ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু বিপর্যয় থেকে রক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১৪ জুন ২০১৮

পরমাণু বিপর্যয় থেকে রক্ষা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে পিয়ংইয়ং সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বুধবার এ খবর দিয়েছে। বৈঠক সফলভাবে আয়োজিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘পরমাণু বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বিশ্ব’। এএফপি ও বিবিসি। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে দুই নেতার বৈঠকের পর টুইটারে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ‘বিশ্ব পরমাণু বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে’। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করা বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এ বিষয়ে দুই নেতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। উত্তর কোরিয়া পরমাণু কর্মসূচী পুরোপুরি ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিধি নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পিয়ংইয়ং পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী চালিয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়ার হাতে যে ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা যুক্তরাষ্ট্রের মূলখ-ে আঘাত হানতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে বহু প্রত্যাশিত এ বৈঠকে যাবেন না বলেও ট্রাম্প কয়েক মাস আগে বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুই নেতা বৈঠকে বসেন। উনের সঙ্গে বৈঠকটি যে ঠিক ট্রাম্পের পছন্দমতো হয়েছে সেটি বৈঠক পরবর্তী তার টুইট থেকে স্পষ্ট জানা গেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আর কোন রকেট ছোড়া, পরমাণু পরীক্ষা বা গবেষণা নয়। জিম্মিরা ( জাপানের পুরনো ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে) পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। ধন্যবাদ চেয়ারম্যান কিম। আমাদের দুজনে মিলে একটি ঐতিহাসিক দিন কাটিয়েছি।’ যৌথ ঘোষণায় উত্তর কোরিয়া পরমাণু কর্মসূচী পুরোপুরি ত্যাগ করতে রাজি হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। দাবিটি ওয়াশিংটন যেভাবে চেয়েছিল পিয়ংইয়ং সেভাবে মেনে নিয়েছে। পিয়ংইয়ং এমনভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ হবে যার ‘সঠিকতা নিরূপণযোগ্য হবে’ এবং পরবর্তী সময়ে পরমাণু স্থাপনাগুলো আর কখনও ‘ব্যবহার উপযোগী থাকবে না’। বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম কেসিএনএ বলেছে, ‘দুই নেতা একটি ঐতিহাসিক বৈঠকে বসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া শত্রুতা যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগে পা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে যে, দ্ইু নেতা পরস্পর পরস্পরের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং উভয় নেতা একে অন্যের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়া বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি মহড়া বাদ দেয়ার কথা বললেও মিত্রদের ‘লৌহবর্ম’ নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকার কথা নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন। ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য ‘বড় ধরনের ছাড়’ বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। ট্রাম্পের এ ঘোষণা এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, তারা ট্রাম্পের ঘোষণার ‘সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য’ খতিয়ে দেখছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে ২০ মিনিট কথা বলেন। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে কোরিয়ায় সামরিক মহড়ার বিষয়ে কোন কথা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। ট্রাম্প এ কথাও বলেছেন তিনি মার্কিন সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নিতে চান। তবে ঠিক কমে নাগাদ তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয় হবে তার কোন সময়সূচী তিনি দেননি। দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি। যাতে সার্বক্ষণিকভাবে প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য থাকে বলে ধারণা করা হয়। দুই দেশের নিয়মিত বার্ষিক মহড়াকে পিয়ংইয়ং ‘আগ্রাসনের প্রস্তুতি’ অভিহিত করে বার্ষিক এ মহড়া বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। অন্যদিকে এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া এ সামরিক মহড়াকে ‘প্রতিরক্ষামূলক’ অ্যাখ্যা দিলেও মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সেখান থেকে সরে আসেন। তিনি যুদ্ধ মহড়াটিকে উত্তর কোরিয়ার জন্য ‘উস্কানিমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেন। ট্রাম্প বলেন ‘এটি বাতিলের ফলে আমাদের বিশাল পরিমাণ অর্থ বাঁচবে’। ধারণা করা হচ্ছে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ দক্ষিণ কোরিয়া এখনও এ বিষয়ে নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বার্ষিক মহড়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করে জাপান। জাপানও একতরফাভাবে মহড়া বন্ধের ঘোষণায় উদ্বিগ্ন।
×