ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দরিদ্র্য অনাহারী থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশ : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ৯ জুন ২০১৮

দরিদ্র্য অনাহারী থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশ : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দরিদ্র্য অনাহারী থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, দেশে এখন কোন অভাব নেই, মঙ্গা উজার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। এটিই টানা দশটি বাজেটের বড় সাফল্য। তিনি বলেন, যারা নির্বোধ ও যাদের দেশপ্রেম নেই, তারাই বাজেটকে ভুয়া বলছেন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করি। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে কম বিনিয়োগ ও রাজস্ব আদায় স্বত্বেও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এটাও এই সরকারের কৃতিত্ব। সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের সম্পদ ব্যবহার এত ভাল যে, অল্প বিনিয়োগে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬ এবং আগামী অর্থবছরে অল্প বিনিয়োগেও সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হবো। তবে অর্থমন্ত্রী এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সরকারের বিকেন্দ্রীকরণে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয় সরকারে বিবর্তন আনতে হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই বিবর্তন এক সময় হবে, এবং ততদিন তিনি বেঁচে থাকবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা বলছেন, এটি গরিব মারার বাজেট কিংবা ভুয়া বাজেট, তারা অর্থহীন কথাবার্তা বলছেন। শুধু তাই নয়, যারা দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তন স্বীকার করে না, তারা মিথ্যা বলছেন। তিনি বলেন, যারা নির্বোধ ও যাদের দেশপ্রেম নেই, তারাই বাজেটকে ভুয়া বলে। ভুয়া বাজেট বলে কিছু নেই। বাজেট যখন দেই, সেটা ভেবেই দেই। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা যা নির্ধারণ করেছি, তা বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করি। তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিটি বাজেটই নির্বাচনি বাজেট। আমি একটি দলের সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সে হিসেবে আমার বাজেট নির্বাচনি বাজেটই হবে। আমি এমন বাজেট দেই যেটা মানুষ পছন্দ করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ আগে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করতেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে ওই সময় বিদেশ যেতে হতো ভিক্ষে করতে। কারণ সেসময় বাজেটের তিনগুন টাকা বিদেশী সহায়তা প্রয়োজন হতো আমাদের। আর এখন, উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে সম্মান দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, ৭০ শতাংশ থেকে দারিদ্র্যের হার এখন মাত্র ২২ শতাংশ। তাহলে দারিদ্র্য কমেনি? এটা কি অর্জন নয়?। তাহলে এটি গরিব মারার বাজেট কিভাবে হয়? সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে ভ্যাট থাকছে না, ব্যাংকি কমিশন করবে নতুন সরকার ॥ অনলাইন কেনাকাটায় কোন ভ্যাট থাকছে না। এটার ছাপার ভুল বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তবে গুগল ও ইউটিউবে কর বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংকিং কমিশনের কাগজপত্র তৈরি করা আছে। আগামী বছর নতুন সরকার এসে এ সংক্রান্ত বাকি কাজ এগিয়ে নিবেন। তিনি বলেন, পরবর্তী সরকারের কাছে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় ব্যাংক কমিশন গঠনের ব্যাপারে। এর আগে ব্যাংক কমিশন করার কথা তিনি একাধিকবার বলেছেন। বাজেটের পরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। বিষয়টি তুলে ধরলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক সংস্কারে কোনো কমিশন করছি না। সব কাগজপত্র তৈরি করছিলাম। এটা পরবর্তী সরকারের কাছে দিয়ে যাব। তারা এটা করবে। সঞ্চয়পত্র নিয়ে বাজেটে কোনো বক্তব্য না থাকার ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি (সঞ্চয়পত্রে) যে মুনাফা পাওয়া যায় সেটা নিয়ে সভা দিয়েছিলাম, সভা করতে পারিনি। সবশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সবধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেনি। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দুই-তিন বছর পর পর পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে মুহিত বলেন, এবার একটু দেরি হয়েছে, পরের মাসে রিভিউ হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ভার্চুয়াল বিজনেস যেমন ইউটিউব, ফেইসবুক এগুলোর উপর ট্যাক্স ধার্য করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু অনলাইন বিজনেস আমরা আলাদা করেছি, এটার ওপর ভ্যাট বসাইনি। তিনি বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পণ্য বা সেবার পরিসরকে আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল বিজনেস নামে একটি সেবার সংজ্ঞা সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে আছে। এরপরও আগামী বাজেটে প্রয়োজনে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হবে। বৈদেশিক ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অনেক ভাল। ঋণ এনে তা বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ঋণ করে ঘি খাইনি। ঋণের টাকা উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করা হয়েছে। অর্থসচিব বলেন, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে নেয়া হবে।
×