ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

মাদকবিরোধী অভিযানে যুব সমাজ সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২১ জুন ২০১৮

 মাদকবিরোধী অভিযানে যুব সমাজ সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সে নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে চলমান মাদকবিরোধী কার্যক্রমের ফলে মাদকদ্রব্যের চোরাচালান ও এর ব্যবহার বন্ধ করে যুবসমাজকে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত হতে রক্ষা করতে সক্ষম হব বলে আমি আশাবাদী। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, মাদক অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচার কার্যক্রম আলাদা কোন আদালতের মাধ্যমে পরিচালনার বিষয়টি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে। মাদকের গডফাদারদের সর্বোচ্চ শাস্তিতে নতুন আইন ॥ স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদ্যমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ অনুযায়ী মাদক অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- রয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনে কোন ব্যক্তির দখলে/কর্তৃত্বে/অধিকারে মাদকদ্রব্য পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ কম। এই মাদক ব্যবসায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডরা সহজেই পার পেয়ে যায়। তিনি জানান, মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। সংশোধিত আইনে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হবে। তাছাড়া এ আইনে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকেও আইনের আওতায় আনার জন্য মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, মাদকদ্রব্য ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে মাদক চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি জানান, যানবাহন ও মাদক স্পটগুলোতে তল্লাশি অভিযান চলছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হচ্ছে। মাদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে ভয়াবহ মাদকের প্রতি আকৃষ্ট না হয় সেজন্য মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সফল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছি। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে গেছে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকারের বর্তমান আমলেও উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের যে, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যা স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে জাতিসংঘের নির্ধারিত তিনটি মানদ- পূরণ করেছে। অপরদিকে বিশ্ব ব্যাংকের উন্নয়ন মানদ-ে ২০১৫ সালেই আমরা নি¤œ মধ্য আয়ের দেশে পদার্পণ করেছি। এ উত্তরণের ফলে আমাদের চাহিদা ও সম্মতির প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পৃক্ত হওয়ার পথ আরও সুগম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়ে বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয় হয়েছে তা এই অর্জনের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে ও বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে স্বীয় অবস্থান যথাযথভাবে তুলে ধরে আমরা আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে আমরা জাতির জনকের সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। তবে আমরা এখানেই থেমে থাকতে চাই না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন তখনই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে যখন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং ২০৪১ সালে মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ লক্ষ্যে দেশের আপামর জনসাধারণকে নিয়ে আমরা একযোগে কাজ করে যাব। ব্লু-ইকোনমি কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু ॥ সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি ২০০৯ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গতিশীল কূটনৈতিক কর্মকা-ের এক অন্যতম দৃশ্যমান অর্জন। তিনি বলেন, এ দু’টি রায়ের ফলে বঙ্গোপসাগরে সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল লাভ করে যা মূল ভূখ-ের আয়তনের প্রায় ৮১ ভাগের সমান। বাংলাদেশের অর্জিত এ সমুদ্র এলাকাকে ঘিরে আমরা সমুদ্র অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমিকে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে শনাক্ত করেছি। সমুদ্রবিষয়ক অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমির ব্যাপ্তি বিশাল। তিনি জানান, আমরা সমুদ্র বিজয়ের পর ব্লু-ইকোনমি কার্যক্রম জোরদার করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করেছি। ব্লু ইকোনমি কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য একটি আইন প্রণয়ণের কাজ চলছে। জ্বালানি, খনিজ ও মৎস্য সম্পদসহ ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
×