ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২৫ মে ২০১৮

সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ

এ বছর অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তরুণ লেখক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’। ফরিদ হাসান প্রবন্ধের চাইতে কবিতা-গল্পই বেশি লিখেন কিন্তু তার পরও তিনি তার প্রথম বই প্রকাশ করতে গিয়ে প্রবন্ধকেই বেছে নিয়েছেন। এটি সাহসী সিদ্ধান্ত বলাই যায়। নানা বিষয়ের প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে বইটিতে। বইটির প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ’। এই স্থান দেয়াতে লেখাটির প্রতি লেখকের দুর্বলতার প্রমাণ মেলে নিঃসন্দেহে। আমরাও তাই এই প্রবন্ধের ওপরই অধিকতর আলো ফেলতে চাই। লেখক সাহিত্যের অনুষঙ্গকে বিভিন্ন ফ্রেমে ফেলে বিশ্লেষণের চেষ্টা চালিয়েছেন। যেমন ভাববাদ ও বস্তুবাদ। এ জন্যে তিনি উদাহরণ টেনেছেন দুই প্রজন্মের দুই কবির দুটি কবিতার চরণ। ‘ভালোবাসো, প্রেমে হও বলী, চেয়ো না তাহারে’। পক্ষান্তরে ‘হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় প্রেমে’। প্রথম চরণ রবীন্দ্রনাথের, দ্বিতীয়টি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর। বিষয়টির ওপর উপন্যাসের প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে লেখক লিখেন, ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের টুনি-মন্তুর প্রেম এক রকম, আবার মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝির কুবের-কপিলার প্রেম ভিন্নতর। রবীন্দ্রনাথের চোখের বালির বিনোদিনীকে এদের সঙ্গে মেলানো যায় না। বঙ্কিমের কপালকু-লার সঙ্গে অন্য কোন প্রেমিকার মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একই সঙ্গে বিশ^সাহিত্যের দিকে তাকালে দেখবো ‘ইলিয়ড’-এর নায়িকা হেলেনের প্রেম পরিণতি এবং তলস্তয়ের আনার চূড়ান্ত পরিণতি পরস্পর বিপরীতমুখী। এই যে নর-নারীর প্রেম, যার মূল এক কিন্তু বিস্তার ভিন্ন ভিন্ন। এ কারণেই প্রত্যেকের লেখার অনুষঙ্গ প্রেম হলেও উপস্থাপন, প্লট ও দর্পণের ভিন্নতায় প্রত্যেকটি রচনা পরস্পর থেকে উজ্জ্বল দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে। ভাববাদ ও বস্তুবাদ ছাড়াও সাহিত্যের অনুষঙ্গ হিসেবে আর অনেক বিষয়-আশয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বা হয়ে থাকে সেদিকটিও লেখক বিভিন্ন উদাহরণ টেনে আমাদের বুঝিয়েছেন। কোন লেখায় গ্রামীণ আবহ আবার কোন লেখায় শহর প্রাধান্য পায় এটি বলেছেন। একই সঙ্গে এও বলেছেন, গ্রামীণ আবহে কবিতা লিখেও দু’জন কবি দুই ধারায় লিখতে পারেন, যেমন জসীম উদ্দীন ও জীবনানন্দ দাশ। লেখক বলছেন, একসময় পাল্কি চড়ে বউ বাপের বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য সত্য হলেও আজকের বাস্তবতায় তা কল্পনামাত্র। সে কারণে সাহিত্যে তা উঠে আসবে না। বিপরীতে আজকের লেখকদের লেখনীতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন শব্দ। যেমন : মোবাইল ফোন, রিংটোন, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি। এভাবেই এক সময় (উল্লেখ্য মধ্যযুগ) দেব-দেবীনির্ভর সাহিত্য রচিত হতো। বর্তমানে তেমনটি দেখা যায় না। এখন বরং মর্তের মানুষর চালচিত্রই উঠে আসছে লেখনীতে। এ রকম আর অনেক তথ্য, উপাত্ত দিয়ে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ’ প্রবন্ধটিকে। অন্যান্য লেখার মধ্যে সমালোচকের দায়বোধ, বাংলা সাহিত্যে প্রেম ও বিবিধ চিন্তা, সাহিত্যে দ্রোহ সাহিত্যে প্রতিবাদ, কবি কিংবা শব্দ শিকারীর পাঠ, যতীন্দ্রমোহন বাগচী শতাব্দীর আলোয় রাখা মুখ, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, বাংলার মোপাসাঁ, আবু ইসহাসের হারেম : সমাজমুখী গল্পের ভুবন, বুকে তাঁর কবিতার জখম ইত্যাদি লেখাগুলোও পাঠকদের ভালো লাগবে বলে আমার বিশ^াস। সাহিত্য ও সাহিত্যকেন্দ্রিক লেখাগুলো ছাড়াও চিত্রশিল্প, নাটক সংক্রান্ত যে কটি লেখা বইটিতে স্থান পেয়েছে সেগুলো ঋদ্ধ লেখা হিসেবেই বিবেচিত হবে, সন্দেহ নেই। এক কথায়, তরুণ হয়েও শিল্প-সাহিত্যের ওপর লেখকের প্রচুর জানাশোনার বিষয়টি এই বইতে স্পষ্ট হয়েছে। পাঠক, বিশেষ করে তরুণ লেখক ও পাঠকরা বইটি পড়ে নানাভাবে উপকৃত ও নিজেদের সমৃদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হবেন বলেই বিশ^াস করি। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
×