জমে উঠেছে বিশ্বকাপ ফুটবল। বাংলাদেশেও বিরাজ করছে তার আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও দারুণ উত্তেজনা। কোন কোনদিন দিনে চারটি খেলা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঈদের ছুটির ভেতর দর্শকরা একটি খেলাও মিস করতে চাননি। বরং বলা চলে ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে তুলেছিল বিশ্বকাপ ফুটবল। এবার দিনের শেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় কিংবা রাত বারোটায়। এটিও বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য। খেলা শেষ পর্যন্ত দেখেই ঘুমোতে যাওয়া যাচ্ছে। গতবারের মতো গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে চোখ কচলাতে কচলাতে টিভি সেটের সামনে বসতে হচ্ছে না। জাতীয় টেলিভিশন বিটিভিসহ একাধিক প্রাইভেট চ্যানেল সরাসরি বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যাচগুলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ফুটবল উন্মাদনায় ভাসছে দেশ।
চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি নেই এবারের বিশ্বকাপে, নেই নেদারল্যান্ডস, চিলির মতো জনপ্রিয় দলও। তবে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্সের মতো সাবেক চ্যাম্পিয়নরা এবারও শক্তিশালী দল নিয়ে নেমেছে ফুটবলের মহারণে। ফলে উত্তেজনার কমতি পড়ছে না। অন্যদিকে, বিশ্বকাপ ফুটবল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ক্রীড়ানুষ্ঠান। জনপ্রিয়তা এবং পৃথিবীব্যাপী টিভি দর্শকের সংখ্যার বিচারে বাণিজ্যিক বিচারেও বিশ্বকাপ ফুটবল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গত বিশ্বকাপে ফিফা নিট মুনাফা করেছিল ২৬০ কোটি ডলার। এবার মুনাফা আরও বাড়বে। আয়োজক দেশ রাশিয়ার অর্থনীতিতেও জোয়ার আনবে ফুটবল বিশ্বকাপ। বলা যায়, এটি হবে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল আসর। বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুন রূপে সেজেছে রাশিয়া। সমাগম হয়েছে ১০ লক্ষাধিক বিদেশী ফুটবলপ্রেমীর।
১৪ জুন রাশিয়ার লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। দীর্ঘ বাছাইপর্ব উতরে আসা ৩২টি দল খেলছে এই বিশ্বকাপে। স্বাভাবিকভাবে এই ৩২ দেশের মানুষেরই বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহটা বেশি। কিন্তু অন্য দেশগুলোরও কম নয়।
বিশ্বের তাবৎ সংবাদ মাধ্যমের চোখ এখন বিশ্বকাপের দিকে। জন-আগ্রহই এর কারণ। বিশ্বকাপ ফুটবলের মর্মবাণীও এর অন্যতম কারণ। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্টের ভাষায়, ‘আমরা বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে আছি। এটা এই কারণে নয় যে, আমাদের প্রধান কার্যালয় যে দেশে (যুক্তরাজ্য), সেই দেশের এবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বকাপ জেতার। আমরা এর দিকে নজর রাখছি তার অভাবনীয় খেলোয়াড়সুলভ মঞ্চায়ন, নাটকীয়তা ও নায়কোচিত প্রপঞ্চের কারণে, যা একে শিল্পের স্তরে উন্নীত করে। এই বিশ্বকাপ আমাদের বহুল চর্চিত ও সযতেœ লালিত মূল্যবোধকে সমন্বিতভাবে সবার সামনে হাজির করে, যা এর প্রতি মনোযোগী হওয়ার অন্যতম কারণ।’
এবার শুরু থেকেই ঘটছে ‘অঘটন’। ফুটবলের চার পরাশক্তি হোঁচট খেয়েছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন ড্র করেছে আর চ্যাম্পিয়ন জার্মানি হয়েছে পরাজিত। বিশ্ববাসীর সামনে চার বছর পর এমন সুযোগ ঘটে মহানন্দের। খেলার আনন্দে মশগুল আমরা যেন নিজেদের ফুটবলের উন্নতি সাধনে করণীয় সম্পর্কে বিস্মৃত না হই- সেটাই প্রত্যাশা।
শীর্ষ সংবাদ: