ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউইয়র্কে ক্যাবচালকের আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৭ জুন ২০১৮

নিউইয়র্কে ক্যাবচালকের আত্মহত্যা

অনলাইন ডেস্ক ॥ নিউইয়র্ক নগরীতে আরেকজন ক্যাবচালক আত্মহত্যা করেছেন। আবু সালেহ (৫৯) নামের এ ক্যাবচালককে ১৫ জুন নগরীর ব্রুকলিনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ঝোলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। ইয়েমেন থেকে আসা এ অভিবাসী ৩০ বছর ধরে নগরীতে ক্যাব চালাচ্ছিলেন। পেশাগত সংকট আর অর্থনৈতিক টানাপোড়নে গত নবেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ছয়জন ক্যাবচালক আত্মহত্যা করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নগরীর ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশন প্রধানের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে কংগ্রেসম্যান এড্রিয়ানো এসপায়লেট। পেশাগত সংকটে পড়া ক্যাবচালকদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য হটলাইনও খোলা হয়েছে। আত্মহত্যা থেকে রক্ষার জন্য জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ লাইফলাইনে ফোন দেওয়ার জন্যও ক্যাবচালকদের অনুরোধ জানানোও হচ্ছে। উবার, লিফটসহ অ্যাপভিত্তিক ক্যাব সড়কে নামার ফলে নিউইয়র্ক নগরীতে ক্যাবচালকদের দুর্দশা নেমে আসে। ক্যাবচালক আগে ১০ ঘণ্টার শিফটে কাজ করে ৫০০ ডলার দিনে আয় করতে পারতেন। কিন্তু উবার বা লিফট সড়কপথে দখল নেওয়ার পর তাঁদের আয় দ্রুত কমতে থাকে। এখন ক্যাবের পেশাদার চালকেরা দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করেও লিজের অর্থ তুলতে পারেন না। নিউইয়র্কে হলুদ ক্যাবে দুই ধরনের চালক আছেন। একদল ক্যাব চালনার জন্য মেডেলিয়ান ভাড়া গ্রহণ করেন। তাঁদের ব্যবসাও মন্দা। অন্য দল জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে মিলিয়ন ডলার দিয়ে মেডেলিয়ান কিনেছিলেন। এখন মেডিয়ান মূল্য নেমে এসেছে দুই লাখ ডলারের নিচে। এদের মেডেলিয়ান বিপরীতে পাঁচ-ছয় লাখ ডলারের ব্যাংকঋণ রয়েছে। ফলে ক্যাবচালকেরা ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও ব্যাংকের ঋণ ও সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেকেই ব্যাংক ঋণের বোঝা সামাল দিতে গিয়ে বাড়িঘর খুইয়েছেন এরই মধ্যে। অ্যাপভিত্তিক ৭০ হাজার গাড়ির দাপটে বেকার হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার হলুদ ট্যাক্সিক্যাবের চালক। সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকগুলো ক্যাবচালকদের বাড়িঘর নিলামে তুলে দিচ্ছে। অ্যাপভিত্তিক যাত্রী বাহন সার্ভিস উবারের সবচেয়ে বড় বাজার নিউইয়র্ক শহর। এ শহরে উবারের তথ্যমতে, প্রতি সপ্তাহে নতুন ৩০ হাজার মানুষ অ্যাপ ডাউনলোড করে তাদের সার্ভিস নিচ্ছে। তাই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে উবার ট্যাক্সির সংখ্যা। ২০১১ সালে নিউইয়র্কে মাত্র ১০৫টি গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল উবার। ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজারে। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক শহরে ৩৮ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি টিএসসি (ট্যাক্সি সার্ভিসেস কমিশন) লাইসেন্স নিয়েছিল। ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ হাজারে। সেই বৃদ্ধির ক্রম হার এখনো অব্যাহত। সে কারণে কালো, সবুজ ও হলুদ ট্যাক্সির চালকদের অনেকেই এখন উবারে চলে এসেছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির হাজারো ট্যাক্সি ক্যাবচালক এখন উবারের দিকেই ঝুঁকছেন। একের পর এক ট্যাক্সিক্যাবের চালকদের আত্মহত্যায় টানা আন্দোলনে নেমেছে ট্যাক্সি ওয়ার্কার অ্যালায়েন্স। সংগঠনের পরিচালক ভৈরবী দেশাই বলেছেন, অবিলম্বে নিউইয়র্কের ক্যাবচালকদের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে নগর কর্তৃপক্ষ নজর না দিলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। ট্যাক্সি অ্যালায়েন্স দাবি জানাচ্ছে, নগরীতে ক্যাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হোক। ভাড়ায় সমতা আনা হোক। নগরের নিজস্ব আইকন হলুদ ট্যাক্সি বাঁচিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হোক। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া ব্যাংক বা ঋণদাতাদের অর্থ আদায়ে কড়াকড়ি না করে কিস্তি সহজ এবং সুদ মওকুফ করা হোক। নগরীর ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশন থেকে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, আবু সালেহর মৃত্যু দুঃখজনক। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা ক্যাবচালকদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য ৭১৮-৩৯১-৫৫৩৯ ফোন নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। নিজে বা পরিচিত কেউ আত্মহত্যাসংক্রান্ত দুর্ভাবনায় ভুগলে জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ লাইফ লাইনের ১-৮০০-২৭৩-৮২৫৫ নম্বরে ফোন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একের পর এক ট্যাক্সিচালকের আত্মহত্যার পর নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষকে। নিউইয়র্ক টাইমস গত ১ মে এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদে বলেছে, নিউইয়র্কে উবার ও লিফটের লাইসেন্স প্রদান সীমিত করার কথা ভাবছেন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। এর মধ্যেই নগরীর ১৪ হাজার হলুদ ট্যাক্সি আপাতত আর বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হলুদ ট্যাক্সিচালকদের সংকট কাটানোর জন্য উপায় খুঁজছেন নগরীর মেয়র ডি ব্লাজিও এবং অন্য আইনপ্রণেতারা। আবু সালের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিউইয়র্কে ক্যাবচালক পেশাজীবীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল সকালেই হাজারো ক্যাবচালক আবু সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের পাশে ভিড় করেন। আবু সালেহর সহকর্মী ইশ্রাত চৌধুরী বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে আবু সালেহ ব্যয় সামাল দিতে পারছিলেন না। দেশে পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাতে হতো তাঁকে। গাড়ি বন্ধকের অর্থ তাঁর বাকি পড়ে যেত। আরেক সহকর্মী বলেছেন, সম্প্রতি আবু সালেহ পেশাগত সংকটের চাপে নেশা করতে শুরু করেন। ক্যাবচালকেরা আবু সালেহকে স্মরণ করে শোকসমাবেশ করেছেন ব্রুকলিনে। নগর ভবনের সামনে সভার ডাক দেওয়া হয়েছে ট্যাক্সি ওয়ার্কার অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে। ১৬ জুন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান এড্রিয়ানো এসপায়লেট এক বিবৃতিতে নগরীর ট্যাক্সি ও লিমোজিন কমিশনের প্রধান মীরা জোশিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে এড্রিয়ানো এসপায়লেট বলেন, মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। কঠিন কর্মপরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে ক্যাবচালকেরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। এড্রিয়ানো এসপায়লেট আরও বলেন, ‘কমিশনার মীরা জোশি, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।’ তিনি নগরীর ট্যাক্সিক্যাব এবং চালক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছেন। অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করে এবং বাস্তবতার বাইরে ট্যাক্সি ম্যাডেলিয়নের মূল্য নির্ধারণ করে পরিস্থিতিকে নাজুক করা হয়েছে।
×