ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁকা রাজধানীতে চিরচেনা যানজট নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২০ জুন ২০১৮

ফাঁকা রাজধানীতে চিরচেনা যানজট নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি শেষ, তবে এখনও ভিড় হয়নি নগরে। চির চেনা যানজট দেখা যাচ্ছে না সড়কে। ফাঁকা রাজধানী শহর। যা পুরনো চেহারার সঙ্গে মেলে না। এই সুযোগে যেসব সড়কে রিক্সা নিষিদ্ধ, সেসব সড়কে তিন চাকার যানকে আটকাচ্ছে না পুলিশ। আর ফাঁকা রাস্তায় ছুটির আমেজে হুডখোলা রিক্সায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে যাত্রীদের। এখনও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন নগরীর মানুষ। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ শেষে সরকারী কর্মদিবস চললেও অনেকেই পরিবার পরিজন রেখে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে। কর্মস্থলে ফেরার স্রোত এখনও তীব্র হয়নি। ঈদ শেষে এখন বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল আছে বিভিন্ন টার্মিনালে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে রাজধানী জমে ওঠার ধারণা করছেন অনেকেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল। বলতে গেলে শান্ত প্রকৃতি। যা গত এক মাসেও হয়নি। তাই বিনোদনপ্রেমীদের জন্য ছিল সত্যিকার অর্থেই অন্যরকম দিন। প্রিয়জনের সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসি ও জীবনের একান্ত কথাগুলো যেন একসঙ্গে গাঁথা হচ্ছিল সম্পর্কের সুতোয়। বাহারি রঙের পোশাকে নগরীর রাস্তা ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। ফাঁকা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক। এদের একটি বড় অংশই ঘুরে বেড়িয়েছেন রিক্সায় করে। ঈদ শেষ হলেও চালকদের বাড়তি অর্থের দাবি এখনও মেটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে খেদ থাকলেও প্রধান সড়কে রিক্সায় ঘুরে বেড়ানোকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন অনেকে। সব সড়কেই রিক্সার চাহিদা বেশি। কারণ গণপরিবহন এখনও পুরোদমে নামেনি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু পরিবহন ট্রিপ নিয়ে ঢাকার বাইরে গেছে। কিছু চালক আছেন ছুটিতে। আবার যাত্রী সঙ্কট হবে এমন ধারণা থেকে অনেক চালক গাড়ি নিয়ে নামছেন না। কাজল নামে এক রিক্সাচালক বলেন, ‘রিক্সাওয়ালাদের ঈদ এখনও শেষ হয়নি। ঈদের দুই-তিন দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। এরা কেউ কারও চাইতে কম না। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে অনেকেই একটু বাড়তি ভাড়া চাচ্ছেন। এতে যাত্রীরা অখুশি তা বলা যাবে না। অনেক যাত্রী খুশি হয়েও বাড়তি টাকা দিচ্ছেন। প্রিয় মানুষটাকে পাশে বসিয়ে ঘুরে বেড়াতে রিক্সা খুঁজছেন সোহেল সানি। ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া নিয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ঘণ্টায় রিক্সা ভাড়া পাওয়া যায়। তবে এখন চালকরা ভাড়া হাঁকছেন দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। রায়হান বলেন, ‘কয়দিন থাকে ঈদ? এরা যা শুরু করছে, অতিরিক্ত! ঈদের নামে বাড়তি ২০ টাকা, ৩০ টাকা নিতে পারে। এইভাবে আহামরি ভাড়া চাওয়াটা কখনই যৌক্তিক না। তবে রিক্সাচালকদের বক্তব্যটাও অগ্রাহ্য করার মতো না। তারা বলছেন, অন্যরা আনন্দ করলেও দুটি বাড়তি পয়সার আশায় তারা ঈদের দিন থেকে শুরু করে এখনও খেটে চলেছেন। এই সময় বাড়তি পয়সা না পেলে কেন আসবেন। মতিঝিলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ লিটন চৌধুরী জানান, ঈদের আমেজ এখনও নগরজুড়ে চলছে। অফিসপাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিলেও খুব একটা যানবাহনের চাপ নেই। প্রাইভেটকার ও রিক্সাই বেশি। তবুও তুলনামূলক সড়ক ফাঁকা। তিনি বলেন, সকালে অফিস শুরু ও শেষ হওয়ার সময় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এছাড়া খুব একটা সিগন্যাল নিয়ে টেনশন করতে হচ্ছে না। তবুও আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। যেন কোন রকম অঘটন না ঘটে। এদিকে রাজধানী এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি। অফিসপাড়া মতিঝিল অফিসপাড়া ও সচিবালয়ে খুব একটা কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। অনেকটা নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। সচিবালয়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে ঈদ শেষে মন্ত্রণালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, আরামবাগ, ফকিরাপুল, ইত্তেফাক, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, ফার্মগেট, মগবাজার, মিরপুর, ধানম-ি, মিরপুর রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ কোন সড়কেই যানবাহনের খুব একটা চাপ নেই। বেশিরভাগ প্রাইভেটকার ও রিক্সা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে মধ্যবিত্তের বাহন হিসেবে রিক্সার কদর সবচেয়ে বেশি। ভাড়াও নিচ্ছে ইচ্ছেমত। জাতীয় জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ভূগর্ভস্থ জাদুঘর, শিশুপার্ক, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে উপচেপড়া মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সিনেমা হলের সামনেও মানুষের উপস্থিতি বেশ। কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে মানুষের ভিড় আছে। এখন বাড়ি ফেরা মানুষের স্রোত বেশি। তবে প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে আসছে কমলাপুর। বাস, রেলস্টেশন, সদরঘাট নদীবন্দরে আসা যাত্রীরা জানিয়েছেন, পরিবহন সঙ্কটের কথা। তারা জানান, নানা ঝক্কি ঝামেলা নিয়ে ঢাকায় ফেরা গেলেও স্টেশনে নেমে পরিবহন সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কখনও পাওয়া গেলে দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিক জানালেন, আমি কিছুদিন ধরে উবার ও পাঠাওয়ের গাড়ি ব্যবহার করে আসছি। ঈদ উপলক্ষে এখন এ্যাপস সেবাও পাচ্ছিনা। গাড়ি একেবারেই কম হওয়ায় অনেকেই এ সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। মহাখালী বাস টার্মিনালে নামার পর প্রায় একঘণ্টা দাঁড়িয়েও অটোরিক্সা পাননি নেত্রকোনার আলাল। তিনি জানান, টার্মিনালে অটোরিক্সা পাওয়া মানেই সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো। একেবারেই গাড়ি নেই। পাঁচ গুণ ভাড়া দিয়েও গাড়ি মিলছে না। কমলাপুর রেলস্টেশনে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। দেখে মনে হবে ঈদের আগে অগ্রিম টিকেট দেয়ার চিত্র। কোন কোন সময় তারও বেশি। সবার লক্ষ্য একটাই টিকেট চাই। ঈদ শেষে বাড়ি ফেরারও টিকেট সবাই পাচ্ছেন না। পুরো প্লাটফরমজুড়ে মানুষ আর মানুষ।
×