ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১২ জুন ২০১৮

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

অনলাইন রিপোর্টার ॥ শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন এবং সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। গত ২০ মার্চ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দেওয়া তিতাসের এই মূল্যবৃদ্ধি প্রস্তাবের ওপর মঙ্গলবার গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। তিতাসের প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান বিতরণ চার্জ ইউনিট প্রতি দশমিক ২৩১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে দশমিক ৪৯৮৭ টাকা করা হোক। এই হিসাবে গ্যাসের বিতরণ চার্জ ভারিত গড়ে ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানি। তবে আবাসিকে গৃহস্থালি কাজে এবং বাণিজ্যিক সংযোগে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা এই প্রস্তাবে বলা হয়নি। তাদের প্রস্তাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার ৩ টাকা ১৬ পয়সার পরিবর্তে ১০ টাকা (২০৬ শতাংশ), সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার ২ টাকা ৭১ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৮০ পয়সা (৩৭২ শতাংশ), সিএনজি ফিলিং স্টেশনে প্রতি ঘনমিটার ৩২ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা (২৫ শতাংশ), ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৬২ পয়সার পরিবর্তে ১৬ টাকা (৬৬ শতাংশ) এবং শিল্পে প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৭৬ পয়সার পরিবর্তে ১৫ টাকা (৯৩ শতাংশ) করার কথা বলা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা ০৪ পয়সা দরে চলমান বাণিজ্যিক সংযোগ এবং গৃহস্থালিতে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ১০ পয়সা দরে চলতে থাকা মূল্যহার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে কোম্পানিটি। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজার (আইওসি) থেকে কেনা গ্যাসের দাম বৃ্দ্ধি, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব চাহিদা বৃদ্ধি ও উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানির কথা বলেছে তিতাস। এছাড়া আয়কর দায়, উৎসে কর কর্তনের কারণে তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি, কোম্পানির মূলধন বিনিয়োগের তুলনায় স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং লভ্যাংশের পরিমাণ কমে যাওয়াকে কারণ দেখিয়েছে তারা। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, “তিতাস রেগুলেটরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই ঋণ দিয়ে যাচ্ছে, উদ্বৃত্ত অর্থ খরচ করে ফেলেছে। এখন নিজের সঙ্কট দেখিয়ে মার্জিন বাড়াতে চাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি।“কূপ খনন বাবদ তারা বাপেক্সকে যে ১৩০ কোটি টাকা দিয়েছে বলে আমরা শুনেছি, তাকি আর কখনও ফেরত আনা সম্ভব? তাহলে এই টাকাগুলো কার নির্দেশে হাতছাড়া করা হল?” তিতাসসহ বিদ্যুৎ-জ্বালানির কোম্পানিগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রভাব থাকায় এগুলোতে বরাবরই ‘স্বার্থের সংঘাত’ রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। শামসুল আলম বলেন, তিতাস থেকে আবাসিকে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই বছরেও সেটা সম্ভব হয়নি।“এর পেছনে একটা অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে চুরি। প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি।” ভোক্তাদের পক্ষে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, “আবাসিকে কী পরিমাণ গ্যাস খরচ হয় তার হিসাব অসচ্ছ। কিন্তু তিতাস এই বিষয়ে একেবারেই নির্লিপ্ত।”তিতাসের পাইপলাইনে লিকেজের কারণে অনেক জায়গায় দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ঘটলেও তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না থাকাকে ‘অমানবিক’ আখ্যায়িত করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্বের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, “প্রতিবছর গড়ে একটা করেও কূপ খনন করতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন সঙ্কট দেখিয়ে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকছে।“এটা কোনো সমাধান নয়। আমরা নিজেদের সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত না করে আমদানির দিকে ঝুঁকছি।” আরও এলএনজি আমদানি করতে সরকারের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে কূপ খননের দিকে মনযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “কিছু ব্যক্তির স্বার্থে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। অন্যদিকে ২৬টি ব্লক চিহ্নিত করা হলেও সেখানে কূপ খনন কাজ বন্ধ আছে।”
×