ক্তি ‘আসছে আমার পাগলা ঘোড়া’ দিয়ে রমজানে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিকে স্পষ্ট করে প্রকাশ করা যায়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যেন পাগলা ঘোড়ার মতো হয়ে উঠেছে। যে ঘোড়া সময় হলে আস্তাবল থেকে বের হয়ে ছুটতে থাকবে। ছুটতে থাকবে সারা দেশময়। যদিও ঘোড়াটিকে দেখলে মনে হয় যেন ঘোড়া সওয়ার নেই কিন্তু অদৃশ্য সওয়ারই পাগলা ঘোড়াকে পরিচালনা করছে। লাগাম হাতে বসে আছে সার্বক্ষণিক। অদৃশ্য এই ঘোড়া সওয়ার আত্মতুষ্টির জন্য ল-ভ- করে দেয় জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তছনছ করে দেয় ফসলি মাঠ থেকে শুরু করে বসতভিটা। অন্দরমহলে বিনা বাঁধায় প্রচ- প্রতাপে প্রবেশ করে। কারও যেন সাধ্য নেই ঘোড়ার লাগাম ধরে বাগে আনবার। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, স্বল্প উৎপাদন, চাহিদার চেয়ে যোগানের পরিমাণ কম ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় সত্য। আবার এটাও সত্য একবার দাম বাড়লে তা কমার কোন সম্ভাবনা থাকে না। অন্যদিকে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বছরের যে কোন সময় যেভাবে ইচ্ছা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। বাজারদর যেন এক গোলক-ধাঁধার নাম। কখন কি অবস্থায় দ্রব্যের বাজারদর থাকবে তা বলা মুশকিল। অনেক ব্যবসায়ী পণ্যদ্রব্য মজুত করে রেখে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত। পরবর্তীতে মজুতকৃত পণ্যদ্রব্য বাজারে ছেড়ে চড়া দামে বিক্রি করে। মাঝখান থেকে উৎপাদক শ্রেণী পণ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মহল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় সিদ্ধহস্ত। অনেকেই পবিত্র রমজান আসার আগেই দ্রব্যমূল্য ইতোমধ্যে বৃদ্ধি করে ফেলেছে। প্রাত্যহিক ভোগ্যপণ্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া হতে আর দেরি নেই। যদিও বাজারে এই পণ্যসামগ্রীর যোগান যথেষ্ট রয়েছে তবুও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নামক পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। চড়াদামে পণ্যদ্রব্য ক্রয় করার ক্ষমতা আমাদের দেশে মুষ্টিমেয় জনগণের রয়েছে। যেহেতু দেশের অধিকাংশ জনগণই মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে তাদের নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা হয়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সঙ্গে এই দুই শ্রেণীর মাসিক আয়ের কোন প্রকার উর্ধগতি চোখে পড়ে না। তখন টেনেটুনে সংসার চালানোই বরং কঠিন হয়ে পড়ে। আয়ের সঙ্গে তখন ব্যয়ের বিস্তর ফারাক দেখা দেয়। প্রতিবছরই পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা লোপ পায়। তবু জীবন চলছে-চলবে। কিন্তু এ চলাকে তো চলা বলা যায় না। যদিও যথাযথ কর্তৃপক্ষ পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন- আশা জাগানিয়া বিষয়। বনানী, ঢাকা থেকে
×