ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছুটি শেষেও ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা

প্রকাশিত: ০১:২১, ১৮ জুন ২০১৮

ছুটি শেষেও ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদের তিনদিনের ছুটি শেষ হলেও ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা। বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ মুদিপণ্যের দোকান। বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকায়। এছাড়া ১০ টাকা কমে প্রতিকেজি আদা ৭০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও ফার্মগেট কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকান চালু করা হয়নি। বাজারে ক্রেতারা সংখ্যাও কম। দু’চারজন যারা দোকান খুলেছেন তারা, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও খোশগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত কাওরান বাজারে বেপারীদের হাকডাক নেই। সবজি বোঝাই দু’চারটি ট্রাক আসলেও বেচাবিক্রি তেমন নেই। বাজারের আড়তদার, মহাজন ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছুটি ভোগ করছেন। কিছু আড়ত খোলা থাকলেও কর্মচারীরা ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি রয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি সপ্তাহ ঢিলেঢালা ভাবে চলবে বাজার। আগামী রবিবার নাগাদ বাজার পুরোদমে চালু হবে বলে আশা করছেন তারা। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জনকণ্ঠ বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হলেও পাইকারি বাজার এখনও চালু হয়নি। পুরোদমে চালু হতে আরও অন্তত চারদিন সময় লাগবে। বেশিরভাগ আড়তদার ও মহাজনদের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটিতে রয়েছেন। এ কারণে ঢাকার বাইরে থেকে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। দু’চারটি যা আসছে তাদেরকে ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। তবে সরকারী ছুটি হওয়ায় নাড়ির টানে গ্রামে যাওয়া মানুষজন ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে বাজারের ব্যস্ততা বাড়ছে। এদিকে বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২৫-৪৫, রসুন ৫০-৯০, চিনি ৫৬-৬০, ডিম ২২-২৬, সরু চাল মিনিকেট ও নাজির ৫৮-৬৬, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪৮-৫৪, মোটা স্বর্না, ইরি ও চায়না ৩৮-৪২, আটা ২৬-৩৫, ভোজ্যতেল সয়াবিন খোলা ৮৫-৮৮, সয়াবিন বোতল ৫ লিটার ৪৮০-৫২০, পামওয়েল লুজ ৭০-৭২, পামওয়েল সুপার ৭৩-৭৫, মসুড ডাল জাত ও মানভেদে ৫৫-১১০, ছোলা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গোল আলু ২২-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি সবজি ৩০-৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ক্রেতা কম থাকলেও মাছ ও মাংসের দাম কমেনি। প্রতিকেজি রুই মাছ ২০০-৩০০, প্রতিপিস ইলিশ ৫০০-১৫০০, চিংড়ি ৫০০-১২০০, পাবদা ৫০০-৬০০, সরপুটি ২৫০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৭০-৫০০, খাসি ৭০০-৮০০, দেশী মুরগি জোরা ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, ক্রেতা কম থাকায় বাজারে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঈদের ছুটি উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। যারা ঢাকায় আছেন তারাও পরিবারবর্গ নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জসিম পাটোয়ারি জনকণ্ঠকে বলেন, পাইকারদের ক্রেতা খুচরা বিক্রেতারা ঢাকায় নেই। বেপারীরা পণ্য আানছে না। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ছুটি উপভোগ করতে বাড়িতে চলে গেছেন। এ অবস্থায় ক্রেতাশূণ্য মার্কেটে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা বাজারগুলোতে ক্রেতা নেই। ঈদের ছুটি শেষ হলেও বাজারগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কাপ্তান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছের দোকান খুলেছেন ১০-১৫ জন ব্যবসায়ী। অথচ এই বাজারে শতাধিক মাছের ব্যবসায়ী রয়েছেন। একইভাবে মুরগি বিক্রি করছেন ৭-৮ জন। অথচ এই বাজারে ৫০ জনের বেশির মুরগির ব্যবসায়ী বেচাকেনা করে থাকেন। তারা জানান, ঈদের পরে ক্রেতা থাকে না বলে বেশির ভাগ দোকানদার ঢাকায় থাকলেও দোকান খোলেন না। তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ফকিরাপুল বাজারের মাছ বিক্রিতা রাজু বলেন, ঈদের কারণে মাছের যোগান কম। পাইকারি বাজারে মাছ নেই বললেই চলে। আমদানি কম হওয়ায় দাম একটু বেশিই পড়ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে সব কিছুর চাহিদাও বাড়লে বেচাবিক্রি ভাল হবে। এছাড়া, অন্য দোকানের পাশাপাশি প্রায় ৯৯ ভাগ খাবারের রেষ্টুরেন্ট, চা দোকান, ফাস্টফুডের দোকনগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাচেলর, ছাত্র, পথচারী, ভিক্ষুকসহ ছোটখাটো কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষজনের খাওয়া-দাওয়ায় মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে। আর মহল্লাবাসীর কষ্ট হচ্ছে দোকানগুলো বন্ধ থাকায়। এ প্রসঙ্গে পুরাণ ঢাকায় ম্যাচে বসবাসরত কামাল জানালেন, রেষ্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় খাওয়া-দাওয়ায় মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে। বাধ্যহয়ে দূরের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে খেতে হচ্ছে। তবে ছুটি শেষ হওয়ায় শীঘ্রই স্বাভাবিক কর্মকান্ড শুরু হবে বলে জানালেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
×