ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিঙ্গাপুর বৈঠক ॥ শেষ পর্যন্ত সামলাতে পারবেন তো ট্রাম্প?

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ জুন ২০১৮

   সিঙ্গাপুর বৈঠক ॥ শেষ পর্যন্ত সামলাতে পারবেন তো ট্রাম্প?

ঢাকঢোল পিটিয়ে মহাসমারোহে রোদ ঝলমলে সকালে সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিখ্যাত ১২ সেকেন্ডের করমর্দনের পরে এই প্রশ্নটাই এখন বিশ্বের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনিতে অবশ্য পরিভাষায় যাকে বলে ‘পিকচার পারফেক্ট’ পরিস্থিতি ছিল এই বৈঠকের। কয়েকমাস আগেও যারা কূটনীতির পরিশীলিত ভাষার তোয়াক্কা না করে একে অপরের দেশকে ‘বোমা মেরে উড়িয়ে দেব’ বলতেন, পরস্পরকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি, এমন দু’জন সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা দ্বীপের বিলাসবহুল রিসর্টে মুখোমুখি বৈঠকে বসছেন। ফলে এ যাবতকালের সবচেয়ে আলোচিত এই বৈঠককে ঘিরে বেশ কৌতূহলও তৈরি হয়েছিল। এমন সুযোগ যে বিশ্বের সংবাদ মাধ্যম হাতছাড়া করবে না তা বলাই বাহুল্য। করেওনি। শুধু এই বৈঠক কভার করতেই সিঙ্গাপুরে হাজির ছিলেন হাজার তিনেক সাংবাদিক। পরিস্থিতি এমনই যে ৪৮ ঘণ্টা পরে রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপ। অথচ এই বৈঠকের দিকে নজর ছিল গোটা বিশ্বের। দুনিয়ার তাবড় তাবড় কাগজে মেসি, রোনাল্ডো, নেইমারকে সরিয়ে হেডলাইন হয়েছে এই দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রথম মোলাকাত। কিম কি খেলেন, কিভাবে তাঁর কনভয়ের পাশ দিয়ে রোবোটের মতো দেহরক্ষীরা ছুটে চলল, কিরকম খোশমেজাজে সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী ভিভিয়ান বালকৃষ্ণনকে সঙ্গী করে কিম তাঁর বোন কিম ইয়ো জংকে নিয়ে সন্ধ্যের সিঙ্গাপুর দেখতে বেরোলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাহন বিখ্যাত ‘বিস্ট’ও কিভাবে দেখলেন কিম- এইসব চটকদার খবরের ঢল নামল। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, অন্য নাটকের মালমসলাও কিছু কম ছিল না। রীতিমতো হলিউডের কায়দায় দু’জনে হোটেলের দু’দিকের বারান্দা থেকে হেঁটে এসে বিশ্বের তাবড় সংবাদমাধ্যমের সামনে হাসি হাসি মুখে হাত মেলালেন। ট্রাম্প আইপ্যাড খুলে কিমকে দেখাতে ব্যস্ত হলেন পরমাণুমুক্ত উত্তর কোরিয়া সমৃদ্ধির কোন শিখর ছুঁতে পারে, যেখানে যুগসন্ধীক্ষণের নায়ক হবেন তাঁরা। ষোড়শ উপচারে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে দু’জনে যখন খসখস করে বৈঠকের চুক্তিপত্রের একের পর এক ফাইলে স্বাক্ষর করছিলেন, তখনও বিশ্বসংবাদ মাধ্যমের ফ্ল্যাশের আলোয় তা আলোকিত। শোনা গেল কিম নাকি পরমাণুু অস্ত্রের নামও মুখে আনবেন না, ব্যবহার করা অনেক দূরের কথা। গদগদ হয়ে ট্রাম্পও বললেন, শীঘ্রই কিমকে হোয়াইট হাউসে নেমতন্ন করবেন। অর্থাৎ বাইরে থেকে তো শুরুটা ভালই হয়েছে মনে হচ্ছে। বিশেষত ট্রাম্প তো সিঙ্গাপুরে তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে তো বলেছেন, দু’জনে দু’জনকে শুধু চিনতে এসেছেন। আসল আলোচনা শুরু হবে আরও মোলাকাতের পরে। অর্থাৎ সিঙ্গাপুরের সাক্ষাত আসলে দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। আর নিন্দুকরা বলছে শুরুতেই আত্মঘাতী গোল করে বসেছেন ট্রাম্প। ক’কাপ চা খেয়ে আর কিমের সঙ্গে বাগানে ক’কদম হেঁটেই ট্রাম্প দুম করে বলে বসেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানের সঙ্গে যে সামরিক মহড়া মার্কিন বাহিনী করে থাকে তা বন্ধ রইল। তাঁর মতে, গাদাগুচ্ছের ডলার খরচ করে উত্তর কোরিয়াকে শুধু শুধু উত্ত্যক্ত করার কোন মানেই হয় না। এই ঘোষণায় দক্ষিণ কোরিয়া অবাক হয়েছে বললে কম বলা হয়। যে দেশকে রক্ষা করার জন্য ৩২ হাজার মার্কিন ফৌজ সেদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে, যে দেশকে প্রতিনিয়ত তার উত্তরের পড়শির চোখ রাঙানি সহ্য করতে হচ্ছে, সর্বোপরি এই যে ট্রাম্প ঢাকঢোল পিটিয়ে কিমকে আলোচনার টেবিলে আনতে পেরেছেন, তার পিছনেও রয়েছে কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশের এই দেশটির অবদান। বস্তুত চলতি বছরের ২৭ এপ্রিলের বিকেলের পড়ন্ত রোদে দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী বেসামরিক এলাকা পানমুনজমে কোন সঙ্গী ছাড়াই কিম জং উনের সঙ্গে হেঁটে, কথা বলে, চা খেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইন এই সিঙ্গাপুর বৈঠকের রাস্তা তৈরি করেছিলেন। আর সিঙ্গাপুরে বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের সামনে যে ঘোষণাপত্রটা হলিউডি কায়দায় ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট তুলে ধরলেন, তাতো আসলে সেই এপ্রিলের পড়ন্ত বিকেলে পানমুনজমে দুই কোরিয়ার সুপ্রিমোর বৈঠকের ঘোষণারই পরিমার্জিত সংস্করণ। এখানে দুই কোরিয়ার বৈঠকের গুরুত্ব বুঝতে গেলে এ কথা মাথায় রাখা দরকার যে, ১৯৫৩ সালের কোরীয় উপদ্বীপের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যে দু’দেশ এখনও সরকারীভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেনি, সর্বোচ্চ পর্যায়ে মোলাকাত যেখানে কয়েকমাস আগেও ছিল কষ্ট-কল্পনার নামান্তর, সেখানে দুই রাষ্ট্রনেতার সীমানারেখার দু’পাশে দাঁড়িয়ে করমর্দন তো বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো ঘটনাই। সাধে কি আর পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম রুশ বিপ্লব নিয়ে জন রিডের অমর কাহিনী ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’-এর আদলে এর নাম দিয়েছিল ‘দুনিয়া কাঁপানো করমর্দন’? আর দেবে নেই বা কেন? বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাঁচকে দূরে সরিয়ে রেখেও দুই কোরিয়ার বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কোরীয় উপদ্বীপ ভাগ বাঁটোয়ারার সময় বহু কোরীয় পরিবারই তার কবলে পড়ে। ঠিক দুই বাংলার ভাগের সময় যা হয়েছে আর কি। ফলে সীমান্তের দু’পারে হাজার হাজার বিচ্ছিন্ন হওয়া পরিবারের সদস্য অধীর আগ্রহে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছেন দুর দুর বক্ষে, নানান শঙ্কার দোলায় দুলতে দুলতে। দুই কোরিয়ায় শান্তি হলে যে তাঁরা বহুযুগ বাদে সীমান্তের ওপারে হারিয়ে যাওয়া আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ফের মিলতে পারবেন! ফলে তাঁদের কাছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলাপের মর্ম যে ‘মরমে পশিবে’ তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? সিঙ্গাপুরের বৈঠক তাই সেই হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে ফিরে পাওয়ার হাতছানি। ঠিক এইখানেই কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরানো গুরুত্ব। উত্তর কোরিয়াকে নমনীয় না করতে পারলে যা অসম্ভব। সমালোচকরা বলছেন, ঠিক এই জায়গাতেই ট্রাম্প ডাহা ফেল। পরমাণু অস্ত্র বর্জনের পথে পিয়ংইয়ংয়ের হাঁটার মৌখিক আশ্বাস মিলেছে মাত্র, তার গোপন পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের কথা কিম সযতেœ এড়িয়ে গিয়েছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে একটা পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দেয়ার ছবি বিলি করা হয়েছে মাত্র, পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত ভাণ্ডারের কোনও খোঁজ নেই। অথচ পিয়ংইয়ংয়ের সবচেয়ে কমজোরি জায়গাতেই ট্রাম্প প্রলেপ দিয়ে দিলেন, সামরিক মহড়া বন্ধ করে। সমালোচকরা বলছেন, কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তি মোটেই যে একটা বৈঠকে মিলবে না তা তো ট্রাম্প নিজেও খুব ভাল করে জানেন। নিজেই বলেছেন, একবার নয়, বহুবার কিমের সঙ্গে তিনি মোলাকাত করবেন। তাঁদের প্রশ্ন, সেই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তিনি কোন আক্কেলে সামরিক মহড়া বাতিলের মতো তুরুপের তাসটা খেলে ফেললেন? কিমের মতো স্বৈরতন্ত্রীর সঙ্গে পাঞ্জা কষায় সামরিক ক্ষমতা তো বড় চাল হতে পারে। বিল ক্লিন্টনের জামানায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পদে থাকা উইলিয়াম সেবাস্টিয়ান কোহেন আরও বড় প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য হলো আজ যে খরচের দোহাই দিয়ে মহড়া বন্ধ করা হচ্ছে, হঠাৎ যুদ্ধ বেধে গেল অপ্রস্তুত সেনাবাহিনী যে ক্ষয়ক্ষতির সামনে পড়তে পারে সেটা কি আরও বড় ক্ষতি নয়? ট্রাম্প তো দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা মার্কিন ফৌজকে দেশে ফেরানোর কথাও বলছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষাকবচ একের পর এক তুলে নেয়ার বিরোধীও। তাই ট্রাম্প মহড়া বাতিলের ব্যাপারটা মোটেও সহজে আমেরিকানদের বোঝাতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, নিজের দলের রিপাবলিকানরাও সবাই খুব ভাল মনে নেননি ব্যাপারটা। উল্টে এটা যদি প্রেসিডেন্টের বিচক্ষণতার অভাব বলে ধরে নেয় দেশবাসী, তবে কোটি কোটি ডলার সিঙ্গাপুরের সাগরে নিমজ্জিত করেও ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ঢোকা মুশকিল হয়ে পড়বে। শান্তির নোবেলের আশাও হবে দূরঅস্ত। সমালোচকদের মতে, আর এটাও ঘটনা যে মার্কিন ফৌজ রাখার খরচ সিওলও অর্ধেক বহন করে-৮৯ কোটি ডলার। ফলে ওয়াশিংটন একাই পুরো ব্যয়ভার বহন করে এটা ঠিক তথ্য নয়। বস্তুত এর আগেও পিয়ংইয়ংয়ের মন রাখতে দু’বার সামরিক মহড়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯২ সালে জর্জ বুশ প্রথম মহড়া বন্ধ রাখেন। বিল ক্লিন্টনও ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ মহড়া বন্ধ রাখেন। কিন্তু তাতে আদৌ কোন কাজ হয়েছিল কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সমালোচকদের শঙ্কা এবারেও মহড়া বন্ধ মুখথুবড়ে না পড়ে। সমস্যা হচ্ছে বাইরেও। মহড়া বাতিলের ব্যাপারটা যে দক্ষিণ কোরিয়া ভালভাবে নেবে না সেটা আঁচ করেই সিঙ্গাপুর বৈঠক শেষে মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও তড়িঘড়ি সিওল দৌড়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এর মধ্যেই মহড়া বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। জাপানও যে এই সিদ্ধান্তে হতাশ তা সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আসলে কিমের বিভীষিকাময় মানবাধিকার রেকর্ডও এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষে বড় অন্তরায়। সমালোচকরা বলছেন, যার বজ্রকঠিন শাসনে লোকজনের চুল কিভাবে ছাঁটা হবে তা পর্যন্ত ঠিক করা থাকে, যে দেশে নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহার করা বা বিদেশে ফোন করা নিষিদ্ধ, যার রাজত্বে সভাতে ঘুমিয়ে পড়লে বা বিদেশ গান শুনলে বিমান বিধ্বংশী কামান দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, নিজের কাকা আর সৎ ভাইকে খুনে যার মদদ আছে বলে সন্দেহ করা হয়, যার জমানায় গুলাগ কায়দার কারাগারে লক্ষাধিক রাজনৈতিক বন্দীর ওপর নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়, তাকে ট্রাম্প উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ‘অনারেবল ম্যান’ বললেও আমজনতা তা মানবে কেন? তাই কিমের যে কোনও প্রতিশ্রুতিরই সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। অনেকে আবার কিমের মতো ভয়াবহ মানবাধিকার রেকর্ড থাকা শাসকের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসাই আইনের চোখে ঠিক কি না সেই প্রশ্নও তুলেছেন। ২০১৬ সালের এক মার্কিন আইনের উল্লেখ করে তাঁদের যুক্তি, যেহেতু ওয়াশিংটনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় পিয়ংইয়ং রয়েছে, তাই মানবাধিকার উন্নয়ন না করলে আর পারমাণবিক অস্ত্র থেকে উত্তর কোরিয়া না সরলে আইনতই কিমের সঙ্গে কথা বলা যায় না। পরমাণু অস্ত্র ছাড়লে রাজত্বের নিরাপত্তার গ্যারান্টি চাইছে কিম প্রশাসন। এখানেও প্রশ্ন উঠেছে কেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত পিয়ংইয়ংকে এই ছাড় দেয়া হবে। সমালোচকরা বলছেন, আজ থেকে নয়, গত তিরিশ বছর ধরে বাবা বাছা করে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে আসছে ওয়াশিংটন। পাছে পিয়ংইয়্যাং বিগড়ে যায় সেই ভয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে টুঁ শব্দ করেনি হোয়াইট হাউস। কিন্তু ভবি তাতে ভোলেনি। পুরোটাই ভস্মে ঘি ঢালা হয়েছে। তাই পাঞ্জা কষার সময় এবার মানবাধিকারের কার্ডটা খেলা যেতেই পারে। অর্থাৎ কিমকে হোয়াইট হাউসে ডেকে জামাই আদর করলেও অস্বস্তিকর প্রশ্নের দল ট্রাম্পের পিছু সহজে ছাড়বে না। কোরিয়া উপদ্বীপের শান্তি আলোচনায় সাফল্য পেতে গেলে উটপাখির মতো মুখ গুঁজে এইসব প্রশ্নকে এড়িয়ে গেলে কাজের কাজই হবে না। উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে শুধু দেশে নয়, জাপানের মতো বন্ধু দেশেরও কাছেও প্রশ্নের সম্মুখীন ট্রাম্প প্রশাসন। বিংশ শতকের ৭০ আর ৮০-র দশকে বেশ কয়েকজন জাপানিকে অপহরণ করার অভিযোগ রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে। টোকিও এদের ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। দিল্লির আবার চিন্তার কারণ পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদের মৌতাত। বস্তুত পাক পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পের পিছনে উত্তর কোরিয়ার মদদের অভিযোগ বহুদিনই উঠেছে। পিয়ংইয়ংকে বহুবার দিল্লী সাহায্যের আশ্বাস দিলেও তাতে চিড়ে ভেজেনি। তাই এ বার কি হয় সেদিকে দিল্লীও সাগ্রহে তাকিয়ে। সিঙ্গাপুর নিবাসী অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর (যার সাড়া জাগানো এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস ‘এশিয়া রিবর্ন’) মতে, বৈঠক শেষের ঘোষণাপত্রে ট্রাম্পকে গো-হারা হারিয়েছেন কিম। তাঁর ঠাকুরদা ১৯৯২ সালে ওয়াশিংটনকে যা বলেছিলেন, তার থেকে এক ইঞ্চিও সরেননি তিনি। দেশে ফিরে জাঁক করে ট্রাম্প বলেছেন, বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেছেন। কি পেরেছেন তা সময় বলবে। কিন্তু সিঙ্গাপুরের পর কিম প্রশাসন যে মান্যতা পেয়ে গেল, সেই পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনাও কিন্তু পিয়ংইয়ংয়ের কম নয়। ভবিষ্যতের দরাদরিতে তা তো কাজে লাগবেই। লেখক : ভারতীয় সাংবাদিক
×