ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মসুলে স্বজনের সন্ধান পেতে মরিয়া নারীরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৪ জুন ২০১৮

মসুলে স্বজনের সন্ধান পেতে মরিয়া নারীরা

ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের কাছ থেকে গত জুলাইয়ে মসুল দখলের পর থেকে নারীরা প্রতি শুক্রবার জড়ো হচ্ছেন এ ইরাকী শহরের আল মিনাসা স্কয়ারে। তারা মরিয়া হয়ে এখানে আসছেন তাদের স্বামী ও ছেলেদের পরিণতি জানার জন্য। খবর এএফপির। কালো পোশাকে আবৃত হয়ে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে তারা তাদের নিখোঁজ আত্মীয় স্বজনদের ছবি আন্দোলিত করছেন। কারও কারও আশঙ্কা তাদের স্বামী-পুত্ররা আইএসের বর্বর হামলার শিকার হয়েছেন। তারা আইএসের কাছে বন্দী ছিল অথবা জঙ্গী সংগঠনটির জন্য কাজ করতে তাদের বাধ্য করা হয়েছিল। তাই অনেক মা ও স্ত্রীর আশঙ্কা রয়েছে। সরকার রয়েছে নীরব। ৮০ বছর বয়স্ক উম আবদুল্লাহ তার ছেলের নিখোঁজে তিক্ত যন্ত্রণায় ভুগছেন। তিনি বলেন, তারা আজ মুক্ত হলেও এবং ক্ষতিপূরণ পেলেও ভোগ করছেন কারা যন্ত্রণা। তার আশঙ্কা, ইরাকী বাহিনী আইএসকে মসুল থেকে বিতাড়িত করার ১২ মাস পর তার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হবে। জিহাদীরা ২০১৪ সালে এক হাল্কা অভিযানের পর যখন মসুল দখল করে তখন নিরাপত্তা বাহিনী বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কর্মে নিয়োজিত লোকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। একটি স্বপক্ষ ত্যাগী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের অনেককেই প্রকাশ্যে অনুশোচনা করতে হয়েছে এবং আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়েছে। আর মিনাসার নারীরা প্লাজা ডি মায়োর মাদের সঙ্গে তুলনীয়। প্লাজা ডি মায়োর মায়েরা অক্লান্তভাবে চেষ্টা করেছেন তাদের ছেলেদের জন্য ন্যায়বিচার পেতে। আর্জেন্টিনার সামরিক জান্তার শাসনকালে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩তে ওই ছেলেরা নিখোঁজ হয়ে যায়। স্কয়ারে ৩৮ বছর বয়স্ক গৃহকর্ত্রী শাইমা মনে করেন, তিনি জানেন, তার পুলিশ স্বামীর কী ঘটেছে। শাইমা বলেন, জিহাদীরা ২০১৬-এর নবেম্বরে তাদের পারিবারিক বাসস্থানে অভিযান চালায় এবং তার স্বামীকে অপহরণ করে। তার সহকর্মীদের অনেকেই এমন ঘটনার শিকার হন। তিনি বলেন, ইরাকী সৈন্যরা মসুল পুনর্দখলের লড়াই শুরু করলে অন্যদের সঙ্গে তাকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে পরিচিতি পত্র না থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আইএসের হাতে বন্দী থাকার সময় তার ঘন দাড়ি গজায়। ৬ সন্তানের জননী অশ্রু সংবরণ করতে করতে এ কথা বলেন । বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি মার্চে মসুল পরিদর্শনের সময় এ নারী তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাদের লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এএফপিকে বলেছেন, মসুলে গ্রেফতারকৃতদের পরিবারগুলোকে সংশ্লিষ্ট বিষয় অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু শাইমা বলেন, তাকে কিছুই জানানো হয়নি। তিনি অন্যভাবে জেনেছেন যে তার স্বামীকে বাগদাদের আল-মুথানা বিমান সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দরে আটক রাখা হয়েছে। ৫৬ বছর বয়স্ক বেকার আবু লুয়ে এসেছেন তার নিখোঁজ দুই ছেলের সন্ধানে। ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর তাদের বাড়ি থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে যায় আইএস। এ ছেলেরা তারপর আর ফিরে আসেনি। আবু লুয়ে বলেন, কয়েক মাস খোঁজাখুঁজির পর আমরা নিশ্চিত হয়েছি, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তারা আটক রয়েছে। আইএস যাদের আটক করেছিল তারা জঙ্গীদের বর্বরতা থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের অনেককেই হত্যা করেছে আইএস এবং তাদের লাশ কাফসা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী সামি ফয়সল এক এলাকার উল্লেখ করে এ কথা বলেন।
×