ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ মৌসুমের অপরাধী ধরতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৪ মে ২০১৮

ঈদ মৌসুমের অপরাধী ধরতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ পুলিশের ভাষায় ‘মৌসুমী অপরাধ’। মৌসুমী অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানের ফলে অনেক ক্ষেত্রে এবার মৌসুমী অপরাধী চক্রের তৎপরতা অনেকাংশে কমে গেছে। তবে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ভুয়া ডিবি-র‌্যাব, প্রতারক চক্রসহ মৌসুমী অপরাধী চক্রের তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে এই ধরনের অপরাধীদের তৎপরতা বৃদ্ধি রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা জোরদার করেছে। কেবল রাজধানী ঢাকাতেই এই ধরনের শতাধিক অপরাধী চক্রের সদস্য সক্রিয়। এসব সদস্যের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও ভুয়া ডিবি-র‌্যাব সদস্যরা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কেবল অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মারা গেছেন ৫ জন। আহত হয়েছেন ২ শতাধিক। রাজধানীর ৩ শতাধিক স্পটে ছিনতাইকারীরা ছিনিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা, যা উদ্ধার হয়নি। চাঁদাবাজি করছে সন্ত্রাসীরা। ঈদ ঘনিয়ে এলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই ধরনের মৌসুমী অপরাধীরা। চার ধরনের মৌসুমী অপরাধীদের পাকড়াও করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত এক বছরে অন্তত ২শ’ জন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিল। এরমধ্যে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছর ডিবির অভিযানে অজ্ঞান পার্টির ৫৪ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে সংঘবদ্ধ দলের অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অপরাধবিষয়ক বৈঠকে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মৌসুমী অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেন তিনি। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশের পর রাজধানী ঢাকায় ঈদের সময়ে মৌসুমী অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিএমপি সূত্র জানান, রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টি অভিনব উপায়ে নানা কৌশলে পথচারী, যাত্রীদের কিছু খাইয়ে বা মুখে রূমাল ধরে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটায়। সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার সময়ে অজ্ঞান পার্টির হাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ছিনতাইকারীরা রাস্তার পথচারীদের নির্জন বা সুবিধাজনক স্থানে ছিনতাইতো করছেই, এমনকি মোটরসাইকেল, বেবিট্যাক্সি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের মাধ্যমেও ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। ছিনতাইকারীদের কাছে ছিনতাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে মোবাইল ফোন। আর রিক্সারোহী মহিলা যাত্রীদের স্বর্ণালঙ্কার হচ্ছে ছিনতাইকারীদের বড় টার্গেট। ডিএমপি পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীতে ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) আওতাধীন আটটি ক্রাইম জোনের প্রতিটিতেই ১০-১২টি করে ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে শতাধিক ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এই চক্রের সদস্য তিন শতাধিক। ছিনতাইকারীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে ধারালো অস্ত্র রয়েছে। মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, কখনও প্রাইভেটকারে করে তারা শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ডিএমপি সূত্র জানান, রাজধানীর তিন শতাধিক স্পটে সক্রিয় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। ঈদকে সামনে রেখে অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। সাংবাদিক, ডিবি পুলিশসহ নানা পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে লুটে নিচ্ছে তাদের অর্থ-সম্পদ। এমনকি একশ্রেণীর নারী ছিনতাইকারীও ব্ল্যাকমেইল করে দিনদুপুরে হাতিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব। সুন্দরী তরুণীদের এই কাজে ব্যবহার করছে প্রতারক চক্র। ঈদকে সামনে রেখে অভিনব কায়দায় রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই চক্রের সদস্যরা। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এই চক্রের কবলে পড়ে ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘটছে চাঁদাবাজির ঘটনাও। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টাকার লেনদেন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রমজান শুরুর পর পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে নেই ছিনতাই। দিনে-দুপুরে শত শত মানুষের সামনেই অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। ডিএমপি সূত্র জানান, ভুয়া ডিবি, র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে ১০ থেকে ১২টি গ্রুপ ডাকাতি ও ছিনতাইসহ অপরাধী কাজে সক্রিয় রয়েছে রাজধানীতে। এরা একই চক্রভুক্ত। র‌্যাব-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বেশকিছু সদস্য এসব দলে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই ভুয়া ডিবি ও র‌্যাব সদস্য পরিচয়দানকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ওয়্যারলেস, পুলিশের ব্যবহৃত লাঠি, হ্যান্ডকাফ এবং দু’টি মাইক্রোবাস ও গাড়ি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রাজধানীতে এ রকম ১০ থেকে ১২টি গ্রুপ সক্রিয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে জব্দ করেছে ‘ডিবি’ লেখা এবং ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরী কাজে নিয়োজিত’ লেখা দু’টি স্টিকারও। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মোঃ মাসুদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মৌসুমী অপরাধী চক্র বিশেষ করে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলম পার্টির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রমজান মাসে শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ঈদকে সামনে রেখে জোরদার করা হয়েছে, যা ঈদের পরও অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের ফলে এবারের মৌসুমী অপরাধী চক্রের তৎপরতা অনেক কমে গেছে বলে এই ডিএমপি কর্মকর্তার দাবি।
×