ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে’

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৯ জুন ২০১৮

‘নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে’

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। নির্বাচনের পরিবেশকে মেঘাচ্ছন্ন করতে নানাভাবে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রকেই দেশবাসী বাস্তবায়িত হতে দেবে না। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোন রাজনৈতিক দর্শন নেই। ব্যাংক ডাকাতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক বিমানমন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊ শৈ সিং, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, একেএমএ আউয়াল সাইদুর রহমান, বেগম সানজিদা খানম এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম খোরশেদ আরা হক, মুহাম্মদ আলতাফ আলী প্রমূখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, টানা ১০ বারের বাজেট দেওয়ার বিরল সম্মান পৃথিবীর খুব কম অর্থমন্ত্রীরই রয়েছে। সামনে আগামী নির্বাচন। তাই বাজেটে জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। একটি সরকার শুরুর দিন থেকেই জনগণের আস্থা অর্জন করে জনগণের রায় নেয়। চারটি বছর কিছু না করে একটি বছর কাজ করে কোন দলই জনগণের আস্থা অর্জনের রসদ যোগাতে পারে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ময়কর সাফল্যে সারা বিশ্ব নেতারা স্বীকার করছেন, উন্নয়নের রোলমডেল হয়েছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর অনেক বড় দেশও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষুদ্র বাংলাদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে। সমৃদ্ধির পথযাত্রায় চলছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা কখনো মসৃণ পথে চলতে পারিনি। শত ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই শেখ হাসিনাও কোন অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ান না। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা মানবিক কারণে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু এটি নিয়েও নানা উস্কানী দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসমুক্ত প্রাণোঞ্চল উন্নয়নের দেশ জাতিকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গী-সন্ত্রাসীরা মাথা তুলতে না পেরে মাদকের ছোবলে যুব সমাজকে ধ্বংস করতে চায়। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়েও অনেকে আপত্তি জানাচ্ছে। দেশের ক্ষতি করার জন্যই এটা তারা করছে, এরা আসলে জ্ঞানপাপী। যুব সমাজকে এই মাদকাসক্তের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতেই হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই দেশ থেকে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। মাদক, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মাদক থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারি যুব সমাজের সমূহ সর্বনাশ হবে। প্রধানমন্ত্রী শক্তহাতে যেভাবে জঙ্গী-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছেন, ইনশাল্লাহ মাদকের ছোবল থেকেও দেশকে রক্ষা করবেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্র চলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। নির্বাচনের পরিবেশকে মেঘাচ্ছন্ন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার প্রিয়জনরাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ১১ বছর মামলা চলার পর রায়ে দন্ডিত হয়ে সাজা ভোগ করছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা সরকারের কী করার আছে? সরকারের তো করার কিছু নেই, আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন। আর খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও নানা বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। নানা বায়না ধরছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের পথে চলে, অন্য কোন বাঁকা পথে ক্ষমতায় আসেনি, আসার চিন্তাও নেই। তিনি সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে সুদ না কমানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। প্রস্তাবিত বাজেটকে ভেজাল মিশ্রিত দাবি করে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোন রাজনৈতিক দর্শন নেই। আওয়ামী লীগের আদর্শেরও পরিপন্থী। প্রশাসনে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কে কত বড় আওয়ামী লীগ হবে তার একটা প্রতিযোগিতা চলছে, এটা একটা অশনিসংকেত। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান আমলে ২২ ধনীক পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন ১২২ পরিবার সৃষ্টি হয়েছে। যাদের হাতে দেশের ৮০ ভাগ সম্পদ। আর বাকী ২০ ভাগ সম্পদ অন্যান্যদের হাতে। এই বৈষম্য কে বিলোপ করবে? বাজেটে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। বরং বৈষম্য বাড়াতে বাজেটে ধনীক শ্রেনীর স্বার্থরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা ব্যাংক ডাকাতি করে জনগনের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে, তাদেরকেই প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিরোধী দলীয় এই সদস্য বলেন, তিনি (আবুল মাল আবদুল মুহিত) ৫০ বছর বয়সে সামরিক সরকারের বাজেট দিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টি সরকারের বাজেট দেননি। জাতীয় পার্টির সরকারের কথা শুনলেই তিনি ক্ষেপে যান। কারণ তিনি সামরিক শাসনকে বেশী ভালবাসেন। এরশাদ সরকারের আমলেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সাবেক বিমানমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অতীতের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড মোকাবেলায় আগামী দিনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণ নয়, বিএনপি এখন বিদেশে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব নেতারা কেউ-ই বিএনপির কথা শোনে না, কারণ তাঁরা জানেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার কীভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর আগামী নির্বাচন জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু কী নিয়ে সংলাপ? নির্বাচন নিয়ে কোন কথা থাকলে নির্বাচন কমিশনকে বলুক। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছর এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর মিলিয়ে এই সাত বছর পার্বত্য শান্তি চুক্তির কোন ধারা তারা বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তির ৫২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারাই বাস্তবায়ন করেছে। চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মান ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। যা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করেছে। গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে ভোট একটি বড় বিষয়। এই ভোট চলাফেরা করে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে। যে পথে আমরাও চলেছি। গ্রামের সকল মেঠোপথ যদি ভালো করে দিতে পারি তাহলে ভোট আমাদের দিকেই আসবে। দ্রুত এমপিওভূক্তির দুয়ার খোলার দাবির ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। এ মামলা তো বর্তমান সরকার দেয়নি। দুর্নীতি করবেন, আদালতের রায়ে জেলে যাবেন, এতে সরকারের দোষ কোথায়? নির্বাচনমূখী বাজেটের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, এই সরকারের লক্ষ্য উন্নয়ন। আর উন্নয়ন হলে তো জনগন আওয়ামী লীগকেই ভোট দিবে। ফলে নির্বাচনীমূখী বাজেটের সমালোচনার কোন সুযোগই নেই বলে তিনি দাবি করেন।
×