অনলাইন রিপোর্টার ॥ সারাদেশে মাত্র ৯৬টি অনুমোদিত বার রয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসন। তিনি বলেন, অথচ এর বাইরে অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্টে মদ বিক্রি হয়। কিন্তু লাইসেন্স না থাকায় তারা ট্যাক্স দেয় না। তাই যারা যারা মদ বিক্রি করছে সবাইকে লাইসেন্স প্রদান করা হোক।
সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। পূর্তমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে চট্টগ্রাম ব্যতীত সব হোটেল, রিসোর্টকে ৫-১০ বছরের জন্য কর অবকাশ করা হোক। অবহেলিত এলাকায় যেখানে শিল্প কারখানা করুক তাতে কর অবকাশ করা সুবিধা দেয়া হোক। আজ থেকে ২০ বছর আগে আমি নিজেও কর অবকাশ সুবিধা পেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমাদের পাঁচ তারকা মানের হোটেল এবং রিসোর্টে হার্ড ড্রিংকসের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু এই হার্ড ড্রিংকসে যে হারে কর আরোপ করা হয়েছে, তা অত্যাধিক। এটা কমিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করছি। হার্ড ড্রিংকসের ওপর যে হারে ট্যাক্স নেয়া হয় তাতে বিদেশিরা খুশি না, ফলে বিক্রিও কম হয়।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারাদেশে অনুমোদিত বারের সংখ্যা মাত্র ৯৬টি। অথচ গুলশান-বনানীতে যে কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গিয়ে যে কোনো ধরনের ড্রিংকসের অর্ডার করলে ওরা সার্ব করে দেয়, কিন্তু তারা কোনো ট্যাক্স দেয় না। কারণ তাদের লাইসেন্স নাই। তাই যারা এসব করছে তাদের বৈধভাবে মদ বিক্রি করার সুযোগ দেন। যারা মদ বিক্রি করছে তাদের ‘অ্যালাউ’ করে দেন। সহস্র অবৈধ বারকে অনুমোদন দেয়া হোক। এছাড়া হার্ড ড্রিংকসের ওপর ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সবার জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ফ্ল্যাট ক্রয়ে আয়ের উৎসের সন্ধান বন্ধের দাবি জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ফ্ল্যাট ক্রয়ে কিছু বাধার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এখানে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থের উৎসের সন্ধান করা হয়। এতে ফ্ল্যাট ক্রয় ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। অথচ এই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে তারা ফ্ল্যাট কিনছেন। এই অর্থপাচার বন্ধ করতে হলে একটা উপায় বের করেত হবে। তাই প্রস্তাব করছি, যে টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনবে সেই টাকার ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সেটা যেন সাদা করার সুযোগ থাকে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের অর্থের উৎসের অনুসন্ধান বন্ধ করতে হবে। আর ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি কমাতে হবে। বর্তমানে ফ্ল্যাট ক্রয়ে সব মিলেয়ে ১৬ শতাংশ ট্যাক্স আদায় করা হয়, এটাকে ৭ শতাংশে নিয়ে আসার দাবি করছি।
দেশে কর দাতার সংখ্যা বাড়ানো প্রস্তাব করে মন্ত্রী বলেন, কমপক্ষে দুই কোটি মানুষকে করের আওতায় আনতে হবে। এই দুই কোটি লোক যদি ২০ হাজার করে টাকা দেয় তাহলে ৪০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। এ সময় মন্ত্রী ভ্যাট আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থার দাবি জানান।
তিনি বলেন, জনগণ ভ্যাট প্রদান করলেও সেটা পুরোটা সরকারি কোষাগারে যায় না। এর কারণে প্রতি বছরই রাজস্ব আদায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ভ্যাট আদায়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। প্রতিটি দোকান এবং সেবা কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক্স ক্যাশ রেজিস্ট্রার চালু করা হোক। এই ক্যাশ রেজিস্ট্রার এর সঙ্গে এনবিআরকে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে ট্যাক্স সরাসরি সরকারি সার্ভারে জমা হবে। এতে ভ্যাট আদায় বাড়বে এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এতে ভ্যাটের হার কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করলেও বর্তমানের তুলনায় চারগুণ বেশি ভ্যাট আদায় হবে।
মন্ত্রী জানান, সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে রাজউক উত্তরায় ৬ হাজার ৬৩৬টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছে। যা আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এছাড়া আরও ৮ হাজার ৪০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে যাচ্ছি। ঝিলমিলে ১১ হাজার ৪০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পূর্বাচলে ৭০-৮০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
সংসদ সদস্যদের দাবির মুখে সব সংসদ সদস্যকেই প্লট দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৩৫০ সংসদ সদস্যকেই প্লট দেয়া হয়েছে। তিন কাঠা করে হলেও সবাই পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাদের এটা উপহার হিসেবে দিয়েছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির কথা বলা হলেও বাজেটে কাগজে কলমে কোনো কিছু দেখছি না। আমার অনুরোধ থাকবে এটা চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে থাকুক এবং প্রতিটি সংসদীয় আসনে অন্তত পক্ষে দুইটা করে হলেও এমপিওভুক্ত করার অনুরোধ করছি। আল্লাহর ওস্তে এমপিওভুক্ত করে দেন, না করলে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, উম্মে রাজিয়া কাজল, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, টিপু মুনশি, মৃণাল কান্তি দাস, হোসনে আরা বেগম প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: