ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব শান্তির পথে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৫ জুন ২০১৮

বিশ্ব শান্তির পথে

ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়ে গেল এই ভূম-লে। দুই বিরোধী শক্তি একটি সমঝোতায় এসে উপনীত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভুবনজুড়ে শান্তির আলোক রেখা উন্মিলিত হওয়ার দিগন্ত উদ্ভাসিত হলো। এ যেন সেই ‘আলো হাতে আসিয়াছে আধারের যাত্রী’। দুটি দেশ সামরিক হামলার হুমকি-ধমকির অবসান ঘটিয়ে পৌঁছে গেল শান্তি প্রতিষ্ঠার সমঝোতায়। বিশ্ববাসী এমন দৃশ্যই প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছিল। সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের মধ্যে বৈঠক অকল্পনীয় এবং অভাবিত হলেও সম্পন্ন হয়েছে। যৌথ ঘোষণায়ও সই করেছেন দু’নেতা। বহু কাক্সিক্ষত ও ঐতিহাসিক এই শীর্ষ বৈঠক মানব জাতির জন্য এক শুভ সংকেত বৈকি। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার যে দামামা অশনিসঙ্কেত হয়ে মানব জাতির বিপর্যয়ের পথকে করেছিল ত্বরান্বিত, সেই অবস্থান লুপ্ত হবার সম্ভাবনা এই বৈঠক থেকেই শুরু হলো। পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়া যখন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ঘোষণা দিল। বিশ্ববাসীর মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল যেন। মার্কিন যুুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে স্বাভাবিক পথ ও পন্থা বেছে নেবেন। তা নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা দূরীভূত হলো। দুই নেতা এখন নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করতে সম্মত হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধেরও অবসান হলো। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা নিরসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে এ বৈঠক। বৈঠক শেষে দুই নেতার হাসিমুখে বেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী শান্তির যে বার্তা পেয়েছে, তা প্রবাহিত হোক অন্য দেশগুলোতেও। চুক্তিসই অত্যন্ত গুরুত্ববহ শুধু দেশ দুটির জন্যই নয়, বিশ্বের জন্যও। দুই নেতার বৈঠক ও চুক্তিসই এরপর এই উত্তেজনার অবসান হবে বলে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা। এই বৈঠকে আরও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির সমাধান হয়েছে তা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চলা যৌথ সামরিক মহড়া যুক্তরাষ্ট্র স্থগিত করবে। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, এই মহড়া খুবই উস্কানিমূলক। এবং খুবই ব্যয়বহুলও। তার এই উপলব্ধি বিশ্ব শান্তির পক্ষে পথযাত্রা বলে মনে করি। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত বত্রিশ হাজার মার্কিন সেনাকে ফেরত নেবার ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কিমের মতো বিশ্ববাসীও মনে করে, অতীত পেছনে ঠেলে ঐতিহাসিক যে নথিতে দুই শীর্ষ নেতা সই করেছেন তা বিশ্বে একটি ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করবে। অবশ্য এই বৈঠক পর্যন্ত আসা দু’দেশের পক্ষে মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। অতীত পুরনো কুসংস্কার ও চর্চা এতকাল বাধা হিসেবে কাজ করেছে। এই বৈঠক সেই সব বাধাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। কোরীয় উপদ্বীপ এখন যেমন একটি নতুন পথ খুঁজে পাবে, তেমনি যুদ্ধ ও সংঘাতের অন্ধকার দিনগুলো পেছনে ফেলে সহযোগিতা ও শান্তির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। সত্তর বছরের বিভেদ ও শত্রুতা যে কোলোছায়ার সৃষ্টি করেছিল, তার চির অবসান হতে যাচ্ছে। চীন, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলো এই বৈঠকের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বলা যায়। এতদিন পশ্চিমা বিশ্বের চাপে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে থাকা উত্তর কোরীয় নেতা অবশেষে এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ের নেতার স্বীকৃতি আদায় করতে পেরেছেন, একই সঙ্গে শর্তহীনভাবে পরমাণু প্রকল্প ত্যাগের চাপ হতেও যুক্তরাষ্ট্রকে সরাতে পেরেছেন। নিজ দেশে নানা কারণে বিতর্কিত ও সমলোচিত ট্রাম্প এই প্রথম একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে নিজেকে নিতে সক্ষম হয়েছেন। আলোচনার মধ্য দিয়ে যে কোন কঠিন সমস্যার যে সমাধান সম্ভব, দুই ‘লড়াকু’ শীর্ষ নেতা তা প্রমাণ করেছেন। একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে দুই নেতা যদি এই ধারাকে বহাল রাখতে পারেন সব ক্ষোভ, তবে বিশ্ব শান্তির ক্ষেত্রগুলো আরও সম্প্রসারিত হবে। বিশ্বজুড়ে শান্তির পতাকা উড়তে থাকুক।
×