ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার সম্পুরক বাজেট পাস

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ১১ জুন ২০১৮

সংসদে ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার সম্পুরক বাজেট পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদে বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পুরক বাজেট সোমবার কন্ঠভোটে পাস হয়েছে। এ বাজেট পাসের মধ্যে দিয়ে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে জাতীয় সংসদ। এই অর্থ অনুমোদনের জন্য ২২টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে চারটি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুত ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে দেওয়া হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবই কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্টকরণ (সম্পুরক) বিল ২০১৮ কন্ঠভোটে পাস হয়। সম্পুরক বাজেট পাস শেষে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করেন। গত অর্থবছর শেষে ২২ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাজেটের চেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কেবলমাত্র তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিত্রে সোমবার সংসদে এই সম্পুরক বাজেট পাস হয়। সম্পুরক বাজেটের ওপর মোট ২২টি দাবির বিপরীতে মোট ১৭৩টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। ব্যয় বরাদ্দের বিরোধীতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সেলিম উদ্দিন, বেগম রওশন আরা মান্নান, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর ও নূরুল ইসলাম মিলন। সম্পুরক বাজেটের আওতায় ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বিদ্যুত জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। এর পরেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাত। এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিন হাজার তিনশ ৪৭ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সবচেয়ে কম ৪ কোটি এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। এছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্যান্য মন্ত্রনালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে এক হাজার আটশ ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগে এক হাজার ১৮২ কোটি ৬৪ লাক ৫০ হাজার টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগে এক হাজার ১০৯ কোটি ১১ লাখ এক হাজার টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৬৫৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৪৭১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ খাতে ৩১১ কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১৯৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় খাতে ১৭৩ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগ খাতে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এদিকে সম্পুরক বাজেট পাসের আগে এ নিয়ে আলোচনা করেন সরকারি ও বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। এর মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের কড়া সমালোচনা করেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তারা বলেন, যখন বাজেট করা হয় তখন কোন হিসাব করে করা হয়েছিলো। কারা সেসময় বাজেট তৈরি করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধীতা ॥ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৪৭১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধীতা করেন বিরোধী দলীয় এমপিরা। তাঁরা বলেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যেটা বন্ধ করা যায়নি। অথচ প্রতিবছর এই মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত দেয়া হয়ে থাকে। এবার অতিরিক্ত বরাদ্দ মঞ্জুর না করার দাবি জানান তারা। বিরোধী দলের এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, দেশে সুশাসনের ওপর নির্ভর করে দেশ এগিয়ে যায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে দেশ এগিয়ে যাবে। জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, সরকারের রুপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। আর এজন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ মোটেও অয্যেক্তিক নয়। তাই আপত্তি প্রত্যাহার করে সম্পুরক বরাদ্দের প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানান তিনি। স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজ নিয়ে অসন্তোষ ॥ স্থানীয় সরকার বিভাগে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া এক হাজার আটশ ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বিরোধীতা করে বিরোধী দলের এমপিরা বলেন, এ খাতে টাকা আরও বেশি বরাদ্দ দেয়া হোক। এ নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু টাকা নিয়ে সুষম কাজ করা হয় না। সঠিকভাবে যেনো সব কাজ করা হয় সে প্রত্যাশা করি। এমপিদের এসব অসন্তোষের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। এ কারণে পানির লাইনে নানা ধরনের কাজ করা হচ্ছে। আমি প্রত্যাশা করছি আগামী ২ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরে আর কোন ধরনের জলাবদ্ধতা থাকবে না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। বিদ্যুত বিভাগ নিয়ে আপত্তি ॥ বিদ্যুত জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যুত বিভাগ খাতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দের বিরোধীতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৮ এমপি। ছাঁটাই প্রস্তাবকারী এমপিরা বলেন, চলতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু বাকি আছে আর মাত্র কয়েক দিন। সরকার এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য খরচ হয় হয় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। এবার কিছু টাকা পেয়েছি। আশা করি এ খাতে কিছু গতি সঞ্চার হবে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সংযোগ দিতে আরও অন্তত কয়েক বছর লাগবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকে বিদ্যুত বিভ্রাট আর লোডশেডিংয়ে এক করে ফেলেন। ট্রান্সমিটারের সমস্যার কারণে অনেক সময় বিদ্যুত বিভ্রাট হয়ে থাকে। এটাকে অনেকে লোডশেডিং বলে থাকেন। দেশের জনগণ ও জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগ ॥ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তাঁরা বলেন, এখন অনেকইে বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছেন। নিশ্চয় আমরা তাদের দেশে ধরে রাখার চেষ্টা করবো। এসময় প্রাইভেট হাসপাতালের অথরিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁরা বলেন, কোন কিছু যাচাই-বাছাই না করেই এসব হাসপাতালের লাইসেন্স দেয়া হয়। এটা খবরদারি ও নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবেশি অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছি আমরা। কমিউিনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যে সাফল্য পেয়েছি তা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর হয়েছি বলে অনেক অনিয়ম রুখতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। যে কোন নিয়োগ বদলী ও কেনাকাটার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। এখানে কারও একার সিদ্ধান্তে কিছু করা হয় না। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই ৫ থেকে ৬ হাজার ডাক্তার নেবো। আশা করি নির্বাচনের আগেই তাদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। তখন আর গ্রামে গঞ্জে ডাক্তার নিয়ে সমস্যা হবে না। তিনি স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোড়গড়ায় পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী জানান অর্থমন্ত্রীর কাছে।
×