ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুশির আবহে সারাদেশে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৯ জুন ২০১৮

 খুশির আবহে সারাদেশে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত শুক্রবারই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল শনিবারই পালিত হবে ঈদ-উল-ফিতর। এ কারণে ওইদিন চাঁদ দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। সন্ধ্যায় ইফতার শেষে ঈদের আনন্দে মেতে উঠে সারাদেশবাসী। এরপর যখন চাঁদ দেখার খবর নিশ্চিত হলো তখনই আনন্দে মাতোয়ারা হতে থাকে। রেডিও টিভিতে বেজে ওঠে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। চারদিকে বয়ে যায় খুশির বন্যা। ঈদ বাঙালী মুসলমানদের জীবনে আনন্দ উৎসব পালনের অন্যতম প্রধান উৎস। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করতেই তারা বেশি ভালবাসে। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বেশিরভাগ মানুষ তাদের কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ির পানে ছুটে যান। ঈদের দিন সকালে সেমাই মিষ্টি খাওয়া, বড়দের হাত ধরে ঈদের নামাজে শরিক হওয়ায়, ঈদের নতুন পোশাক পরিধান এবং ঈদ সেলামিই ছিল ঈদের অন্যতম অনুসঙ্গ। পাশাপাশি দীর্ঘদিন পরে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে আড্ডা দেয়া এবং দর্শনীয় স্থানে ঘোরাঘুরি ছিল এবারের ঈদের বাড়তি আনন্দ। আর যারা রাজধানী ছেড়ে যায়নি তাদের ঈদের বিনোদন যেন এখনো শেষ হবার নয়। প্রিয়জনদের জন্য দর্শনীয় স্থানে ঘোরা ঘুরির পর্ব চলছেই। এই সপ্তাহ জুড়েই চলবে ঈদের এই অনাবিল আনন্দ। এবারের রমজান ২৯ দিন। রমজানের শেষের দিনগুলো থেকেই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। শেষে রমজানগুলোতে কষ্ট স্বীকার করে সিয়াম পালন করতে হয়েছে। ভ্যাপসা গরমে রোজাদারদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছিল। এই অবস্থায় সবাই আকাঙ্খা ছিল শনিবারই যেন প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় আকাশে দেখা মেলে এক ফালি চাঁদের। যার প্রতীক্ষায় ছিল দেশবাসী। শেষ হয় রমজান। শুরু হয় বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ উৎসবের। সারাদেশই ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। তবে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরম যেন এই উৎসবে কিছুটা হলে ম্লান করার চেষ্টা করেছে। ঈদের কয়েকদিন আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলেও প্রচ- গরমে দেশবাসী অতিষ্ঠ। প্রচ- গরমে দরদর করে গাম বের করে নিচ্ছে। মাঝে মাঝে মেঘ বৃষ্টি দেখা মিললেও গরম কমার কোন লক্ষণই নেই। এবারে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। সকাল সাড়ে ৮টায়। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক উর্ধতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন। প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এছাড়া দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ময়দান ঈদের জামাতে প্রচুর লোক অংশ নেয়। সারাদেশে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ আনন্দে অংশ নিতে দেখা গেছে সবার। শুক্রবার রমজান মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতিটির ঘরে ঘরে নেমে আসে খুশির বন্যা। ঈদে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিজ নিজ ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সব ভেদাভেদ ভুলে কোলাকুলিতে মিলিত হয় মুসল্লিরা। একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদের নামাজে বিশ্বশান্তি ও আখেরাতের মুক্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। ঈদের দিন প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়। শিশু কিশোররা সকাল থেকেই আনন্দে মেতে ওঠে। সবাই নতুন জামা কাপড় পরে ঈদের নামাজ আদায় করে। অনেকে মৃত আত্মীয় স্বজনদের কবর জিয়ারত করে। নামাজ শেষে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঢল নামে। বিনোকেন্দ্রগুলোতে আর কয়েকদিন এ অবস্থা থকবে বলে জানা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ায় এবারের ঈদে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ফলে ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে, ঈদে বাড়ি ফেরা ও ঈদ উদযাপন হয়েছে নির্বিঘেœ। এদিকে ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে শনিবার দেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এদিকে ঈদের নামাজ শেষেই শনিবার বঙ্গভবনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছ বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এ সময় তিনি ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ-উৎসব খুশিভরে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ যাতে উপভোগ করতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসব্যাপী সিয়াম সাধনের পর ঈদ-উল-ফিতর খুশি ও সুখের বার্তা বয়ে আনে। তাই ঈদের খুশিকে সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিয়ে পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্যকে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিময় সমাজ গঠনে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্য অনন্য। ধনী-গরিবসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ একই ছাতার নিচে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার মাধ্যমে ‘ঈদ-উল-ফিতর’ সকলের মাঝে ঈদ-আনন্দকে ভাগাভাগি করতে সহায়তা করে। ঈদে বড় শহরগুলোতে বসবাসকারী মানুষ শিকড়ের টানে ফিরে যায় গ্রামে আপনজনের কাছে। মিলিত হয় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে। এতে করে তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় হয়। তিনি ঈদ-উল-ফিতরের অন্তর্নিহিত শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান। বঙ্গভবনে শনিবার সকাল ১০টায় এ সংবর্ধনার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতি আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়াও বাংলাদেশে কূটনৈতিক কোরের ডিন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিগণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মী, পেশাজীবী, বিচারক এবং বিদেশী কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীকে ঈদ-উল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমি চাই বাংলাদেশের জনগণ তাদের সারাটি জীবন একটি আনন্দমুখর পরিবেশে কাটাবে এবং আমি চাই তারা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকবে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও দুই লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে ঈদের নামাজ শেষে সর্বস্তরের মানুষ এসে ভিড় করলে সকাল ৯টায় সাধারণের জন্য গণভবনের গেট খুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সিনিয়র সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ছিন্নমূল মানুষসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ’লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহম্মদ ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক এবং সাহারা খাতুন, কেন্দ্রীয় নেতা মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অশিম কুমার উকিল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে গণভবন লোনে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণের সঙ্গে পৃথকভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং তিন বাহিনী প্রধানগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×