ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ ষোলোয় ক্রোয়েশিয়া

আর্জেন্টিনার ৩-০ গোলে শোচনীয় হার

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২২ জুন ২০১৮

আর্জেন্টিনার ৩-০ গোলে শোচনীয় হার

মিথুন আশরাফ ॥ লিওনেল মেসির মনের জ্বালা থেকেই গেল। চাপ আরও বাড়ল। অস্বস্তিও জুড়ে গেল দ্বিগুণ। শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে যে হেরেই গেল আর্জেন্টিনা। ৫২ মিনিটে রেবিক, ৮০ মিনিটে মডরিক ও অতিরিক্ত সময়ে রাকিটিকের গোলে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ৩-০ গোলে হারের পর বিদায়ের সুরই যেন বাজছে! বড় ব্যবধানে হেরে বিদায়ের পথেই যেন আর্জেন্টিনা! এখনও ‘শেষ ষোলো’তে খেলার আশা জিইয়ে আছে। তবে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জেতা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ খোলা থাকল না আর্জেন্টিনার। সঙ্গে গোলের সমীকরণের জালেও আটকা পড়তে পারে আর্জেন্টিনা। পথ অনেক কঠিন হয়ে গেল। আরেক দিকে ক্রোয়েশিয়া জিতে ‘শেষ ষোলো’তে খেলা নিশ্চিত করে নিল। টানা দুই ম্যাচ জিতল। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ‘শেষ ষোলো’তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ক্রোয়েশিয়া। আর আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ ড্র করার পর দ্বিতীয় ম্যাচ বড় ব্যবধানে হারল। নিঝনি নভগরদ স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দুই দলই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চালায়। দুই দলই সমানতালে গোল করার সুযোগও পায়। কিন্তু সুযোগগুলো যথাযথ কাজে লাগাতে পারেনি। ৩০ মিনিটে একবার ফাঁকা বার পেয়ে বল জালে জড়ান আর্জেন্টিনার পেরেজ। কিন্তু তার আগেই ডিবক্সের বামদিক থেকে পেরেজের কাছে বল এগিয়ে দেয়ার সময়ই এ্যাগুয়েরো ফাউল করে বসেন। ৪ মিনিট পরই আবার ক্রোয়েশিয়ার মানদুকিচ বারের ৫ গজ দূর থেকে সঠিকভাবে বলে মাথার ছোঁয়া লাগাতে পারেননি। গোল করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়। দুই দলই সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু জালে বল কোন দলই জড়াতে পারেনি। প্রথমার্ধ তাই গোলশূন্যতেই শেষ হয়। প্রথমার্ধে দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে যেন শক্তির লড়াইও জমল। ফাউল আর ফাউলে ভরা থাকল প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার আট মিনিটের মাথাতেই গোল খেয়ে বসল আর্জেন্টিনা। গোলরক্ষক কাবালেরোর ভুলে গোল হজম করতে হলো আর্জেন্টিনাকে। ডিবক্সের ভেতরে সতীর্থ মারকাডোর বাড়িয়ে দেয়া বল আবার ফিরিয়ে দিতে চান কাবালেরো। কিন্তু বলটি শূন্যে ডিবক্সের ভেতরে থাকা ক্রোয়েশিয়ার আন্টে রেবিকের সামনে পড়ে। রেবিক মাথার ছোঁয়াতেও গোল করতে পারতেন। কিন্তু সুন্দরভাবে বলটি পায়ের স্পর্শে কাবালেরোর মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ান। আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে। এরপর তো পাগল হয়ে যান আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা এবং কোচ। দ্রুতই এ্যাগুয়েরোর জায়গায় হিগুয়াইনকে নামান। সালভিয়োর স্থানে নামান পাভনকে। যে কোনভাবেই গোল চায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। উল্টো ৮০ মিনিটে আরেকটি গোল হজম করতে হল। রাকিটিক থেকে বল পেয়ে ডিবক্সের বাইরে থেকে জোড়ালো শটে দুর্দান্ত গোল করেন লুকা মডরিক। ক্রোয়েশিয়া ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। আর্জেন্টিনার হারের পেরেকও যেন সেখানেই মারা হয়ে যায়। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর আরেকটি গোল খায় আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ে (৯১ মিনিটে) ইভান রাকিটিক গোল করে ব্যবধান ৩-০ করেন। শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে হারে আর্জেন্টিনা। যেখানে জয় খুবই দরকার ছিল। সেখানে ড্র দূরে থাক, হারের কবলে পড়ল আর্জেন্টিনা। মেসির আর্জেন্টিনা এখন ‘ডি’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকায় তিন নম্বর স্থানে চলে গেছে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। এখন নাইজেরিয়ার বিপক্ষে যে ২৬ জুন ম্যাচটি রয়েছে, তাতে আর্জেন্টিনার জিততে হবে আগে। জেতার সঙ্গে গোল বাড়ানোর সমীকরণও যুক্ত হতে পারে। আজ নাইজেরিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের পরই তা বোঝা যাবে। ‘শেষ ষোলো’তে খেলতে হলে আর্জেন্টিনাকে কী করতে হবে, তা নাইজেরিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের পরই পরিষ্কার হবে। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা কী বিপদেই না পড়েছে এবার। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেই বিপদে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। বিপদ আরও বাড়ল এবার। স্নায়ুচাপ আরও বাড়ল। প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি মিসে আর্জেন্টিনাকে না জেতানোর জ্বালা ছিল মেসির। তার কাঁধে ছিল পাহাড়সম চাপও। সেই চাপ থেকে মুক্ত হতে পারলেন না মেসি। প্রথম ম্যাচে করা ভুলই এখনও পিছু ছাড়ছে না। মেসি ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা শুরু করার আগে গ্রুপ পর্ব থেকে তিনবার বাদ পড়েছে আর্জেন্টিনা। মেসি খেলার পর একবারও সেই কষ্টের স্মৃতির দেখা মিলেনি। ২০০৬ সালে প্রথমবার মেসি খেলেন। দল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। ২০১০ সালেও তাই। ২০১৪ সালে তো রানার্সআপই হয় আর্জেন্টিনা। ১৯৩৪ সালে সরাসরি নকআউট পর্বের খেলা হয়। কোন গ্রুপ পর্ব ছিল না। প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসি বিশ্বকাপ খেলা শুরু করার পর এমন কোন বাজে স্মৃতির মুখোমুখি হননি। এবার সেই বাজে স্মৃতিই যেন গায়ে ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। এ নিয়ে চারবার বিশ্বকাপ খেলতে নামা ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে এখন বিদায় নেয়ার দ্বারপ্রান্তেই যেন দাঁড়িয়ে গেছে মেসির আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার গ্রুপে ক্রোয়েশিয়া শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। দলটির মধ্যমাঠের ফুটবলাররা এতটাই শক্তিশালী, তাদের ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে গোল করাই যেন কষ্টসাধ্য! এমনই আলোচনা হচ্ছিল। প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে যে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া, তাতো মধ্যমাঠের শক্তির জন্যই সম্ভব হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার যে ফুটবলাররা এবার খেলছেন, তাদের ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তরুণ সেনানী যে তারা। কোভাচিচ, মডরিক, ব্রজভিক, রাকিটিকরাতো বিপজ্জনক। যদিও ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেই যে সেমিফাইনালে উঠে চমক জাগান, তা আর ২০০২ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ধরে রাখতে পারেননি। গ্রুপ পর্বের গন্ডিই পাড়ি দিতে পারেননি। এবার দলটির ফুটবলারদের গতি এবং মধ্যমাঠের ফুটবলারদের বোঝাপড়া নিয়ে সবারই খুব উচ্চসুর। কেন এত উচ্চবাচ্য তাতো আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচেও প্রমাণ হয়ে গেল। ক্রোয়েশিয়া এমন খেলাই দেখাল ১৬ বছর পর মেসি থাকতেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার শঙ্কায় পড়ে গেল আর্জেন্টিনাকে।
×