ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষায় রোহিঙ্গাদের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে : প্রিয়াঙ্কা

প্রকাশিত: ০০:৪৫, ২৪ মে ২০১৮

বর্ষায় রোহিঙ্গাদের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে : প্রিয়াঙ্কা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দাঁড়িয়ে অর্থ, সরঞ্জাম, খাদ্য, শ্রম, সমর্থন, যে কোনো কিছু দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক বিশ্বসুন্দরী এবং বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। টেকনাফ উখিয়ার অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা জানিয়ে তাদের সহায়তায় যে কোনো উপায়ে এগিয়ে আসতে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি শিশুবান্ধব এলাকা (চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস) থেকে বৃহস্পতিবার দেয়া ফেসবুক লাইভে এ আহ্বান জানান তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুর্বল স্থাপনাগুলোতে এই ঝড়বৃষ্টির সময় আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো কতটা অনিরাপদ ও অসহায় তা তুলে ধরেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারে অনেক গরম। এর মাঝে শরণার্থীদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে প্রিয়াঙ্কা গত সোমবার থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গাদের সমস্যা, শিশুদের স্বপ্ন নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলার পর চার দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সাবেক এ বিশ্বসুন্দরী ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার বিমানবন্দর ছাড়েন। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে কথা বলেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ফেসবুক লাইভে রোহিঙ্গা শিশুদের করুণ অবস্থার বিবরণ দেন। বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন লাইভে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে করা ভক্তদের প্রশ্নের জবাব দেন এই বলিউড অভিনেত্রী। ১৪ মিনিটের সেই বক্তব্যে প্রথমেই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন। বলেন, শৌচাগার ও টিউবওয়েল পাশাপাশি হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ-জীবাণু। এক ভক্তের প্রশ্নের জবাবে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত প্রিয়াংকা চোপড়া বলেন, রোহিঙ্গা শিশুরা এখন মৌলিক শিক্ষা পাচ্ছে। শিশুদের বার্মিজ, ইংলিশ ও গণিত শেখানো হচ্ছে। শিশুদের আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমাদের স্বপ্ন কি? তাদের সবাই বলে ওঠে, আমি স্কুলে যেতে চাই। এ ছাড়া বলে, সে সাংবাদিক হতে চায়। এই শিশুরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুই জানে না। প্রিয়াংকা বলেন, শিশুদের ধর্ম কী, বাবা-মা কে, এদের পরিচয় কী- এগুলো বড় বিষয় নয়। এখন এদের দরকার সবার সহানুভূতি। শিশুদের জন্য নির্ধারিত ক্যাম্প থেকে প্রিয়াঙ্কা বলেন, নড়বড়ে ছোট ছোট ছাউনিতে রয়েছে রোহিঙ্গারা। বর্ষা মৌসুমে এদের জীবনশঙ্কা রয়েছে। প্রিয়াঙ্কা জানান, শুধু রোহিঙ্গা নয়, বিশ্বের সব শরণার্থীদের অবস্থার পরিবর্তনে ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী। তিনি বলেন, সমাজকে রোহিঙ্গাদের প্রতি, বিশেষ করে শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। ইউনিসেফের সঙ্গে ১২ বছর কাজ করে তিনি দেখেছেন, সুবিধাবঞ্চিত শরণার্থী শিশুরা সবচেয়ে বেশি চায় শিক্ষিত হতে। তারা স্কুলে যেতে চায়, লেখাপড়া করতে চায়। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাদের এ সুযোগ করে দেয়াটা দরকার বলে মন্তব্য করেন এ শুভেচ্ছা দূত। প্রায় ১৪ মিনিটের বক্তব্যে প্রিয়াংকা নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর সামনে। এছাড়াও ফেসবুক লাইভে দর্শকদের আরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজে করে সোমবার কক্সবাজার পৌঁছান প্রিয়াঙ্কা। কক্সবাজারের ইনানীর একটি পাঁচ তারকামান হোটেলে উঠেন তিনি। ঐ দিনই বিকাল ৩টার দিকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান প্রিয়াঙ্কা। পরদিন মঙ্গলবার থেকে টানা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়া আসা এবং রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে কাটান এই বলিউড অভিনেত্রী।
×