ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুরুতেই চমক মেক্সিকো, আইসল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের

ধাক্কা খাচ্ছে ফেবারিটরা ॥ বিশ্বকাপ ফুটবল- ব্যতিক্রম রোনাল্ডো

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৯ জুন ২০১৮

ধাক্কা খাচ্ছে ফেবারিটরা ॥ বিশ্বকাপ ফুটবল- ব্যতিক্রম রোনাল্ডো

জাহিদুল আলম জয় ॥ আচমকা অঘটনে শুরুতেই জমে উঠেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপের তিন টপ ফেবারিট দল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানি নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অঘটনের শিকার হয়েছে। যে কারণে দল তিনটির ভাগ্যে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে এখনই শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই দল। দেশ দু’টি এবারও ট্রফি জয়ের স্বপ্ন বুনছে। কিন্তু তাদের শুরুটা হয়েছে ধারার বিপরীতে। ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে নবাগত আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক ও সেরা তারকা লিওনেল মেসি পেনাল্টি মিস করে দলকে ডুবিয়েছেন। এর ফলে দেশের জার্সিতে মেসির পারফরমেন্স নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়েছেন নিন্দুকেরা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার মতো নিজেদের শুরুর ম্যাচে আটকে গেছে টপ ফেবারিট ব্রাজিলও। রবিবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেন মার্সেলো, নেইমাররা। নিজেদের প্রথম ম্যাচ শেষে তাই আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের অবস্থান ভাই ভাই! তবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে গেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। মুকুট ধরে রাখার লক্ষ্যে ‘এফ’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে গেছে ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা। মেক্সিকোর কাছে জার্মানদের ১-০ গোলে হার চলমান বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অঘটন। বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে তিনটি দলেরই প্রথম পর্ব উতরাতে কঠিন সমীকরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে! আইসল্যান্ডের কাছে হোঁচট খাওয়ায় মেসিদের এখন নকআউট পর্বে খেলাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা তাদের গ্রুপে ক্রোয়েশিয়া প্রথম ম্যাচ জিতে পরের পর্বে যাওয়ার পথ অনেকটাই মসৃণ করেছে। পরের ম্যাচটাই ক্রোয়েটদের বিরুদ্ধে খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। কাজটা যে সহজ হবেনা সেটা সহজেই অনুমেয়। ক্রোয়েশিয়া দলটিকে এবার অন্যতম চৌকস বলা হচ্ছে। দলটির মিডফিল্ডকে এবারের বিশ্বকাপের সেরা বলছে অনেকে। ক্রোয়েট অধিনায়ক লুকা মডরিচ তো হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন। এরপর শেষ গ্রুপ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে খেলতে হবে আফ্রিকার সুপার ঈগল নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে। আফ্রিকান এই দলটি যে কোন প্রতিপক্ষকেই হারানোর ক্ষমতা রাখে। এ কারণে নাইজিরিয়াকে হারানোও সহজ হবে না জর্জ সাম্পাওলির শিষ্যদের। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্ব পার হওয়াটাই এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে উতরে গেলেও শেষ ষোলোতেই কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হতে পারে মেসি, মারিয়াদের। নিজেদের গ্রুপে যদি আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় হয় আর ‘সি’ গ্রুপে যদি ফ্রান্স প্রথম হয় তাহলে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালেই শক্তিশালী ফরাসীদের বিরুদ্ধে খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। কঠিন এই বাধা ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা উতরাতে পারবে কিনা তা নিয়ে ঢের সংশয় থাকবে! সমীকরণ এজন্যই সামনে আসছে, ‘সি’ গ্রুপে ফ্রান্সের সেরা হওয়া যেমন অনেকটা নিশ্চিত তেমনি আর্জেন্টিনারও ‘ডি’ গ্রুপে প্রথম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কঠিন এমন সমীকরণ চলে আসতে পারে ব্রাজিল ও জার্মানির সামনেও। প্রথমত দল দু’টির গ্রুপ পর্ব উতরানোর চ্যালেঞ্জ। সেটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলেও নিজ নিজ গ্রুপে সেরা হতে না পারলে শেষ ষোলোতেই মুখোমুখি হতে হবে পাঁচবার ও চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। এই পরিস্থিতি এড়াতে হলে নিজ নিজ গ্রুপে হয় প্রথম না হয় দ্বিতীয় হতে হবে জার্মানি ও ব্রাজিলকে। এর যে কোন একটির ব্যত্যয় হলে নকআউট পর্বের শুরুতেই দেখা হয়ে যাবে নেইমার-মুলারদের। সেক্ষেত্রে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বিদায় নিতে হবে টপ ফেবারিট দল দু’টির একটিকে। শিষ্য তিন ফেবারিট দলের এমন অধপতনের মূলে তারকা ফুটবলারদের মেলে ধরতে না পারা। আর্জেন্টিনা হোঁচট খেয়েছে মূলত মেসির পেনাল্টি মিসের কারণে। ব্রাজিলের সেরা তারকা নেইমার ফাউলের শিকার হলেও তিনি শতভাগ সুস্থ ছিলেন না। আর জার্মান দলটিকে দেখে মনে হয়ে অনেক বেশি ক্লান্ত! এসব জায়ান্টদের রুখে দিয়ে নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্য পেয়েছে আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও মেক্সিকো। ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার অবিস্মরণীয় রেকর্ড গড়েছে আইসল্যান্ড। ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দেয়া আইসল্যান্ডের লোকসংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ৩৫ হাজার। একমাত্র দেশ হিসেবে ১ মিলিয়নের (১০ লাখ) কম লোকসংখ্যার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয়ার রেকর্ড তাদের। আর মূল আসরে তাদের অভিষেকটাও স্বপ্নের মতো হয়েছে। মেসি, নেইমাররা প্রথম ম্যাচে নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারলেও আলো ছড়িয়েছেন সময়ের আরেক সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ‘বি’ গ্রুপে শুরুতেই স্পেনের মতো পরাশক্তির বিরুদ্ধে খেলতে হয় পর্তুগীজদের। সেখানে অধিনায়ক রোনাল্ডো একাই লড়াই করেন বুক চিতিয়ে। দুর্দান্ত রেকর্ডগড়া হ্যাটট্রিক গড়ে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ড্র করেন ৩-৩ গোলে। চোখ ধাঁধানো শুরুর পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বুনছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। যেভাবে শুরু করেছেন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’ ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুট’ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ আছে রোনাল্ডোর। শেষ পর্যন্ত মেসি, নেইমার না রোনাল্ডো শেষ হাসি হাসেন সেটাই দেখার।
×