ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রম বাজারে অশনিসঙ্কেত

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২১ জুন ২০১৮

 শ্রম বাজারে অশনিসঙ্কেত

তেলের মূল্য হ্রাসের ধকলে পড়ে সৌদি আরব যে সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে, তাতে সেদেশে কর্মরত প্রবাসীদের মাসুল গুনতে হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, তাদের চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য খোয়াতে হচ্ছে। অনেককে স্বদেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। এই অবস্থার শিকার কয়েক লাখ বাংলাদেশী। এর থেকে উত্তরণের কোন পথ ও পন্থা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তেলের মূল্য বিশ্বব্যাপী কমে যাওয়ায় শীর্ষ তেল বিক্রেতা দেশ সৌদি আরব বিপাকে পড়েছে। অনেক কিছু সঙ্কুচিত যেমন করতে হচ্ছে, তেমনি বিলাসিতায় কাটছাঁটও আনতে হচ্ছে। তাই তারা বিদেশী তথা প্রবাসীদের ওপর খড়গ হেনেছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুধু আরোপ নয়, তা কার্যকরও করছে। এই ১২ ধরনের কাজে এখন হতে সৌদি নাগরিকরাই নিয়োজিত হচ্ছে। দেশটির বাজেটে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি রিয়েল ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে সৌদি নাগরিকদের আয় যেমন কমে গেছে, তেমনি বাড়ছে বেকারত্ব। তাই বিদেশীদের খেদিয়ে দিয়ে সেসব স্থানে নিজ নাগরিকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। আর এই কারণে কয়েক লাখ বাংলাদেশী যেমন, তেমনি অন্য দেশের নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। তবে যেসব কর্মী দেশটিতে কাজ করতে পারবেন, তাদের দ্বিগুণ অর্থ বা ফি দিয়ে চাকরির সনদ বা আকামা নিতে হচ্ছে। এই নিয়ম ক’মাস আগেই চালু করা হয়েছে। ফলে প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনের অর্ধেকের বেশি অর্থ এই খাতে প্রদান করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় হিমশিম খাচ্ছে তারা। এমনিতেই জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে। তারপর আয়ের ঘাটতিতে দিশেহারা প্রায়। অস্থিরতাও বেড়েছে। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের ব্যবসাও হয়ে আসছে সঙ্কুচিত। অনেকের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে যেসব বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে, তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। বরং তাদের কাজ হারাতে হচ্ছে। অনেকে ২০/২৫ বছর ধরে সেদেশে ব্যবসাবাণিজ্য করে আসছে। দোকানপাটও রয়েছে অনেকের। তারা এখন বেকার প্রায়। অনেকে ‘অডজব’ বা নিম্নমানের কাজ খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছে জীবন ধারণের জন্য। ১২ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে, দোকানপাট, তৈরি পোশাক, ক্রোকারিজ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, গাড়ির শো-রুম, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, চকলেট, মিষ্টান্ন, গৃহনির্মাণ সামগ্রী, চশমা, ঘড়ি, কার্পেট, পাপোশ ও ফার্নিচার। প্রবাসী বাংলাদেশীদের দোকানপাটগুলো বন্ধ হবার উপক্রম হওয়ায় এদের চাকরিও আর নেই। ছোট বড় কোন ব্যবসায় আর বাংলাদেশীরা থাকতে পারছে না। বাংলাদেশের শ্রম বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে অনেকে দেশে ফিরে আসছেন সৌদি থেকে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টিতে নির্বিকার। তারা বিষয়টি নিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে কোন দেন দরবারেও বসেননি। বরং মনে করছেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু বাস্তবে তা হবার নয়। লাখ লাখ লোক ফিরে এলেও দেশে তাদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা নেই। সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসায় রেমিটেন্স কমে যাবে। প্রবৃদ্ধির হারও কমবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও হ্রাস পাবে। মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নেবেÑ এটাই প্রত্যাশা।
×