ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শংকর লাল দাশ

যুদ্ধ থেমে গেল ফুটবলে

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২২ জুন ২০১৮

যুদ্ধ থেমে গেল ফুটবলে

ফুটবল কী শুধুই খেলা। নাকি স্রেফ বিনোদন। তবে ফুটবলে যুদ্ধ কেন থেমে গেল? এর অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস কোথায়? কেন ফুটবল নিয়ে দেশে দেশে এত উন্মাদনা? প্রকৃত অর্থে ফুটবল শুধু খেলা নয়, শান্তিরও উৎসব। তাই তো দিন কয়েকের জন্য হলেও ফ্রান্সের সীমান্তে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ফুটবলের কারণে ফিরে এসেছিল শান্তির সুবাতাস। একইভাবে আইভরি কোস্টেও গৃহযুদ্ধ ছেড়ে মাঠে নেমে এসেছিল বিবদমান দুটি পক্ষ। আজ থেকে শত বছর আগের ঘটনা। ১৯১৪ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন তুঙ্গে। কবে যুদ্ধ থামবে, তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছিল না। ফ্রান্সের সীমান্ত ফ্ল্যান্ডার্সের বালি ও শালগম ক্ষেতের মাঝে নোম্যান্সল্যান্ডের দুই পাশে ইংল্যান্ড ও জার্মানির সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের সকালে সবাইকে চমকে দিয়ে আকস্মিক এক ইংরেজ সেনা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাউনি থেকে বেরিয়ে এলো। দূর থেকে সকলেই দেখল তার হাতে একটি ফুটবল। এরপরেই তার চেয়ে আরও দ্রুত আকস্মিকতায় পাল্টে গেল গোটা আবহ। একের পর এক ইংরেজ সেনা ছাউনি থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। একইভাবে বেরিয়ে এলো জার্মানির সেনারাও। এরপরের ঘটনা কেবলই ইতিহাস। অস্ত্রের স্তূপ সেনা ছাউনিতে রেখে বারুদের গন্ধে এলো ফুলের সুবাস। বিবদমান দুটি পক্ষ দুটি দল গড়ে মগ্ন হলো প্রাণখোলা ফুটবলে। ইংল্যান্ড দলের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিল রয়্যাল ওয়ারউইকশায়ার রেজিমেন্ট। ইংরেজরা সেদিন জিতেছিল ১-০ গোলে। হারজিত বড় কথা নয়। জার্মানি ও ইংরেজ সেনারা সেদিন সারারাত খেলার আনন্দে হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠেছিল। একই নোম্যান্সল্যান্ডে পরবর্তীতে আরও অনেকদিন ফুটবল খেলা হয়েছে। আর প্রতিটি খেলার দিন উভয়পক্ষ যুদ্ধ বন্ধ করে ছড়িয়ে দিয়েছিল শান্তির বার্তা। ফুটবল খেলা আরেকটি যুদ্ধ বন্ধ করেছিল আইভরি কোস্টে। সেটি ছিল গৃহযুদ্ধ। ২০০৫ সাল। আইভরি কোস্ট আসন্ন বিশ্বকাপে সবে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দিদিয়ের দ্রোগবা দলটির ক্যাপ্টেন। বহু কাক্সিক্ষত বিশ্বকাপে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে দেশ। কিন্তু সে আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার সুযোগ নেই দেশবাসীর। তার কারণ পাঁচ বছর ধরে আইভরি কোস্টে চলছে গৃহযুদ্ধ। দেশবাসীকে কি করে ফুটবল আনন্দে মাতিয়ে রাখা যায়, সে চিন্তা ফুটবল টিমের প্রতিটি সদস্যের। একদিন দিদিয়ের দ্রোগবা ও তার সতীর্থরা ড্রেসিংরুমে মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেশবাসীর উদ্দেশে আর্তি জানালেন, যুদ্ধ ছেড়ে ফিরে আসুন শান্তির পথে। যা দেখানো হলো লাইভ টেলিভিশনে। আবেদনে কাজ হলো। সারা পড়ল দেশবাসীর মাঝে। এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হলো শান্তি প্রক্রিয়া। স্থিমিত হয়ে এলো গৃহযুদ্ধ। এরমধ্যেই আইভরি কোস্ট ফুটবল টিম আফ্রিকান নেশন্স কাপের যোগ্যতা অর্জনের জন্য গেল দেশটির বুয়াক অঞ্চলে। প্রতিযোগী মাদাগাস্কার। বুয়াক পুরোপুরি বিদ্রোহীদের দখলে। ততদিনে দিদিয়ের দ্রোগবা ও তার সতীর্থরা দেশটির জনপ্রিয়তার শিখরে চলে এসেছে। আর এ জনপ্রিয়তা ওই অঞ্চলের যুদ্ধ বন্ধের কাজে লাগালেন। দিদিয়ের দ্রোগবা ঘোষণা দিলেন, খেলার দিন তিনি মাঠে থাকবেন। এরপরই এলো সেই অনবদ্য দৃশ্য। যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলো। মাঠে দ্রোগবাকে ঘিরে দাঁড়ালেন দুইপক্ষের সেনানায়ক। অভাবনীয় অসাধ্য সাধনের পর দ্রোগবা আবেগঘন হয়ে বলেছিলেন, ‘সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল, আইভরি কোস্টের নবজন্ম হলো’। ফুটবল এভাবে দেশে-দেশে, যুগে-যুগে অবিস্মরণীয় অসংখ্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এর অন্তর্নিহিত শক্তি এতটাই প্রবল, যা অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে। এর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ অন্যতম। সূত্র : এই সময়
×