ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সর্বাধিক সংখ্যক নজরুল সঙ্গীতের সংকলন-গ্রন্থ সম্পাদনা করেছি ॥ ড. রশিদুন্ নবী

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৪ মে ২০১৮

সর্বাধিক সংখ্যক নজরুল সঙ্গীতের সংকলন-গ্রন্থ সম্পাদনা করেছি ॥ ড. রশিদুন্ নবী

নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক অধ্যাপক ড. রশিদুন্ নবী। নজরুল একাডেমি ও বাফায় নজরুলসঙ্গীত বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ ২২ বছর। নজরুল সঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়ন ও সঠিক সুরে পরিবেশনের জন্য দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রধান এই শিক্ষক। সম্প্রতি কবিতীর্থ চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি থেকে নজরুল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি। সঙ্গীত ও এ সম্মাননা সম্পর্কে কথা হয় তার সঙ্গে। সঙ্গীতের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল? রশিদুন্ নবী : নড়াইল সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ শেষে নজরুলসঙ্গীতে সরকারী সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় থেকে বি.মিউজ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে এম মিউজ এবং ‘নজরুলসঙ্গীত : শিল্পরূপ ও সুরবৈচিত্র্য’ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন। ওস্তাদের কাছে সঙ্গীত শেখার শুরুটা কেমন ছিল? রশিদুন্ নবী : ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি দুর্বলতা সে সুবাদে গান নিয়েই পড়াশোনা এবং গান শিখতে ওস্তাদদের কাছে তালিম তো নিতেই হয়। আমার সৌভাগ্য আমি বেশ কিছু গুণী ওস্তাদের সান্নিধ্য পেয়েছি। এর মধ্যে উল্লেথযোগ্য উস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, উস্তাদ নারায়ণ চন্দ্র বসাক, উস্তাদ সৈয়দ জাকির হোসেন, শেখ লুৎফর রহমান, সুধীন দাশ, খালিদ হোসেন, এসএম আহসান মুর্শেদ, আবদুল লতিফ, হানিফ মোহাম্মদ প্রমুখ। এছাড়াও দীর্ঘদিন বরেণ্য নজরুলসঙ্গীত শিল্পী লায়লা আর্জ্জুমান্দ বানু, সোহরাব হোসেন, ফিরোজা বেগম ও বেদারউদ্দিন আহমদের কাছেও তালিমের সুযোগ হয়েছে। নজরুলসঙ্গীত নিয়ে গবেষণার বিষয়ে কিছু বলেন? রশিদুন্ নবী : ১৯৮৯ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামাঙ্কিত সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল ইনস্টিটিউটে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেই ও পরবর্তীকালে সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করি। ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দেই। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও দোলন-চাঁপা হলের প্রভোস্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করি। বর্তমানে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছি। এ পর্যন্ত সংকলিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা কত? রশিদুন্ নবী : আমি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রকাশিত সর্বাধিক সংখ্যক অর্থাৎ তিন হাজার একশ চোয়াত্তরটি নজরুল সঙ্গীতের সংকলন-গ্রন্থ ‘নজরুলসঙ্গীত সংগ্রহ’র সম্পাদক। এ গ্রন্থটি ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে। এ-ছাড়া ‘আদি রেকর্ড-ভিত্তিক নজরুল সঙ্গীতের নির্বাচিত বাণী সংকলন’, ‘নজরুলসঙ্গীত স্বরলিপি সংগ্রহ’, ‘নজরুলের নির্বাচিত ছোটগল্প’, ‘নজরুলের উপন্যাস সংগ্রহ’, ‘নজরুলের নির্বাচিত কিশোর সাহিত্য’, ‘নজরুলের কাব্যানুবাদ’, ‘নজরুলের নির্বাচিত প্রবন্ধ’, ‘আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের তালিকা’, ‘হাজার বছরের বাংলাগান সংগ্রহ’সহ মোট চৌদ্দটি গ্রন্থ সম্পাদনা করি। উল্লেখ্য, নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল একাডেমি থেকে আমার প্রণীত নজরুল সঙ্গীতের পাঁচটি প্রামাণ্য স্বরলিপি-গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। নজরুল পুরস্কার সম্পর্কে কিছু বলেন? রশিদুন্ নবী : ভারতের কবিতীর্থ চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি থেকে ‘নজরুল পুরস্কার ২০১৮’র জন্য মনোনীত হয়েছি। এ পুরস্কার গ্রহণের জন্য ২৬ মে চুরুলিয়ায় যাব। শুদ্ধভাবে নজরুল সঙ্গীত চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং ২০১৭ সালে বাংলাভিশন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। শুদ্ধ বাণী ও সুরে এককভাবে নজরুলসঙ্গীত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরার আগরতলাস্থ ‘সুর-অঞ্জলি’র পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে আমি ২০১২ সালের জুলাই ও ২০১৫ সালের জুন মাসে ত্রিপুরায় গিয়ে নজরুল সঙ্গীতের ওয়ার্কশপ পরিচালনা করি এবং ‘সুর-অঞ্জলি’র পক্ষ থেকে আমাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। উল্লেখ্য, কোন বাংলাদেশী প্রশিক্ষককে দিয়ে ভারতের কোথাও নজরুল সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি ছিল এটাই প্রথম। -গৌতম পাণ্ডে
×