ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সত্তরে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৩ জুন ২০১৮

সত্তরে আওয়ামী লীগ

জনগণের সংগ্রামই ইতিহাস নির্মাণ করে। সেই ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। জনগণের চিন্তা, চেতনা, আকাক্সক্ষা এবং স্বপ্ন দিয়ে তৈরি যে রাজনৈতিক দল, তার ভাষা সর্বস্তরের জনগণেরই কণ্ঠের ভাষা। বাঙালী ভাগ্যবান, তারা তেমনই একটি রাজনৈতিক সংগঠনের উত্তরাধিকার এবং আলোকিত তেমনই জননেতার আলোকবর্তিকায়। যে আলোয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের নির্মাতা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার উনসত্তরতম বর্ষ পেরিয়ে আজ ৭০তম জন্মদিনে পা রেখেছে। গত শতাব্দীর মধ্যভাগে, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলীম লীগ নেতাদের উদ্যোগে আহূত কর্মী সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ। বস্তুত এটিই ছিল পাকিস্তানের সরকারী দল মুসলীগ লীগ বিরোধী প্রথম কার্যকর বিরোধী দল। অখন্ড ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকলেও, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এসব দলপূর্ব বাংলার গণমানুষের আশা-আকাঙক্ষার প্রতিনিধিত্বকারী গণপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। ১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো দিকপাল নেতাদের সঙ্গে মুসলীম লীগের দূরত্ব, তরুণ শেখ মুজিব এবং তার সহকর্মীদের দ্রোহ ও আত্মত্যাগ পরিস্থিতির ঐতিহাসিক নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। এই বাস্তবতা থেকেই উৎসারিত হয় আওয়ামী লীগের মতো একটি জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অপরিহার্যতা। ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সংগ্রামের মধ্যে জন্ম আওয়ামী লীগের। পরবর্তীকালে দলের নাম থেকে মুসলীম বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ভাষা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, মুসলীম লীগ বিরোধী ২১ দফা প্রণয়ন ও যুক্তফ্রন্ট গঠন, চুয়ান্নর নির্বাচনে বিজয় ও মুসলীম লীগের ভরাডুবি প্রভৃতি ঘটনার ভেতর দিয়ে পঞ্চাশের দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক প্রধান চালিকা শক্তি। ষাটের দশকে পাকিস্তানী জান্তা শাসক আইউব বিরোধী আন্দোলন, দুই অর্থনীতির তত্ত্ব প্রচার এবং ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবের উত্থাপিত ছয় দফা দাবি বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টতই নতুন পর্যায়ে এই ছয় দফা দাবি বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ম্যাগনাকার্টা। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দলটিকে এই অঞ্চলের একক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করে এবং শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু উপাধি পেয়ে পরিণত হন দলের অবিসংবাদিত নেতায়। অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণ (যা আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ), বাংলার মানুষের অকাতরে আত্মদান সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। পাকিস্তানী জান্তারা ২৫ মার্চ রাতে বাঙালীদের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার আহ্বানে বাঙালী জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র সংগ্রামে। ১০ এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় দেশ। দেশজুড়ে পতপত করে উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। বিশ্ব মানচিত্রে সগৌরবে স্থান করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। শুরু করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের দুরূহ কর্মযজ্ঞ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ক্ষত মুছে দেশকে উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল করেন। দুর্ভাগ্য বাঙালী জাতির, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৯৯৬ পর্যন্ত টানা একুশ বছর এই স্বৈরশাসন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র বৈশিষ্ট্যকেই পাল্টে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীর বিচার অব্যাহত রেখেছে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর দলটি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তারপরও চলে আন্দোলন সংগ্রাম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হয় দলটি। শেখ হাসিনা টানা ৩৭ বছর দলের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পিতৃ গৌরবকে সমাসীন করেছেন। আজ ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলটির ১১তলা সুউচ্চ ভবন উদ্বোধন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাকাল হতে বিভিন্ন স্থানে কার্যালয় ছিল। এবার স্থায়ী ভবন হলো। আওয়ামী লীগের সত্তরতম জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
×