ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবনী আক্তার সান

আমি রহস্যময় স্পিনার নই ॥ রশিদ খান

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ৬ জুন ২০১৮

আমি রহস্যময় স্পিনার নই ॥ রশিদ খান

রশিদ খানকে সময়ের সেরা লেগস্পিনারের স্বীকৃতি দিয়েছেন লেগস্পিনের কিংবদন্তি শেন ওয়ার্না। ভারতীয় ব্যাটিংইশ্বর শচীন টেন্ডুলকরের মতে রশিদই টি২০’র সেরা বোলার। র‌্যাঙ্কিংও সেটি প্রমাণ করে। আইপিএলে এবি ডি ভিলিয়ার্স-বিরাট কোহলির মতো বিশ্বখ্যাত ব্যাটসম্যানকেও নাকানি চুবানি খাইয়েছেন ১৯ বছর বয়সী সেনসেশনাল এই আফগান ঘূর্ণিবোলার। ওয়ানডেতে অভিষেকের পর কম সময়ে ১০০ উইকেট ও টি২০তে ৫০ উইকেটের নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তাঁকে নিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে চলছে অন্যরকম এক উন্মাদনা। লেগস্পিনের জাদুতে দ্রুতই আলো ছড়িয়েছেন, জায়গা করে নিয়েছেন অগণিত ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের মনে। রশিদকে রহস্য স্পিনার বলেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তবে, বিরল প্রতিভাধর এই স্পিনার মনে করেন, কোন রহস্য নয়, সবই পরিশ্রমের ফল। সম্প্রতি ভারতীয় এক ওয়েবসাইটে দেয়া সাক্ষাতকারে এমনটাই বলেছেন রশিদ। অনেকে বলেন আপনি রহস্য স্পিনার, কারণ আপনার বল খেলা খুব শক্তÑ এমন প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেন, ‘দেখুন, সত্যি কথা বলতে আমি মনে করি আমার বোলিংয়ে রহস্যময় কিছু নেই। আমি কোন রহস্য স্পিনার নই। বলতে পারেন, আমি এখন যে অবস্থায় আছি তাঁর পেছনে কারণ একটাই – পরিশ্রম। আমি নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরাই। আমি সব সময় নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি উন্নতির কোন সীমা নেই। আমি এখনো নিজের উন্নতির জন্য চেষ্টা করছি।’ আফগানিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ সব স্পিনার আনছে। এর পেছনে কারণ কি?,‘হ্যা, এটা সত্যি যে আফগানিস্তান দারুণ সব স্পিনার আনছে। সব দেশেরই নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব থাকে। যেমন, ভারত থেকে দারুণ সব ব্যাটসম্যান বের হয়। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ইংল্যান্ড থেকে আসে ফাস্ট বোলার। স্পিনাররা আমাদের বিশেষত্ব। এর একটা কারণ হলো দেশে আমাদের মন্থর আর শুকনো উইকেটে খেলতে হয়। ওখানে স্পিনাররা বেশি সহায়তা পান।’ ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়া আফগানরা গত বছর টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে। এ মাসেই ভারতের বিপক্ষে সাদা পোষাকে অভিষেক হতে যাচ্ছে, কতটা এক্সাইটেড? রশিদের উত্তর,‘এটা আফগানিস্তান ক্রিকেটের একটা মাইলফলক হতে যাচ্ছে। আমি যখন থেকে খেলা শুরু করি, তখন বড় পরিসরের ক্রিকেটে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখতাম। হ্যা, এটা সত্যি যে আমরা নিয়মিত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পাই, তবে টেস্ট একটা স্পেশাল ব্যাপার। আশা করি, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা দারুণ উপভোগ্য হবে। সমর্থকরা অবশ্যই দেখবেন।’ প্রতিপক্ষ ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি ম্যাচটায় থাকছেন না। এতে কি ম্যাচটা খানিকটা গুরুত্ব হারাবে?,‘আমরা শুধু নিজেদের ভাল খেলায় ফোকাস করতে চাই। বিরাট কোহলি খেলুক বা না খেলুক, আমার কিছু যায় আসে না। টেস্টে যে কেউ আপনার জন্য কঠিন সময় আনতে পারেন। এখানেই টেস্ট ক্রিকেট অন্য সব ফরম্যাট থেকে আলাদা। আমাদের পুরো মনোযোগ তাই নিজেদের খেলায়, আমরা যে যোগ্য দল হিসেবেই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছি সেটা প্রমাষ করতে চাই। আর ভারত বিরাটকে ছাড়াও খুব শক্ত প্রতিপক্ষ। তাই, লড়াই করার জন্য আমাদের নিজেদের সেরা খেলার কোনো বিকল্প নেই। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। মানুষ মারা যাচ্ছে নির্বিচারে। মাঠে যখন খেলতে নামেন, তখন কখনো কি দেশের কথা মনে পড়ে?,‘কখনো নিজের মনে প্রশ্ন আসে যে আইপিএলের মত একটা হাই প্রোফাইল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলছি, যখন কি না অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছে! তবে, এসব ঘটনা আমাকে আরো পারফরম করতে তাঁতিয়ে তোলে। ভাবি, ভাল করতে পারলে ক্রিকেটে দেশের মানুষের আগ্রহ আরো বাড়বে। এর চেয়ে বেশি কিছু এই ইস্যুতে বলতে চাই না।’ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দারাবাদে মুত্তিয়া মুরালিধরণের মত কিংবদন্তির সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? রশিদের উত্তর,‘যখন উনি আমার অ্যাকশন দেখলেন, বললেন কোনো কিছু বদলোনোর দরকার নেই। শুধু বোলিংয়ের স্পট নিয়ে কথা বললেন। বললেন, যেখানে বলটা ফেলতে চাই, সেদিকে মনোযোগী হতে। আরেকটা কথা বললেন যে যদি কোন ব্যাটসম্যান ছক্কা হাঁকিয়ে ফেলেন তারপরও নির্ভার থাকতে। এমনকি যদি পাঁচ-ছয়টা উইকেট পেয়েও যাই তারপরও যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলি সেদিকে সচেষ্ট হতে বললেন, পরিকল্পনা থেকে সরে যেতে নিষেধ করলেন। উনি আমার সঙ্গে নিজের অসংখ্য অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। বলেছেন, যখন তুমি মানসিকভাবে অনেক শক্ত হবে তখন তুমি অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা সহজেই করতে পারবে। আইপিএলে অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্সের পর অনেকে রশিদকে ভারতের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে নেয়ার আহবান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন আফগান হিসেবে আমি গর্বিত। নিজের দেশের হয়ে খেলব। এবং লড়াই চালিয়ে যাব।’ ওই দাবির পর আফগান প্রেসিডেন্টও বলেছিলেন, ‘রশিদ আমাদের গর্ব। ওর খেলা পছন্দ হওয়ায় ভারতীয়দের ধন্যাবাদ। ধন্যবাদ আইপিএলকেও। এই টুর্নামেন্ট ওকে এত স্কিল দিয়েছে। তবে রশিদ আমাদের ক্রিকেটের জন্য একটা সম্পদ। ওকে কিছুতেই ছাড়ছি না!’ দেরাদুনে প্রথম টি২০তে বাংলাদেশকে হারানোর ম্যাচে ক্রিকেটের ছোট্ট ফরমেটে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন দূরন্ত-দুর্বার রশিদ। ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। সময়ের বিবেচনায় (২ বছর ২২০ দিন) টি২০তে দ্রুততম ৫০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন ১৯ বছর বয়সী এ স্পিনার। আর ম্যাচ খেলার বিবেচনায় (৩১তম টি২০) যা দ্বিতীয় দ্রুততম। টি২০তে ৫০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়ার আগেই ওয়ানডের আরেকটি রেকর্ড ভেঙেছিলেন রশিদ খান। ওয়ানডেতে দ্রুততম ১০০ উইকেটের মালিক তিনি। জিম্বাবুইয়ের মাটিতে গত বিশ্বকাপ বাছাই আসরের আসরের ফাইনালে মাত্র ৪৪ ম্যাচে রেকর্ড একশ উইকেট পেয়েছিলেন এ লেগ স্পিনার। ৫২ ম্যাচে ১০০ ছুঁয়ে আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের।
×