ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমারে গিয়ে ইয়াবার চালান আনছে রোহিঙ্গারা!

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২০ জুন ২০১৮

 মিয়ানমারে গিয়ে ইয়াবার চালান আনছে রোহিঙ্গারা!

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ উখিয়া-টেকনাফসহ জেলার সর্বত্র এলাকার যুবক ও উঠতি বয়সের কিশোরদের ধ্বংসের পথে পা বাড়ানো শিখিয়েছে রোহিঙ্গারা। স্বদেশে থাকতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অহরহ পাঠিয়েছে ইয়াবার চালান। বর্তমানে এদেশে অনুপ্রবেশ করেও প্রায় সময় মিয়ানমারে গিয়ে তারা নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক ইয়াবার টাকা নিয়ে সরকারী বনভূমির জায়গার ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। জানা গেছে, দেশের গডফাদারদের কাছে ইয়াবার চালান পাঠাত মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা। দেশে মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। টেকনাফ, উখিয়া তথা কক্সবাজার জেলার অসংখ্য লোকজনকে গডফাদার, ইয়াবা সম্রাট ও বিক্রেতা বানিয়েছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় ইয়াবা কারবারিরা অবৈধ পথে রোজগার করা টাকায় সুরম্য অট্টালিকা গড়েও এলাকা ছেড়ে পালাতে হয়েছে রোহিঙ্গাদের কারণে। যেহেতু রোহিঙ্গারা তাদের কাছে ইয়াবার চালান না পাঠালে তারা ইয়াবা সম্রাট হিসেবে গোয়েন্দাদের তালিকাভুক্ত হতো না। এলাকা ছেড়েও আত্মগোপনে যেত না। বাকিতে ইয়াবা দিয়ে টাকা না পেলেও রোহিঙ্গারা ওই সম্রাটদের কাছে ইয়াবার চালান পাঠিয়েছে বারবার। কেননা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্থাপিত ৩৭টি ইয়াবা কারখানায় প্রতিদিন ৮ লাখ পিস ইয়াবা উৎপাদন হয়ে থাকে। কিছু কিছু বড় মেশিনযুক্ত কারখানায় প্রত্যেহ ১০ লাখেরও বেশি ইয়াবা তৈরি হয় বলে জানা গেছে। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন তিন কোটিরও বেশি ইয়াবা উৎপাদন হয়ে থাকে। ওসব ইয়াবা বিক্রির মার্কেট হচ্ছে শুধু বাংলাদেশ। সীমান্ত এলাকার চিহ্নিত কয়েক ডিলারকে টার্গেট করে ইয়াবা উৎপাদন করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। যারা রাখাইন রাজ্যে থাকতে ইয়াবার কাজে সম্পৃক্ত ছিল ওসব রোহিঙ্গা এখনও সেখানে রয়েছে। পালিয়ে আসতে হয়নি তাদের। তবে চুনোপুঠি কয়েকজন ইয়াবা কারবারি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তারা এখনও ওপারে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সীমান্ত গলিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। রাখাইন রাজ্যে থাকতে বেশিরভাগ ইয়াবার চালান জিম্মায় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বর্তমানে আশ্রয় শিবিরে রয়েছে। তারা চিহ্নিত ওসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গড়ে তোলেছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। তারা প্রত্যেহ মাছ ধরার বাহানায় নাফ নদীতে নেমে পার হয়ে যাচ্ছে রাখাইনে। সেখানকার রোহিঙ্গারা চালান এনে দিলে ওসব রোহিঙ্গা তা কৌশলে নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা সিন্ডিকেটের প্রধান গডফাদার হচ্ছে জিয়াবুল নামে এক পুরনো রোহিঙ্গা নেতা। জানা যায়, উখিয়ার কুতুপালং পিএফ পাড়া গ্রামে কুতুপালং ক্যাম্পের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক ইয়াবার কালো টাকার পাহাড় গড়েছে। মোটা টাকায় বন বিভাগকে ম্যানেজ করে নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন। অভিযোগ উঠেছে, উখিয়া সদর বিট কর্মকর্তা নুরুল আবছারকে নগদ দুই লাখ টাকা দিয়ে এবং তার কথা মতো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নামে বিপুল টাকা ঘুষ দিয়ে ওই ভবন নির্মাণ করেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিট কর্মকর্তা নুরুল আবছার। একজন রোহিঙ্গা কিভাবে সরকারী বনভূমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে, এ নিয়ে হতবাক স্থানীয়রা। সূত্র মতে, রোহিঙ্গা শামশুল আলমের পুত্র জিয়াবুল হক ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সপরিবারে পালিয়ে আসে এদেশে। অনুপ্রবেশের পর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। আঁতাত করে কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা ও অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যে কুতুপালং এলাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রক জানে আলমসহ ক্যাম্প ভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে ওই জিয়াবুল। এরপর মালয়েশিয়ায় মানবপাচার, ইয়াবার চালান আনার কাজে জড়িয়ে পড়ে অল্পদিনের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায় রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক।
×