ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

পাঞ্জাবির বড় বাজার শরীফ মার্কেট জমজমাট

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৪ মে ২০১৮

পাঞ্জাবির বড় বাজার শরীফ মার্কেট জমজমাট

রহিম শেখ ॥ জমে উঠেছে পুরান ঢাকার শরীফ মার্কেটের পাঞ্জাবির বৃহত্তম পাইকারি বাজার। ঈদের পাইকারি বাজার ধরতে এখন পুরোদমেই প্রস্তুত সেখানকার ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিনই মার্কেটে বাড়ছে পাঞ্জাবির পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। এ মার্কেটের কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা সারাদেশে একযোগে পাঞ্জাবি সরবরাহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ক্রেতাদের জন্য পাঞ্জাবি স্তূপে স্তূপে সাজিয়ে বসে আছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানে ফ্লোরে বসেই পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেনের দৃশ্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দেশের মোট পাঞ্জাবির চাহিদার ৮০ শতাংশই সরবরাহ করে থাকে শরীফ মার্কেট। শরীফ মার্কেট দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শরীফ মার্কেট থেকে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ পাঞ্জাবি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। সমিতির প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, এরই মধ্যে ৫০ লাখ পিস পাঞ্জাবি বিক্রি হয়েছে। আর শবে-বরাতের পর থেকে এ পর্যন্ত এর পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে; যা আগামী ২০ রমজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। জানা গেছে, ঈদ মার্কেট সামনে রেখে শবে-বরাতের আগে থেকে শরীফ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা শুরু করেছেন পাঞ্জাবি তৈরির কাজ। কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এই মার্কেটের পাঞ্জাবি দিনরাত তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে এই মার্কেটের পাঞ্জাবির চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা পাঞ্জাবি তৈরি ও বিপণনেও যথেষ্ট যতœশীল। শরীফ মার্কেটের তিন শতাধিক দোকানে এবার তোলা হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের কোটি কোটি পিস পাঞ্জাবি। আর এসব পাঞ্জাবি বিক্রিতে ও বাড়তি চাহিদা সামলাতে দোকানগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বাড়তি কর্মচারীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এখানকার সবচেয়ে ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীরা ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা এবং মাঝারি ধরনের পাইকার দেড় থেকে তিন কোটি এবং বড় পাইকাররা ৫ কোটি টাকার উর্ধে অতিরিক্ত পুঁজি খাটিয়েছেন। দোকান ও বিনিয়োগভেদে প্রত্যেকেই ১ থেকে ৫ লাখ পিস পাঞ্জাবি বিক্রির আশা করছেন এবারের ঈদে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার পাইকারি দরে প্রতি পিস পাঞ্জাবির সর্বনিম্ন দাম ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত । শরীফুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে রোজার এক মাস আগে থেকে অভিজ্ঞ সব ডিজাইনার দ্বারা পাঞ্জাবি তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাপের কারণে শরীফ মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে রাত ১২টা পর্যন্ত। মার্কেটের শিকদার গার্মেন্টের মালিক সিরাজুল ইসলাম শিকদার বলেন, ঈদ উপলক্ষে রোজার এক মাস আগে থেকে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছেন এখানকার পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীরা। এবারের ঈদ বাজারকে ধরতে অভিজ্ঞ সব ডিজাইনার দ্বারা পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে। আর ঈদ সামনে রেখে পাঞ্জাবির বিক্রি অনেক বেড়েছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এ মার্কেট থেকে পাঞ্জাবি সংগ্রহ করছেন। গতবারের চেয়ে এ বছর বিক্রি বেশি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিরাজুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে শরীফ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এলবি গার্মেন্টের মালিক লুৎফর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ক্রেতাদের চাহিদাকে মাথায় রেখেই পাঞ্জাবিতে আধুনিক ডিজাইন ও উন্নতমানের কাপড় সংযোজন করা হয়েছে। চীন থেকে উন্নতমানের কাপড় এনে পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শরীফ মার্কেট থেকে প্রতিদিন সারা দেশে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ পাঞ্জাবি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এদিকে বরিশাল সদর থেকে শরীফ মার্কেটে পাইকারি দরে পাঞ্জাবি ক্রয় করতে আসা মোঃ সুজা উদ্দিন বলেন, এখানকার তৈরি পাঞ্জাবি দামে সস্তা ও টেকসই হওয়ার কারণে ক্রেতাদের আলাদা চাহিদা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রেতারা একটু সস্তায় পাঞ্জাবি কিনতে চায়, যা শরীফ মার্কেটে পাওয়া যায়। এজন্যই প্রতি বছর এখান থেকে পাঞ্জাবি নিয়ে যাই। তিনি আরও বলেন, এখানকার পাঞ্জাবির কাপড়ের মান অনেক ভাল। বিভিন্ন রঙের ও ডিজাইনের সব বয়সের ক্রেতাদের চাহিদামতো পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। গত মঙ্গলবার শরীফ মার্কেটে পাঞ্জাবি সংগ্রহ করতে এসেছিলেন বগুড়ার কুমিল্লার ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এখানকার তৈরি পাঞ্জাবি দামে সস্তা ও টেকসই হওয়ার কারণে ক্রেতাদের আলাদা চাহিদা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রেতারা একটু সস্তায় পাঞ্জাবি কিনতে চায়, যা শরীফ মার্কেটে পাওয়া যায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শরীফ মার্কেট। প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। দোকানের মেঝেতে বসে ব্যবসায়ীরা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেন করছেন। বেচাকেনা ও পাইকারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ঈদ সামনে রেখে এখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের তৈরি পাঞ্জাবির পাশাপাশি ইন্ডিয়ান অরেঞ্জ ক্রাশ, টিস্যু কাতান নেট, ইয়াগ রোলেক্স, কাশ্মীর সিল্ক, দুলহান, টু পিস, থ্রি পিস, ফোর পিস, বোম্বে সিল্ক, অল বডি কারচুপির কাজ, কারচুপির নক্সা, রাজশাহী সিল্ক, তসর কাপড়ের ওপর কাজ এবং কম্পিউটার দিয়ে ডিজাইন করা বিভিন্ন রকম পাঞ্জাবি প্রদর্শন এবং বিক্রি করছেন। আগের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতা উপস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এদিকে শরীফ মার্কেট ছাড়াও রাজধানীর পীর ইয়ামেনী, মালিবাগ এলাকার আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, সায়েন্স ল্যাবরেটরি সংলগ্ন মিরপুর ও এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি মার্কেটে পাঞ্জাবির পাইকারি বিক্রির কথা জানা গেছে। তবে সেগুলো নিতান্তই অল্প পরিমাণের এবং এদের অধিকাংশ পাইকারই শরীফ মার্কেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। এর বাইরে রাজধানীতে পাঞ্জাবির খুচরা বিক্রির অসংখ্য দোকান রয়েছে। দোকানিরা জানিয়েছেন, লম্বা পাঞ্জাবির চেয়ে মাঝারি ও শর্ট পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি ক্রেতাদের কাছে। খুচরা মার্কেটে সাধারণত ৫শ’ থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যের পাঞ্জাবিই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
×