ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার কবরের পাশে শেষ ঠাঁই হলো তাজিনের

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৪ মে ২০১৮

বাবার কবরের পাশে শেষ ঠাঁই হলো তাজিনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাবাকে প্রাণভরে দেখার সুযোগ তেমন হয়নি অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। জীবনে বহুবার বাবার অভাবে কেঁদেছেন, বাবাকে মিস করেছেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বাবা কামাল উদ্দিন আহমেদের কবরের পাশে সমাহিত করা হলো তাজিন আহমেদকে। বনানী কবরস্থানের ৯৫৭ নম্বর কবরটি তার বাবার। তাজিন নিজেই বাবার কবরের নাম ফলকটি করিয়েছিলেন। সেখানে বাবার নাম ও জন্ম মৃত্যুর তারিখসহ পরম মমতায় লিখিয়েছিলেন, আব্বু আমার। সেই কবরেই শায়িত হলেন নিজেই। বাবার বুকে ঘুমিয়ে আছেন কন্যা, এই ঘুমের কোন শেষ নেই। তাজিনকে দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন তার চাচাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এর আগে জোহর নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে তাজিন আহমেদের মরদেহ উত্তরার আনন্দবাড়ি শূটিং হাউসে রাখা হয়। এখানে ছোট পর্দার এই তারকার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু আর শুভানুধ্যায়ীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাজিন আহমেদ। পরে তাকে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। অবশেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর। তাজিন আহমেদের জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই নোয়াখালী জেলায়। বেড়ে উঠেছেন পাবনা জেলায়। তিনি ঢাকার ইডেন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাজিন আহমেদের অভিনয়ের শুরুটা হয় টিভি নাটক দিয়ে। বিটিভিতে তার অভিনীত নাটক ‘আঁধারে ধবল দৃপ্তি’ বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত নাটক ‘নীলচুড়ি’তে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তাজিন আহমেদ। ১৯৯৭ সালে থিয়েটার আরামবাগ দিয়ে মঞ্চনাটক শুরু করেন। এরপর নাট্যজন থিয়েটারের হয়ে কিছু নাটকে অভিনয় করেন। পরে আরণ্যক নাট্যদলের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি তাঁর অভিনীত শেষ মঞ্চনাটক। টিভিতে তার অভিনীত শেষ ধারাবাহিক নাটক ‘বিদেশি পাড়া’। অভিনয় ও উপস্থাপনার বাইরে লেখালেখি করেন তাজিন আহমেদ। লাশ দেখলেন বন্দী মা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, কাশিমপুর কারাগারে বন্দী মায়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিতে টিভি, নাট্য অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা তাজিন আহমেদের লাশ বুধবার সকালে গাজীপুরের কারাফটকে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগার থেকেই মেয়েকে শেষ বিদায় জানান অভিনয়শিল্পী তাজিন আহমেদের মা দিলারা জলি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর কবির জানান, তাজিনের মা দিলারা বেগমের (৬২) বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির চারটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে ঢাকা জেলা দায়রা আদালতের বিচারক চারটি মামলার প্রতিটিতে তাকে এক বছর করে মোট চার বছরের সাজা দেন। গত ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়। তার সম্ভাব্য মুক্তির দিন হলো ২০১৯ সালের ২২অক্টোবর। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেলার সালমা বেগম জানান, কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বুধবার সকাল ৮টার দিকে তাজিনের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে তার সহকর্মীসহ পাঁচজন গাজীপুরস্থিত কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের ফটকে নিয়ে আসেন। পরে তার লাশ মা দিলারা জলিকে (৬২) দেখানো হয়। এ সময় মেয়ের লাশ দেখে মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রায় দুই বছর আগে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে স্থানান্তরিত হন। নাট্য পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে তাজিনের লাশ ঢাকায় গুলশানের আজাদ মসজিদে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। প্রসঙ্গত মঙ্গলবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাজিন আহমেদ ৪৫ বছর বয়সে ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার পৈত্রিক বাড়ি নোয়াখালীতে হলেও তিনি বেড়ে ওঠেন পাবনায় নানা বাড়িতে। মা দিলারা জলির প্রোডাকশন হাউস ছিল।
×