ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর কয়েকটি রেস্তরাঁ ও শপিংমলকে জরিমানা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ মে ২০১৮

রাজধানীর কয়েকটি রেস্তরাঁ ও শপিংমলকে জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তরাঁ ও শপিংমলে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বুধবারও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। ধানম-িতে দাওয়াত-ই-মেজবান রেস্তরাঁয় ময়লার ঝুড়ি থেকে শিল্প-কারখানার কাপড়ে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রঙের কৌটা উদ্ধার করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‌্যাবের অভিযানের সংবাদ পেয়ে রঙের কৌটাটি ময়লার ঝুড়িতে ফেলেছিল রেস্তরাঁর লোকজন। বুধবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ সময় দাওয়াত-ই-মেজবানকে জরিমানা করা হয় ৪ লাখ টাকা। সরেজমিনে ধানম-ির ৭৪/৫/এ নম্বর চতুর্থ তলায় চট্টগ্রামের মেজবান ও কালাভুনার জন্য বিখ্যাত দাওয়াত-ই-মেকজবান’র রান্না ঘরে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি বড় পলিথিনে গতকালের গ্রাহকদের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ (ঝুটা খাবার) রাখা হয়েছে। বাসি এই খাবার থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল। দুইটি ডিপ ফ্রিজ ছিল। প্রথম ফ্রিজটির ভেতর কয়েকদিন আগের রান্না করা জমাট গরুর মাংস, মাছের ও মুরগির ফ্রাই রাখা। রেডিফুড ডিপ ফ্রিজে কেন? ম্যাজিস্ট্রেটের এমন প্রশ্নে রেস্তরাঁর ইনচার্জ মোঃ ইমন উত্তর দেন, ‘ইফতারের সময় সবকিছু একসঙ্গে রেডি করা যায় না, তাই আগে থেকে তৈরি করা। ভ্রাম্যমাণ আদালত বলছে, বাসি খাবারগুলো ইফতারে গ্রাহকদের পরিবেশনের জন্য রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ডিপ ফ্রিজটি খুলে কাঁচা মাংসসহ দীর্ঘদিনের পুরনো ছোট চিংড়ি মাছের ভর্তা পাওয়া গেছে। কাঁচা অবস্থায় ভর্তা করা চিংড়িগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। তবে দাওয়াত-ই-মেজবানের সবচেয়ে বড় অপরাধ পাওয়া যায় অভিযানের শেষ অংশে। তাদের ডাইনিং রুমের ময়লার ঝুড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় কাপড়ের একটি ক্ষতিকারক রঙের কৌটা। অভিযান সম্পর্কে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, গ্রাহকদের থেকে খাবারের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিলেও রেস্তরাঁর মানসম্মত খাবার পরিবেশন করছে না। রেস্তরাঁর ফ্রিজের ওপরের অংশে জং ধরা। দীর্ঘদিন ধরে এটি পরিষ্কার করা হয়নি। ফ্রিজের পাশ থেকে এক জোড়া জুতা পাওয়া গেছে, যা এখানে থাকার কথা না। ফ্রিজ থেকে রান্না করা বাসি মাছ-মাংস পাওয়া গেছে। তাদের কেনা কোয়েলের ডিমগুলো পচে গন্ধ বের হচ্ছিল। অভিযানে কাপড়ের ক্ষতিকারক রং ভর্তি একটি কৌটা উদ্ধার করা হয়েছে। এই রং দিয়ে তারা জর্দা তৈরি করত বলে জানিয়েছে। অথচ এতে স্পষ্ট করে লেখা আছে -ইন্ডাস্ট্রিয়ালের মেটেরিয়াল (শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল)। জর্দায় ব্যবহৃত ফুড গ্রেডেড রং প্রতি কেজি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর কাপড়ের এই রং মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০। এই রং মানবদেহে গেলে দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার হওয়ার কারণ হতে পারে। তারা এই রং ব্যবহার করে মানুষের স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি করছে তা টাকায় পরিমাপযোগ্য নয়। তবুও তাদের ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাওয়াত-ই-মেজবানের ইনচার্জ মোঃ ইমন বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে জর্দার কোন আইটেম নেই। যখন জর্দা ছিল তখন এই রং ব্যবহার করা হতো। এই রং সেফ (বাবুর্চি) ব্যবহার করত। এটা যে ক্ষতিকর তা আমাদের জানা ছিল না। এদিকে বাসি জিলাপি, আলুর চপ ও হালিমে ব্যবহৃত বেরেস্তা রাখার অভিযোগে ঝিগাতলার ইউনাইটেড ক্যাটারিংকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে এ অভিযান চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। অভিযানের শুরুতে রান্নায় অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করায় রাজধানীর ধানম-ির কেএফসি রেস্তরাঁকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বেঙ্গল মিটকে জরিমানা ॥ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি করায় বেঙ্গল মিটকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বুধবার রাজধানীর ধানম-ির ঝিগাতলা এলাকায় বিশেষ অভিযানে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানের তদারকি করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী। সার্বিক সহযোগিতা করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)-১ ও ১১ এর সদস্যরা। সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল বলেন, সিটি কর্পোরেশন রমজান উপলক্ষে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বেঙ্গল মিট নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি দামে খাসির মাংস বিক্রি করছে। রমজানে প্রতি কেজি খাসির মাংস ৭২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বেঙ্গল মিট ক্রেতাদের কাছ থেকে নিচ্ছে ৮২০ টাকা। এ অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪০ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বেঙ্গল মিট কর্তৃপক্ষকে রমজানে তাদের সব শাখায় নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কড়াই গোস্ত, জরিমানা ॥ রান্নাঘরে তেলাপাকা, পচা-বাসি খাবার বিক্রি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য তৈরির অভিযোগে কড়াই গোস্ত ও বাবুর্চি রেস্তরাঁকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বুধবার ধানম-ির ঝিগাতলা এলাকায় এ বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের তদারকি করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী। সার্বিক সহযোগিতা করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)-১ ও ১১-এর সদস্যরা। অভিযানে নামকরা রেস্টুরেন্ট কড়াই গোস্তকে পচা-বাসি, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করতে দেখা যায়। এছাড়া তাদের খাবারে তেলাপোকা পাওয়া যায়। এসব অভিযোগে কড়াই গোস্তকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই অভিযোগে বাবুর্চি রেস্তরাঁকেও দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়। ধানম-ির কেএফসিকে লাখ টাকা জরিমানা ॥ অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করায় রাজধানীর ধানম-ির কেএফসি রেস্টুরেন্টকে একলাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে কেএফসিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত কেএফসির কিচেন পরিদর্শন করে। ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে দেখা যায়, যেই ফিল্টার থেকে পানি পরিশোধন করে রান্না করা হয় সেটি কাজ করছিল না। তবে রান্নাঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল।
×