ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শামসুর রাহমানের অদ্ভুত আঁধার এক (১৯৮৫) মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিদীপ্ত জীবনমানসের শিল্পভাষ্য। রশীদ করিমের আমার যত গ্লানি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি ভিন্নধর্মী উপন্যাস। নারী আসক্ত নায়ক কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের কল্যাণে বদলে যায়, তারই বর্ণনা পাওয়া যায় এ-উপন্যাসে। রশীদ

বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ -চৌধুরী শাহজাহান

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২২ জুন ২০১৮

বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ -চৌধুরী শাহজাহান

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির আত্মপরিচয় চিহ্নিতকরণের ইতিহাস। এই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নির্মম ও নৃশংস অত্যাচারের কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সৃজনশীল সাহিত্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানী স্বৈরশাসনবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক জীবনের মতো শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণ ও বৈপ্লবিক চেতনা আমাদের সাহিত্যকে আলোকিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র ধারার সাহিত্য-মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য। সাহিত্যের প্রতিটি অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও প্রতিফলন দৃশ্যমান। বাঙালী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের জীবনে ও সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে নতুন করে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। সব উপন্যাস শিল্পোত্তীর্ণ না হলেও কোন কোন উপন্যাস অনুপম শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কিছু উপন্যাস লেখা হয়েছে কিন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর উপন্যাস নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে শহীদ আনোয়ার পাশার (১৯২৮-১৯৭১) রাইফেল রুটি আওরাত (১৯৭৩), শওকত ওসমানের (১৯১৭-১৯৯৮) জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১), নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩), দুই সৈনিক (১৯৭৩) এবং জলাঙ্গী (১৯৭৬), শওকত আলীর যাত্রা (১৯৭৬), রশীদ হায়দারের (১৯৪১) খাঁচায় (১৯৭৫), অন্ধ কথামালা (১৯৮১) ও নষ্ট জোছনায় এ কোন অরণ্য (১৯৮২), মাহমুদুল হকের (১৯৪০) জীবন আমার বোন (১৯৭৬), সেলিনা হোসেনের (১৯৪৭) হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৭৬) ও যুদ্ধ (২০০৫), সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনতরু, রাবেয়া খাতুনের ফেরারী সূর্য (১৯৭৪), আমজাদ হোসেনের (১৯৪২) অবেলায় অসময় (১৯৭৫), মির্জা আবদুর হাইয়ের ফিরে চলা (১৯৮১), রশীদ করিমের আমার যত গ্লানি (১৯৭৩), মাহবুব তালুকদারের অবতার (১৯৭৩), ঝর্না দাশ পুরকায়স্থের বন্দি দিন বন্দি রাত্রি (১৯৭৬), আহমদ ছফার (১৯৪৩-) ওঙ্কার (১৯৭৫) ও আলাতচক্র (১৯৯০), হুমায়ূন আহমেদের (১৯৪৮-) শ্যামল ছায়া (১৯৭৩), নির্বাসন (১৯৮৩), সৌরভ (১৯৮৪), ১৯৭১ (১৯৮৬), আগুনের পরশমনি (১৯৮৮), সূর্য্যের দিন (১৯৮৬), অনিল বাগচীর একদিন (১৯৯২) এবং জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প (২০০৬), সৈয়দ শামসুুল হকের নীল দংশন (১৯৮১), নিষিদ্ধ লোবান (১৯৮১), দ্বিতীয় দিনের কাহিনী (১৯৮৪), বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ (১৯৮৯-৯০) এবং এক যুবকের ছায়াপাত (১৯৮৭), ত্রাহি (১৯৮৮), হারূণ হাবীবের প্রিয়যোদ্ধা, প্রিয়তম (১৯৮২), হরিপদ দত্তের অক্ষর (প্রথম খন্ড ১৯৮৯, দ্বিতয়ি খন্ড ১৯৯১), আবু জাফর শামসুদ্দীনের দেয়াল (১৯৮৬), ইমদাদুল হক মিলনের মহাযুদ্ধ, ঘেরাও, নিরাপত্তা হই, বালকের অভিযান, কালো ঘোড়া, দ্বিতীয় পর্বের শুরু এবং রাজাকারতন্ত্র, মঈনুল আহসান সাবেরের পাথর সময় (১৯৮৯), সতের বছর পর (১৯৯১), কবেজ লেঠেল, শহীদুল জহীরের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা (১৯৮৮), আনিসুল হকের মা (২০০২), শাহীন আখতারের তালাশ (২০০৫), আবদুর রউফের মুক্তস্নান (২০০৭), হরিপদ দত্তের ঈশাণে অগ্নিদাহ (১৯৮৬) ও অন্ধকূপে জন্মোৎসব (১৯৮৭), রাবেয়া খাতুনের মেঘের পরে মেঘ, হানিফের ঘোড়া, ফেরারী সূর্য ও ঘাতক রাত্রি, আল মাহমুদের উপমহাদেশ, মঞ্জু সরকারের তমস (১৯৮৪) ও প্রতিমা উপাখ্যান, মহীবুল আজিজের বাড়ব (২০১৪) ও যোদ্ধাজোড় (২০১৪) ইত্যাদি অন্যতম। শহীদ আনোয়ার পাশার (১৯২৮-১৯৭১) রাইফেল রুটি আওরাত (১৯৭৩) একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সুদীপ্ত শাহীন লেখক আনোয়ার পাশারই প্রতিচিত্র। ২৫ মার্চের সেই ভয়াল কালরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। শওকত ওসমান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে লিখেছেন চারটি উপন্যাস। জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১), নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩), দুই সৈনিক (১৯৭৩) এবং জলাঙ্গী (১৯৭৬)। জাহান্নাম হইতে বিদায় উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের মাতৃভূমি থেকে পলায়নপর মানসিকতা রূপায়িত। জাহান্নামের প্রতীকে শত্রুকবলিত তিনি বাংলাদেশকে দেখেছেন। এই উপন্যাসে শিক্ষক গাজী রহমানের মানসলোকই পুরো উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে। শওকত ওসমানের কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি মানুষের অসহায়তা ও প্রতিরোধের চিত্র আঁকতে পেরেছেন। হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো- ‘মেশিন গানের গুলি ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটছে। কোলাহল, আর্তনাদ।...সঙ্গিনের আগায় গাঁথা শিশু চিৎকাররত, যখন অগ্নিবোমা তাকে নিমেষে কাবাব বানিয়ে দিলে। জল্লাদ অট্টহাসি পৈশাচিক উল্লাসের শিকার হওয়ার পর পাঞ্জাবী সেনানীর ধর্ষণেচ্ছু লালাসিক্ত ঠোঁটে ফিরে গেল...প্রলয়ের প্রকম্পন মর্টারের আওয়াজে রণতরীর শেল বর্ষণে, কামানের হুঙ্কারে...অসহায় দীর্ঘশ্বাসের গতিক্ষুব্ধ বাতাস যেখানে নিরর্থক।’ জীবনবোধের প্রশ্নে সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনতরু তুলনামূলকভাবে সফল সৃজনশীল উপন্যাস। এ-উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শ্যামল মধ্যবিত্তের মানসিকতা থেকে বের হয়ে পিতা-মাতার অজান্তেই মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং যুদ্ধ করে জীবন উৎসর্গ করে। মুক্তিযুদ্ধের মর্মস্পর্শী জীবনচেতনার সফল রূপায়ণ আমরা প্রত্যক্ষ করি জীবনতরু উপন্যাসে। ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থের বন্দি দিন বন্দি রাত্রি (১৯৭৬) উপন্যাসের জীবনচেতনা ও বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের মৌল আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত। হাহাকার ও প্রার্থনার একটি চমৎকার বর্ণনা ফুটে উঠেছে এ-উপন্যাসে। যেমন-‘নতুন স্বাধীনতা পাওয়া বাংলায় ফুলের মতো ফুটে ওঠা উন্মুখ কলিগুলো পাকিস্তানী পশুসৈন্যদের ধর্ষণে যে অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের বোঝা বহন করছে, ওদের অন্ধকার জীবনে যেন বিধাতা তুমি সূর্য হয়ে দেখা দাও। যাঁদের সিঁথি মৌর সিঁদুর মুছে গেছে, যাঁরা হারিয়েছে সন্তান সেই বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে তুমি আলোর সমুদ্র ঢেলে দাও।’ পৃষ্ঠা.১১২। দুই সৈনিক ও নেকড়ে অরণ্য মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার সন্নিবেশ মাত্র। দুই সৈনিক উপন্যাসে মখদুম মৃধা পাক হানাদার বাহিনীর অনুগত থাকা সত্ত্বেও তার দুই কন্যা সাহেলী ও চামেলীকে পাক সেনাদের লালসার শিকার হয়েছে এবং মৃধা অবশেষে আত্মহত্যা করে। জলাঙ্গীতে মুক্তিযোদ্ধার ভীরুতা এবং কাপুরুষতার চিত্র পাওয়া যায়। বাঁকাজোল গ্রামের প্রতীকে বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সময়ের জীবন বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। শামসুর রাহমানের অদ্ভুত আঁধার এক (১৯৮৫) মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিদীপ্ত জীবনমানসের শিল্পভাষ্য। রশীদ করিমের আমার যত গ্লানি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি ভিন্নধর্মী উপন্যাস। নারী আসক্ত নায়ক কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের কল্যাণে বদলে যায়, তারই বর্ণনা পাওয়া যায় এ-উপন্যাসে। রশীদ হায়দারের খাঁচা উপন্যাসে অবরুদ্ধ ঢাকার শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের বর্ণনা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। তাঁর অন্ধ কথামালা মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনীর অভিযানের অভিজ্ঞতায় রচিত হয়। এ-প্রসঙ্গে মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ-উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একজন তরুণের উদাসীনতা ও নারী প্রীতি তার মোহ ভেঙে কিভাবে তার মধ্যে আত্মোপলব্ধি ঘটে, তারই বর্ণনা পাওয়া যায়। শওকত আলীর যাত্রা ২৫ মার্চ পরবর্তী কয়েকদিনের ঘটনা এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে শঙ্কিত শহরের মানুষ গ্রামের দিকে ধাবমান জন¯্রােতের কাহিনী সার্থকতার সঙ্গে রুপায়িত হয়েছে এ-উপন্যাসে। অধ্যাপক রায়হান তার স্ত্রী বিনু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান, ছাত্রী লীলাসহ আরও কয়েকটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে মুদ্ধকালীন সময়ের নানা সঙ্কট চিত্রিত হয়েছে। রায়হানের মধ্যে আত্মসুখ সন্ধান এবং গ্লানিবোধ থাকলেও হাসানের চরিত্র আশাবাদী। যুদ্ধজয়ের সুতীব্র আকাক্সক্ষা তার উচ্চারণে পাওয়া যায়- ‘এখন আমাদের জীবনের আরেক নাম হয়ে উঠেছে স্বাধীনতা।’ রশীদ হায়দারের খাঁচায় স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ নগর ঢাকার নগর জীবনের আলেখ্য ফুটে উঠেছে। শহরে অবরুদ্ধ জাফরের মানসিক চিত্র ধরা পড়ে এভাবে- ‘সমস্ত অনুভূতি নিষ্ক্রিয় হয়ে রাস্তার মতো হয়ে গেছে, যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, খাঁচাটা আরও সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, খাঁচার চারপাশে উদ্যত মারণাস্ত্র।’ এ-উপন্যাসে অধিকাংশ চরিত্রই যুদ্ধকালীন সময়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। অন্ধ কথামালা উপন্যাসের নায়ক বেলাল হোসেন একজন শিক্ষিত গ্রামীণ যুবক। তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর চলাচলের গতিকে সীমিত ও প্রতিরোধ করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা ছিল একটি ব্রিজ ধ্বংস করবে তারা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোকসেদ কর্তৃক শত্রুপক্ষের কাছে ধৃত হয় বেলাল হোসেন। এই বন্দীর অনিশ্চিত জীবন ও মৃত্যুভাবনা এ-উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে। সময়ের দিক থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার এই কাহিনী। কিন্তু ঔপন্যাসিক বেলাল চরিত্র অঙ্কনের মধ্য দিয়ে একটা জনপথ, তার সমাজ, ব্যক্তির আশা-অকাক্সক্ষা ও সঙ্কটের যে প্রতিচিত্র তুলে ধরেছেন, তা অতুলনীয়। হারুণ হাবীবের প্রিয়যোদ্ধা, প্রিয়তম (১৯৮২) উপন্যাসের বিষয় ভাবনার অভিনবত্বে চমৎকার। এ উপন্যাসে বাংলাদেশ এবং যুগোশ্লাভিয়ার মুক্তিসংগ্রামে অভিন্ন বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বিজয়ের উল্লাস আর ত্যাগের মহিমা যেমন ছড়িয়ে আছে এ-উপন্যাসে, তেমনি আছে হাসান-ইয়াসমিনকার রোমান্টিক প্রেমের প্রেমের প্রতীকে শাশ্বত বিশ্বজনীনতা।’ (বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলাদেশের উপন্যাস, বাংলাদেশের সাহিত্য, ১৯৯১, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা-৪০)। এই উপন্যাসে ইতিহাস চেতনা এসেছে চমৎকারভাবে যার আবেদন দূরসঞ্চারী। দৃষ্টান্ত : ‘একাত্তরের মৃত অথবা জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামী আবুল হাসানরাই বাংলাদেশ । এ সত্যের মৃত্যু মানেই- তো বাঙালীর উতিহাস থেকে একাত্তর সালটা নেই। নেই পল্টন ময়দান, ঘেরাও আন্দোলন, নেই রেসকোর্স উদ্যানের স্বাধীনতা পাগল জনতা, নেই পঁচিশে মার্চের কাল রাত। নেই তেইশ বছরের পাকিস্তানী দুঃশাসন-বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, নেই সাভারের জাতীয় শহীদ মিনার, মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, বায়ান্ন থেকে সত্তরের যে ইতিহাস, সেই ইতিহাসই বাংলাদেশ।’ [ হারুণ হাবীব/ প্রিয়যোদ্ধা, প্রিয়তম/১৯৮২/ঢাকা, পৃ.৫৭] রিজিয়া রহমান একটি ফুলের জন্য (১৯৮৬) উপন্যাসে মুক্তিযোদ্ধার পরাজয়ক্লিষ্ট ও বিপন্ন মানুষের মুখচ্ছবি অঙ্কন করেছেন। ফরহাদ, আলুফ, আমজাদ, মুনির প্রমুখের বিভিন্ন প্রশ্ন ও আর্তনাদে অভিব্যঞ্জিত হয়েছে যুদ্ধোত্তর সময় ও সমাজের বিচিত্র অসঙ্গতির রূপ ও স্বরূপ। একাত্তর সালে ‘সারাদেশের হয়ে’ যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন স্বাধীনতা-উত্তর কোন সরকারই যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। পঁচাত্তরের অপ্রত্যাশিত পট-পরিবর্তনের পর একাত্তরের পরাজিত শক্তির পুনরুত্থানে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মূল্যবোধ ও আদর্শই যেন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পরিণত হয় হাস্য ও কৌতুকের উপকরণে। রাষ্ট্র ও সমাজের দৃষ্টিতে তাদের আদর্শবাদিতা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। রিজিয়া রহমানের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মজীবন রূপায়ণের মধ্য দিয়ে সমাজবাস্তবতার ঐ মর্মসত্য উন্মোচন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিপন্ন অস্তিত্ব, বিপন্ন-সম্ভ্রম বাঙালী নারীদের সামনে দাঁড়িয়ে ফরহাদ, আলফু, আমজাদরা প্রতিজ্ঞা করেছিলো : ‘আমরা দরকার হলে সারা জীবন যুদ্ধ করব। দেখেছিস কি প্রচ- ভরসা নিয়ে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এ বিশ্বাস এ ভালবাসার দাম আমাদের দিতে হবে।’ (রিজিয়া রহমান, একটি ফুলের জন্য, ১৯৮৬, ঢাকা, মুক্তধারা, মুক্তধারা, পৃ.৩১)। সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড মুক্তিযুদ্ধের গ্রামীণ জীবনের পটভূমি নিয়ে রচিত। দেশের জন্য একজন মায়ের অসামান্য ত্যাগের মহিমার শিল্পভাষ্য এ-উপন্যাস। বুড়ির মাতৃ ইমেজ হলদি গাঁয়ের সীমাবদ্ধ পরিসর থেকে সমগ্র দেশে বিস্তৃত করে দেয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। একটি দৃষ্টান্ত- ‘নি:সীম বুকের প্রান্তরে হু হু বাতাস বয়ে যায়। বুড়ি হাজার চেষ্টা করেও কাঁদতে পারে না। ছুটে বেরুতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ে। আরো দুটো প্রাণ ওর হাতের মুঠোয়। ও ইচ্ছে করলেই এখন সে প্রাণ দুটো উপেক্ষা করতে পারে না। বুড়ির সে অধিকার নেই। ওরা এখন হাজার হাজার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওরা হলদি গাঁর স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে লড়ছে। ওরা আচমকা ফেটে যাওয়া শিমুলের উজ্জ্বল ধবধবে তুলো। বুড়ি এখন ইচ্ছে করলেই শুধু রইসের মা হতে পারে না। বুড়ি এখন শুধুমাত্র রইসের একার মা নয়।’ (সেলিনা হোসেন, হাঙর নদী গ্রেনেড, দ্বি-সং, ১৯৮৪, ঢাকা মুক্তধারা, পৃ.১৫৯)। গ্রামীণ জীবনকাঠামোতে চিত্রিত চরিত্রসমূহের বাস্তবানুগ ক্রিয়াশীলতা এবং বুড়ির আত্মোজীবন-এ উপন্যাসের জীবনদর্শনকে শিল্পমহিমা দান করেছে। ‘উপন্যাসের নায়িকা বুড়ি মুক্তিযুদ্ধে উৎসর্গ করেছে প্রাণ প্রতিম সন্তানকে এবং এভাবেই সে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে পৌঁছে গেছে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের রক্তিম ¯্রােতে।’ [বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলাদেশের সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৩৮] মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন উপন্যাসে নাগরিক মধ্যবিত্তের পলায়নপর মানসিকতা খোকা চরিত্রের মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে। ২৫ মার্চের সেই ভয়াল রক্তাক্ত সময়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের পরিবর্তে রতি তাড়নাই খোকার চরিত্রে মুখ্য হয়ে ওঠে। ‘পলায়ন ছাড়া কোন ভূমিকা নেই’ খোকার এই অনুভব একটি শরীরী চিত্রকল্পে রূপ নেয়। তবে সময়ের পরিবর্তনে খোকার চেতনালোকও এক সময় আলোড়িত হয়। খোকার মনে হয়, ‘ঢাকার রাস্তায় মারমুখী জনতা থৈ থৈ করে’ এবং ‘কী দ্রুত বদলে যাচ্ছে মানুষের মুখের আদল, কী দ্রুত বদলে যাচ্ছে যাবতীয় দৃশ্যপট, দ্রুত, দ্রুত এবং ধাবমান, গ্লেসিয়ারের মতো ধাবমান, দুর্দম নৃত্যের মতো, চলমান গ্লেসিয়ার। মানুন! মানুষ! আর মানুষ। আকাশে আকাশে ধ্রুবতারায় কারা বিদ্রোহে পথ মাড়ায়...গা-ছমছম করতে থাকে খোকার... শস্যক্ষেত, উইঢিবি, বাঁশঝাড়, সাঁকো, শহর-বন্দর গণিকালয় সবকিছু অপ্রতিরোধ্য জলরাশি-বিমর্দিত তোড়ের মুখে অকাতরে ভেসে চলছে। এ কেমন নূহের প্লাবন ভিতরে ভিতরে টাল খায়, তার মাথা দপ দপ করে।’ (মাহমুদুল হক,জীবন আমার বোন, তৃন্ডমু. ১৯৯১, ঢাকা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, পৃষ্ঠা-৯)। হুমায়ূন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আটটি উপন্যাস রচনা করেন। এগুলো হলো- শ্যামল ছায়া (১৯৭৩), নির্বাসন (১৯৮৩), সৌরভ (১৯৮৪), ১৯৭১ (১৯৮৬), আগুণের পরশমনি (১৯৮৮), সূর্য্যের দিন (১৯৮৬), অনিল বাগচীর একদিন (১৯৯২) এবং জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প (২০০৬)। এই আটটি উপন্যাসে ঔপন্যাসিক বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে দৃষ্টিতে ধরার চেষ্টা করেছেন। আগুনের পরশমনি ও ১৯৭১ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতাকে তুলে ধরতে হুমায়ূন আহমেদ যে সাফল্য দেখিয়েছেন জ্যোৎস্না ও জননী উপন্যাসে তা অনুপস্থিত। শ্যামল ছায়া উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন এক বাস্তবতা উপস্থাপন করেন। ইমদাদুল হক মিলনের কালো ঘোড়া উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ঘটনা নিয়ে রচিত। ঘেরাও উপন্যাসটিতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে যাওয়া মানুষের করুণ আর্তনাদ ধ্বনিত হয়েছে। মহাযুদ্ধ উপন্যাসে মিলন স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বাস্তবচিত্র চিত্রিত করেছেন। আমজাদ হোসেনের অবেলায় অসময় উপন্যাসটি নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীপথে যুদ্ধকালীন সময়ের মানুষের জীবনচিত্র উঠে এসেছে। মঞ্জু সরকারের প্রতিমা উপাখ্যান উপন্যাসের কাহিনী স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির বাস্তব শিল্পরুপ বলা যায়। সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলো অনন্য স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী। লেখকের মনোবিশ্লেষণপ্রণবতা তাঁর মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলোকে চেতনার মৌল স্বভাবে পরিণত করেছে। অন্তর্গত (১৯৮৪) উপন্যাসের কাব্যময় বিন্যাসের মধ্যেও বিধৃত হয়েছে আমাদের যুদ্ধোত্তর সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর অবক্ষয়ের পটভূমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়ার সীমাহীন মর্মযাতনা। উপন্যাসের ‘নিবেদন’ অংশে ঔপন্যাসিকের জীবনজিজ্ঞাসার স্বরূপ সুস্পষ্ট : ‘স্মরণ হবে যে, উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল। এবং স্ম্রণ হবে যে, সেই একদা তিরিশ লক্ষ মানুষ বুলেটে প্রাণ দিয়েছিল, দশ লাখ নারী ধর্ষিতা হয়েছিল, এক কোটি মানুষ দেশত্যাগ করেছিল ও আরও এক কোটি মানুষ দেশের ভেতরেই ক্রমাগত ঠিকানা পরিবর্তন করে চলেছিল। হয়ত স¥রণ হবে, আমাদের ভেতরে সেদিন এমন একটি চেতনা এসেছিল, ইতিহাসের করতল ছিল যার উৎস। কোথায় সেই করতল? কোথায় সেই চেতনা? কোথায় সেই ক্রন্দন? কোথায় সেই ক্রোধ? কোথায় এখন আমরা? এবং কোথায় এখন এই দেশ?’ [সৈয়দ শামসুল হক/ অন্তর্গত/১৯৮৪/ ঢাকা/ সব্যসাচী, নিবেদন দ্র.]। নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাসে রতি (খরনরফড়) চেতনার আধিক্য থাকলেও বিলকিসের পরিণাম লেখক ইতিবাচক হিসেবে চিত্রিত করেছেন। নীল দংশনে কাজী নজরুল ইসলামের চরিত্রভাবনায় সৈয়দ হক বিদ্রোহী কবির অবয়বকে জাতীয় চৈতন্যেও সমগ্রতায় স্থাপন করে নিরীক্ষা চালিয়েছেন এবং অনেকটা সফলও হয়েছেন। ‘তাঁর দ্বিতীয় দিনের কাহিনী বিষয় ও আঙ্গিকে এ-ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম। শিক্ষক তাহেরের স্মৃতিচারণা ও আত্মোপলব্ধি মুক্তিযুদ্ধের পরিসরকে সুদূরপ্রসারী চেতনায় উদ্ভাসিত করে। বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মহাকাব্যিক আয়তনে রূপায়িত হয়েছে। যুদ্ধের অনুষঙ্গবাহী এক যুবকের ছায়াপাত উপন্যাসের নামও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। নিষিদ্ধ লোবান থেকে বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ পর্যন্ত উপন্যাসসমূহ বিশ্লেষণ করলে কেবল সৈয়দ হকের শিল্পীসত্ত্বা নয়, বাঙালী জাতিসত্তার ক্রম রূপান্তরের ইতিহাসও অনেকটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাত্রির অন্ধকার থেকে তিনি আমাদের আকর্ষণ করেন রক্তকরোজ্জ্বল, প্রাগ্রসর চেতনার দিকে, যেখানে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত অভিন্ন বিন্দুতে মিলিত।’ (মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের সাহিত্য/ রফিকউল্লাহ খান/ কালি ও কলম, ঢাকা)। তাহমিনা আনামের A Golden Age (John Murry, London ২০০৭) মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইংরেজী ভাষায় লিখিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক উপন্যাস। তাহমিনা তার মা শাহীন আনামের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবহুল সময়ের কথা শুনেছেন। আর সেই শোনা গল্প থেকেই তিনি তার উপন্যাসের কাহিনী সাজিয়েছেন। কাহিনী গঠন, চরিত্রবিন্যাস ও ঘটনার ঘনঘটাতে তাহমিনা দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলেও মুক্তিযুদ্ধের সমকালীন বাস্তবতা তার বর্ণনাভঙ্গির জন্য নন্দিত হয়েছে। আহমদ ছফা অলাতচক্র উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন একটি বিষয়কে উপন্যাসের পটভূমি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মঈনুুল আহসান সাবেরের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের বাংলােেদশের রাজনৈতিক সঙ্কট, চেতনার অবক্ষয়, পরাজিত শক্তির পুনর্বাসন, ষড়যন্ত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করা ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলো তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তু। পরাজয় (১৯৯০), কেউ মানে না (১৯৯০), সতের বছর পর (১৯৯১) উপন্যাগুলোতে একাত্তরের পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান, মুক্তিযোদ্ধাদের অসহায়, করুণ, পর্যুদস্ত অবস্থাকে তিনি তুলে ধরেছেন শিল্পিতভাবে। শহীদুল জহিরের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকারদের পৈশাচিকতার চিত্র ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার শৈল্পিক রূপদান করেছেন। মহীবুল আজিজ মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে দুটি উপন্যাস লিখেছেন। একটি হচ্ছে বাড়ব (২০১৪) এবং অন্যটি যোদ্ধাজোড় (২০১৪)। বাড়ব উপন্যাসের বিষয়বস্তু হলো ১৯৭১ সালের জণমানুষের আনন্দ-বেদনার কর্মকান্ডের বর্ণনা। যোদ্ধাজোড় উপন্যাসে একাত্তরের যুদ্ধ আর জীবনের কাহিনীতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কিশোর উপন্যাসের ভূমিকা অসামান্য। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাসগুলো হচ্ছে- শওকত ওসমানের পঞ্চসঙ্গী, পান্না কায়সারের হৃদয়ে বাংলাদেশ, রাবেয়া খাতুনের একাত্তরের নিশান, শাহরিয়ার কবিরের ভয়ঙ্করের মুখোমুখি, মঞ্জু সরকারের যুদ্ধে যাবার সময়, মমতাজউদ্দিন আহমদের সজল তোমার ঠিকানা, ফরিদুর রহমানের দিন বদলের ডাক। এই উপন্যাসগুলো স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে রচিত উল্লেখযোগ্য কিশোর উপন্যাস যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পায়। খুঁজে পায় স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও স্বদেশপ্রেম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কিশোর উপযোগী উপন্যাস সৃষ্টি, বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন।
×