ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবচয় সুবিধা হ্রাস করায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বাড়বে

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ১১ জুন ২০১৮

অবচয় সুবিধা হ্রাস করায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবচয় সুবিধা কমিয়ে নতুন গাড়ির চেয়ে পুরনো গাড়ি আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে। এতে করে ১ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাবে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম। অন্যদিকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বাড়ানোর ফলে নিম্নমানের নতুন গাড়ির বাজার তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি সেটা হয়, তাহলে তা পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা দেশে বেড়ে যাতে পারে। এলক্ষ্যে নতুন-পুরাতন গাড়ির শুল্ক বৈষম্য দূরীকরণে ইয়োলো বুকের নতুন মূল্য হতে ডিলার, ট্রেড ডিসকাউন্ড বাবদ ১০ শতাংশ বিয়োজন পূর্বক বছরভিত্তিক অবচয়ের হার পূর্ববর্তী অবস্থায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস্ ইম্পোর্টার্স ডিলারস এ্যাসোসিয়েশন-বারভিডা’র পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ শরীফ, আনোয়ার হোসেন ও আবদুল মান্নান চৌধুরী খসরু ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, নতুন গাড়ি আমদানিতে কর ফাঁকিতে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি অনেক কমে গেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, কোন অবস্থাতেই নতুন গাড়ির শুল্ককর রিকন্ডিশন গাড়ির চেয়ে কম হতে পারেনা। অথচ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনাও নিদারুণভাবে উপেক্ষিত। তিনি বলেন, জনবান্ধব সরকারের কাছে আমরা ভোক্তা প্রিয় নিরাপদ টেকসই ও সঠিক রাজস্ব প্রদানকারী গাড়ি হিসাবে রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানি, বিপনন ও ব্যবহারের আরও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড উপযোগী করতে একটি স্থিতিশীল ও গ্রহণযোগ্য শুল্ক নীতিমালার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বারভিডা সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয় সুবিধা হ্রাস করায় ধনীরাই উপকৃত হবেন। মধ্যবিত্তদের গাড়ির দাম আরও বাড়বে। তিনি বলেন, নতুন গাড়ির সম্পূরক শুল্কে হাত দেয়া হয়নি। কিন্তু রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এ বাজেটে কোন সুসংবাদ নেই। নতুন গাড়ির শুল্ক পুরাতন গাড়ির চেয়ে কম হতে পারেনা, অর্থমন্ত্রী এটা নিজে বলেছেন, কিন্তু সেখানেও এনবিআর তা বাস্তবায়ন করেনি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিকন্ডিশন গাড়ির শতভাগ জাপান থেকে আসে। ২ থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার ব্যবহারের পর অনেকেই তা বিক্রি করে দেয়। আমরা ৩ বছরের অবচয় সুবিধা পাই, ২ বছরের পাইনা। উদাহরণস্বরূপ ১৫০০ সিসি’র ২০১৭ সালে তৈরিকৃত ও ব্যবহৃত একটি টয়োটা এক্সিও গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্ক ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং ২০১৮ সালে তৈরিকৃত একই নতুন বা ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির শুল্ক ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাছাড়া ২০০০ সিসি’র ২০১৭ সালে তৈরিকৃত রিকন্ডিশন মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার জিপের শুল্ক ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এদিকে, ২০১৮ সালে তৈরিকৃত একই নতুন গাড়ির শুল্ক কর ২৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৩ টাকা। সংগঠনটিন সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ শরীফ বলেন, পুরাতন গাড়ির শুল্ক কখনো নতুন গাড়ির চেয়ে বেশি হতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক বৈষম্য হ্রাস করার দাবি রয়েছে আমাদের। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুষ্পষ্ট দিক নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু তারপর কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, এ বছর অবচয়ন সুবিধা ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে পুরাতন গাড়ির দাম বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্তের উপর। পুরাতন গাড়ির ক্ষেত্রে অবচয়ন সুবিধা কমিয়ে আনতে আনতে এখন ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে পুরাতন গাড়ির আমদানিকারকদের ব্যবসা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পাস হওয়ার আগে নতুন-পুরাতন গাড়ির শুল্ক বৈষম্য নিরসন করার দাবি জানাচ্ছি।
×