ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গজারিয়া কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের কাজে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ২৪ মে ২০১৮

গজারিয়া কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের  কাজে অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম ধাপে দেশের একশোটি (১০০টি) উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ এরই অংশ হিসেবে মুন্সীঞ্জের গজারিয়া উপজেলার পুরান বাউশিয়ায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। গত ২৮ মার্চ ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমানে পাইলিং এর কাজ চলমান তবে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সরজমিনে ঘুরেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়, দেখা যায় ভিত্তির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে প্রি-কাস্ট কংক্রিট পাইল। প্রতিটি ফুটিং-এ ব্যবহার করা হচ্ছে তিনটি করে পাইল, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট করে। তবে দেখা যায় ৪৫ ফুট পাইলের কোনটি মাটিতে মাত্র ১৭ ফুট, কোনটি বা ২৪ ফুট বা ৩০ ফুট পুঁতা হচ্ছে। পাইলের বাকী অংশ কেটে উপর থেকে সমান করে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় কাঠামোর স্থায়িত্ব আর কাজের মান দিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এছাড়াও যে পাইল ব্যবহার করা হচ্ছে তাও অনেক নি¤œমাণের যা হাতুড়ির সামান্য আঘাতে মাটিতে ঢুকার (প্রবেশ) পরিবর্তে ফেটে বা ভেঙ্গে যাচ্ছে। পাইলগুলো পরস্পর সমান্তরাল আর সোজা থাকার কথা থাকলেও দেখলে মনে হবে বেকে একটি অপরটির উপরে উঠে গেছে। প্রকৌশলীরা বলছেন, পাইলগুলো মিস গাইডেড হয়েছে এবং পাইলের ড্রাইভ ও প্লেসমেন্ট সঠিক হয়নি। এর উপর নির্মাণ কাজ করলে তা যেকোনো সময় তা ধসে পড়তে পারে। পাইল পুঁতার দায়িত্বে থাকা রাজমিস্ত্রি আমিনুল ইসলাম বলেন, মাটির স্থর অনেক শক্ত হওয়ায় পাইল মাটিতে ঢুকানো যাচ্ছে না। পাইল ভেঙ্গে যাবার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি কোম্পানির ব্যাপার তারা যে পাইল দিয়েছে আমরা তাই দিয়ে কাজ করছি। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কাজ করা কয়েকজন প্রকৌশলীর (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, যে পাইল ব্যবহার করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের আর ৪৫ ফুটের পাইলকে যদি মাত্র ১৭-২৫ ফুট গভীরে পুঁতা হয় তা কোনভাবেই সঠিক পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে না। আর মাটির স্থর শক্তের দাবীর ব্যাপারে তারা বলেন, মাটি পরীক্ষার করে পাইল ডিজাইন করা হয়, মাটি শক্ত হলে তা সয়েল টেস্টের সময় ধরা পড়তো। এ বিষয়ে জানতে সাইট অফিসে গিয়ে নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালী কন্সট্রাকশন লি: এর নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়। তবে সংবাদকর্মীদের উপস্থিততে ক্ষিপ্ত হয়ে সে। সংবাদকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কাজের কোন তথ্য দেওয়া হবে না বলে জানায়। কোন তথ্য দিতে তিনি বাধ্য নন বলে জানান। আর কিছু জানতে চাইলে ঢালী কন্সট্রাকশন লি: এর প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। সর্বশেষ সংবাদকর্মীদের প্রশের মুখে কিছুটা ভীত হয়ে নিজের নামটাও বলেননি ঐ প্রকৌশলী। টানা ২য় দিন সাইট অফিসে গিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: ইউসুফকে পাওয়া যায়। তবে তিনিও নির্মাণ কাজ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। এমত অবস্থায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে, অসাধু ব্যবসায়ী আর প্রকৌশলীদের দুর্নীতির জন্য সরকারের উপরের মহলের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক বিষয়টির সঠিক তদন্তের দাবী করেছেন তারা।
×