ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাকে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি, ছোলার দাম আরও ৫ টাকা কম

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৪ মে ২০১৮

ট্রাকে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি, ছোলার দাম আরও ৫ টাকা কম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাহবুবা বেগম (৩৫)। অফিস শেষে দ্রুতই স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করা একটি ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন। দ্রুতই নিজের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বাসার পথ ধরলেন। কথা বলারও সময় কম, কেননা বাসায় গিয়ে ইফতার বানাতে হবে। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে রাজধানীতে ট্রাকযোগে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ৩২ স্থানের নিয়মিত দৃশ্য এটি। স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি হওয়ার কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষই প্রধান ক্রেতা। এদিকে ছোলার বর্তমান মূল্য থেকে আরও ৫ টাকা কমিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৫৫ টাকা করে বিক্রি করবে বলে জানিয়েছে টিসিবি। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে খোলা ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করার সময় দেখা গেছে কোথাও মানুষের লম্বা লাইন আবার কোথাও বেশ ফাঁকা। তবে এই পণ্য নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ রয়েছে। যদিও বাজারমূল্যের চেয়ে দাম খুব একটা হেরফের নয়। কোনকোন পণ্যে ৫ থেকে ১০ টাকার মতো কম পাওয়া যায়। কিন্তু তবুও ক্রেতারা এতে বেশ খুশি। জানা গেছে, গত ৬ মে থেকে ন্যায্যমূল্যে এই পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৩২ ট্রাকযোগে স্বল্পমূল্যে এই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ২৭৮৪ ডিলার ও নিজস্ব ১০টি বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে তাদের পণ্য। এ কর্মসূচীর আওতায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, ছোলা এবং খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য শুরু থেকে প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা এবং মসুর ডাল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছিল। তবে বিক্রি শুরুর ১২ দিনের মাথায় এসে গত ১৮ মে থেকে মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরের দাম কমিয়েছে সংস্থাটি। দাম কমানোর পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে পণ্যের পরিমাণ। নতুন দাম অনুযায়ী বর্তমানে মসুর ডালের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমিয়ে ৫০ টাকা কেজি, ছোলা পাঁচ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা পরবর্তিতে আরও ৫ টাকা কমিয়ে ৬০ টাকা এবং খেজুর প্রতিকেজিতে ২০ টাকা কমিয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। সয়াবিন তেল আগের মতোই ৮৫ টাকা লিটার এবং ৫৫ টাকা কেজিতে চিনির দাম অপরিবর্তিত রেখেছে। এছাড়াও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন ক্রেতা পাঁচ কেজি চিনি, পাঁচ কেজি মসুর ডাল, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল, ১০ কেজি ছোলা এবং দুই কেজি খেজুর কিনতে পারবে। যেখানে আগে একজন ক্রেতা চার কেজি চিনি ও মসুর ডাল, পাঁচ লিটার সয়াবিন, পাঁচ কেজি ছোলা এবং এক কেজি খেজুর কিনতে পারত। তবে টিসিবির কিছু পণ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে খেজুরের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও টিসিবি বলছে, তাদের প্রতিটি পণ্যই বিএসটিআই ও সাইন্স ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষিত। সেখান থেকে সার্টিফিকেট দিলেই পণ্য বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। তাই ভেজাল পণ্য বিক্রির সুযোগ নেই। অন্যদিকে একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন খেজুরের মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ট্রাকযোগে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবির ডিলার হক ভ্যারাইটি স্টোর এখানে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৫০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার, খেজুর ১০০ টাকা কেজি দরে। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে খেজুর, ও ছোলা কিনেন সরকারী কর্মচারী আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানেই চাকরি করি ফেরার সময় কিনে নেই। দামও একটু কম পাই। তবে কোন কোন সময় খেজুর নষ্ট থাকে বলেও জানান তিনি। ডিলার ফজলুল হক বলেন, খেজুরগুলো নষ্ট নয়। অনেক সময় বেশি পেকে গেলে রংটা একটু কালো দেখায়। মান রক্ষা করেই প্রতিটি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, জানা গেছে, ঢাকা শহরের যেসব স্থানে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা হলোÑ সচিবালয় গেট, প্রেসক্লাব, কাপ্তান বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সাইন্সল্যাব মোড়, নিউমার্কেট তথা নীলক্ষেত মোড়, শ্যামলী অথবা কল্যাণপুর, ঝিগাতলা মোড়, খামার বাড়ি, কলমীতলা বাজার, কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটের সামনে, আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স উত্তরা, মিরপুর-১নং মাজার রোড, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, মতিঝিল বকচত্বর, খিলগাঁও তালতলা বাজার, রামপুরা বাজার, মিরপুর-১০ গোলচত্বর, আশকোনা হাজী ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, দিলকুশা ও মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে। দৈনিক বাংলা মোড় পণ্য কিনেন এক ব্যাংক কর্মচারী আওলাদ হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা অল্প আয়ের মানুষ। এসব জায়গার পণ্য খারাপ হয় না। দাম বাজারের চেয়ে কিছুটা হলেও কম পাওয়া যায় তাই কিনি। একই জায়গা থেকে পণ্য কিনে সবুর হোসেন বলেন, সব সময় পণ্য ভাল নাও হতে পারে। কখনও ছোলা একটু খারাপ হবে। কখনও খেজুর মুখেই দেয়া যায় না। তবে সার্বিক বিবেচনায় পণ্য ভাল বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে টিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জনকণ্ঠকে বলেন, টিসিবির প্রতিটি পণ্যই শতভাগ মানসম্পন্ন। এখানে ভেজালের কোন সুযোগ নেই। যারা অভিযোগ করছেন তারা ভাল করে দেখছেন না। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন কোন পণ্য আমদানি করি তখন সেটা বিএসটিআই ও সাইন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।
×