ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সম্প্রসারণ করতে হবে রানওয়ে

বগুড়া বিমানবন্দর থেকে ঢাকা রুটে বিমান ও প্রাইভেট প্লেন উড়বে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২১ জুন ২০১৮

 বগুড়া বিমানবন্দর থেকে ঢাকা রুটে বিমান ও প্রাইভেট প্লেন উড়বে

সমুদ্র হক ॥ বগুড়া বিমান বন্দর থেকে ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমান ও প্রাইভেট উড়োজাহাজ উড়বে। তবে কবে তা চালু হবে তা ঠিক হয়নি। সূত্র জানায়, বিমান বন্দরের বিদ্যমান যে রানওয়ে তা আরও কিছুটা সম্প্রসারিত করতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে অবকাঠামোগুলোকে। বর্ধিত রানওয়ে নির্মাণের জন্য ভূমি হুকুম দখলের নির্দেশ এখনও আসেনি। চিঠি চালাচালি চলছে। আশা করা হয়েছে এ বছরইে বগুড়া বিমান বন্দর সিভিল এ্যাভিয়েশনের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) কাছে যাবে। বর্তমানে বগুড়া বিমানবন্দর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে চালু রয়েছে। ভৌগলিক ও বাণিজ্যিক অবস্থান বিবেচনায় এনে বগুড়া বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কথা ছিল আকাশ পথে যাত্রী পরিবহনে এই বিমান বন্দর হবে লাভজনক। ৯০’র দশকের মাঝামাঝি সদর উপজেলার এরুলিয়া মৌজায় আঞ্চলিক সড়কের ধারে ১শ’ ১০ একর ভূমির ওপর ৬শ’ ফুট চওড়া ও ৫ হাজার ফুট রানওয়ে নির্মিত হয়। এর সঙ্গে টার্মিনাল অফিস, আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। একনেক অনুমোদিত প্রকল্পটিতে ওই সময় ব্যয় হয় ২২ কোটি টাকা। নব্বইয়ের দশকের মাঝপথে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিমান বন্দরটি বিমান বাহিনীর কাছে ন্যস্ত করে। বিমান বাহিনী সেখানে রাডার স্টেশন স্থাপন করে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। গেল প্রায় দুই যুগ ধরে বগুড়া বিমানবন্দর এভাবেই চলছে। সূত্র জানায়, বর্তমান সময়ে আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রেখে বগুড়া বিমান বন্দরে যাত্রী পরিবহনের উড়োজাহাজ ওঠা নামায় গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সিভিল এ্যাভিয়েশনের বিমান চালু করায় সমর্থন দিয়ে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দিয়েছে। তারপর বগুড়া বিমান বন্দরকে বর্তমান সময়ের আধুনিক উড়োজাহাজ ওঠানামায় উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদ্যমান রানওয়েকে আরও সম্প্রসারিত করে অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানোর কার্যক্রম হতে নেয়া হয়। সেই লক্ষ্যেই কাজ এগিয়ে যায়। তবে তার গতি খুবই ধীর। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিমান বন্দরটি আকাশ পথে সাধারণের যোগাযোগের জন্য চালুর দাবি জোরালো হয়। বিমান বাহিনী বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করে আকাশপথে সাধারণের যোগাযোগের পক্ষে মত দেয়। গত বছর (২০১৭) ২৭ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকগণের (ডিসি) সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন বিমানবন্দর স্থাপনের পরামর্শ চাওয়া হয়। ওই সম্মেলনেও বগুড়া বিমান বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ ওঠানামার পরামর্শ দেয়া হয়। ডিসিগণ বগুড়া বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কথা বলেন। জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্র জানায়, বগুড়া বিমান বন্দরের বর্তমান ৫ হাজার ফুট রানওয়ের সঙ্গে আরও ৩ হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর সঙ্গে জ্বালানি রিজার্ভার, যাত্রীগণের সুবিধা, মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য অন্তত একশ’ একর ভূমি প্রয়োজন। বিদ্যমান রানওয়ের পশ্চিমে জমি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সূত্র জানায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া আছে। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও চিঠি আসেনি। চিঠি পাওয়ার পরই অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ শুরু হবে। বগুড়ার প্রবীণ ব্যক্তিগণ বলেন, আকাশপথে বগুড়ার যোগাযোগ যে লাভজনক তা ষাটের দশকেই প্রমাণিত। ওই সময়ে বগুড়ার বনানীতে হ্যালিপ্যাডে হেলিকপ্টার সার্ভিস ছিল। পঞ্চাশ বছরে বগুড়া আরও উন্নত হওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামার সার্বিক উন্নত অবস্থা বিরাজ করছে। ঈদের সময় সাধারণ যাত্রীদের বাস ট্রেনের টিকেটের জন্য যারপর নেই ভোগান্তি পোহাতে হয়। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য রয়েছে আধুনিক স্টেডিয়াম। কয়েকটি ফোরস্টার হোটেল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলো এখন বগুড়ায় হচ্ছে। দেশের প্রাচীন নগরী মহাস্থানগড়ে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। বগুড়া দিনে দিনে পর্যটকভূমিতে পরিণত। আন্তর্জাতিক অনেক অনুষ্ঠানের ভেন্যু করা হয় বগুড়া। দেশী-বিদেশী অনেকের আগমন ঘটে। একদার শিল্প নগরী বগুড়া পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। শিগগিরই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। এখনই বগুড়া ব্যবসা বাণিজ্যের নগরীতে পরিণত। বগুড়ার লোকজন ঢাকায় দ্রুত যোগাযোগে আকাশপথের ভাবনা নিয়ে আছে। তাদের কথা : বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগে অনেকটা সময় লাগে। এক জরিপে দেখা গেছে বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া বিমান বন্দর চালু হলে বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া রুটে দিনে কয়েকটি ফ্লাইট চলবে। উড়োজাহাজ চলাচল লাভজনক অবস্থায় যাবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
×